মন্তব্য করুন
দেশের নদী দখলদারদের উচ্ছেদ ও নদীর প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করে তালিকা প্রনয়ণের দাবিতে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছেন রাকিব হাসান (২৪)। রাকিব হাসান কক্সবাজারের মহেশখালীর শাপলাপুরের ষাইটমারা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। "দুরত্ব ও সীমাবদ্ধতাকে পরাজিত কর" শিরোনামে গত ২০ এপ্রিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বাংলাবান্দা জিরোপয়েন্ট থেকে তিনি এ যাত্রা শুরু করেন। শেষ করবেন টেকনাফ জিরো পয়েন্টে গিয়ে। আগামী ১০ মে তিনি পর্যন নগরী কক্সবাজারে পৌঁছবেন। ১১ মে ভোর ৬ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে যাত্রা করবেন। ১২ মে অর্থাৎ ২৪ তম দিনে তিনি টেকনাফ গিয়ে যাত্রা বিরতি শেষ করবেন।
এই প্রতিবেদন লেখা অব্দি তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া সীমান্তবর্তী আজিজ নগরে অবস্থান করছেন। পায়ে হেটে এখন পর্যন্ত সে পথ অতিক্রম করেন ৮৪৫ কিলোমিটার। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত হাঁটেন তিনি। রাতে যেখানে হাঁটা বন্ধ হয়ে যেত, ওই এলাকায় পরিচিত কারও বাসায় পরিচিত না থাকলে হোটেলে, মসজিদে, পেট্রোল পাম্প এর রেস্ট হাউজে রাতযাপন করেন। দূরত্ব ভীতির কারনে কেউ সঙ্গী না হওয়ায় একাকী সে পদযাত্রা শুরু করে বলে জানায় তিনি। রাকিব আরও জানান, এটাই তার প্রথম দীর্ঘ একাকী পদযাত্রা। দুরত্ব ও দিনের হিসেব করে তিনি ২৪ দিনে তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন বলে আশা করেন। এবং তিনি একাই ১০০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাকিব জানান, তিনি একাকী পদযাত্রায় বিচলিত নন। বরং তিনি দেশের নদীর দখল ও নদীর বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে বিচলিত। তিনি আরও জানান,, নদী আমাদের দেশের রক্তনালীর মত। দেশে প্রবাহমান সমস্ত নদী এখন শুকিয়ে গেছে। আগামি দশকের মধ্যে অনেক নদী হয়তো মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে। যদি এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নদী রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে দেশের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। এতে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে। যা তাকে উদ্ধিগ্ন করেছে। তাই তিনি সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েই পদযাত্রার পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ঐক্যবদ্ধ হয়ে নদী রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানোর ও চেষ্টা করছেন তিনি।
পদযাত্রার সীমাবদ্ধতার প্রশ্নে রাকিব জানান, প্রথম কয়েকদিন হাটার পর পা ব্যথা ও ফুলে গেলেও এখন তা সুস্থ হয়ে গেছে। এবং তিনি মনোবলের উপর জোর দিচ্ছেন। এতে করে তিনি তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁচতে হলে মহাশয়, রক্ষা করুন জলাশয়। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ,আলোর হবে পরিবেশ। দখল দূষণ বন্ধ করি/নদীর মতন জীবন গড়ি। এ স্লোগানকে সামনে রেখে নদী রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান সচেনতন মহলের প্রতি।
বাংলাদেচ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, নদী, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে রাকিবের একক আন্দোলন ও প্রতিবাদ অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যে বার্তা দিচ্ছেন এতে নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবেন।তার এই কাজে সবার সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে নদী রক্ষায় দেশবাসীকে সচেতন করেছেন তিনি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদী,পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে তাঁর এ পদ যাত্রা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ২৪ বছরের এ যুবক একজন শিক্ষার্থী। তাঁর দেশপ্রেম, অদম্য সাহস ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন স্মরণে রাখবে।
মন্তব্য করুন
(পর্ব-২)
স্বপ্নের নেপাল। হিমালয়ের কন্যা সে। সাদা সুউচ্চ পর্বত একে তুষারের শুভ্রতা দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখে গভীর আর মৌন সৌন্দর্যে। আর তাই যারা পাহাড় ভালোবাসেন, উচ্চতাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে হিমালয় হলো স্বর্গ
এক একটা পাহাড় জয় করা যেনো পাহাড়প্রেমীদের কাছেও স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নপূরণ করতে বাংলাদেশের থেকে যাত্রা করেন মোহাম্মদ তানভীর আলম। ছুয়ে আসেন ইয়ালা পিকের শিখর। ল্যাংটাং রিজিয়নের ইয়ালা পাহাড়ের উচ্চতা ৫৫২০ মিটার বা প্রায় ১৯ হাজার ফুট। সেই গল্প ও নেপাল পৌছানোর পর তার দিনলিপি নিয়ে লিখেছেন আমাদের কাছে। তার গল্প আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো দুইটি ভিন্ন পর্বে। আজকে থাকছে অভিযানের শেষ পর্ব, থাপছে অধরা কে ছুঁতে পারার আনন্দের গল্প।
৫ম দিন-গন্তব্য: কায়ানজিন গোম্পা, উচ্চতা ৩'৮০০ মিটার
সকাল ৭:৩০ এ মুন্ডু থেকে রওনা হলাম কায়ানজিন গোম্পার উদ্দ্যেশ্যে। গোম্পা পর্যন্ত রাস্তা বেশী দীর্ঘ না, ২-২:৩০ ঘন্টা লাগবে পৌঁছাতে। মুন্ডুতে যে লজে ছিলাম সেখানে বুদ্ধা ইন নামে একটা লজের কার্ড দিয়েছে যদিও আমার থাকার ইচ্ছে শেরপা লজে। কারণ বেশিরভাগ বাংলাদেশী ঐ লজে থাকে। গোম্পা যাওয়ার আগে আমার ২ জন প্রোফেশনাল গাইডের সাথে কথা হয়। আমি একা ইয়ালা পিক সামিটে যাব শুনে আমার সাথে পোর্টার হিসেবে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করে এবং পথেই আমার সাথে ডিল করতে চায়, আমি পরে যোগাযোগ করতে বলে এগোতে থাকি।
১০টা নাগাদ গোম্পাতে চলে আসি এবং শেরপা লজ খুঁজতে থাকি। এমন সময় হঠাৎ আমাকে একজন ডাক দেয় এবং জিজ্ঞাসা করে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি কিনা? আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করি তুমি কি করে বুঝলে? ও বলল, তোমার ব্যাগ ও তোমাকে একা দেখে। আমি একটা বোকা বোকা হাসি দিলাম। আমার মনে হয় ও গায়ের রং দেখে জাজ করছে। এই ভদ্রলোকের নাম চেম্বেল এবং ও শেরপা লজের মালিক।
লজের ডাইনিং রুমে ঢোকার পর একটা ভালো লাগার অনুভূতি ছুঁয়ে গেল। রুমের এক কোণায় বাংলাদেশ এর পতাকা শোভা পাচ্ছে। গোম্পাতে লোকাল যাদেরকেই বাংলাদেশী পরিচয় দেই তাঁরা সবাই প্রথমেই বলে, শেরপা লজ? মানে বাংলাদেশীরা এই লজেই উঠে এটা মোটামুটি স্ট্যাবিলিশড।
চেম্বেল এর সাথে এক্সপিডিশনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শেষ করে ১১ টার দিকে রওনা দিলাম কায়ানজি রি এর উদ্দেশ্যে। অর্ধেক রাস্তা অতিক্রম করার পর মনে হলো ট্রেকিং রাস্তা ধরে এগোলে সময় বেশি লাগবে, তারচেয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে যাই। কিছুদূর এভাবে উঠার পর বুঝতে পারলাম এটা পুরোপুরি সঠিক সিদ্ধান্ত হয় নি, কারণ যে জায়গায় পাহাড়ের গা বেয়ে উঠছি সেটা আমার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি খাড়া। ট্রেকিং রূটে ফিরব কিনা চিন্তা করতে করতে উপরে তাকিয়ে দেখি অনেকগুলো পাথরের মাথা বা অর্ধেক অংশ মাটির উপরে বের হয়ে আছে। সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম, পাথরগুলো ব্যবহার করে উঠার সিদ্ধান্ত নিলাম। এতে করে কিছুটা ক্লাইম্বিং প্রাক্টিস হয়ে যাবে। আমি উপরে উঠছি এমন সময় ওমর আর চন্দন নামছে। ওরা আমাকে এভাবে উপরে উঠতে দেখে ভাবছে আমি রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। ওরা আমাকে বারবার রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে। হেসে ওদেরকে বুঝালাম এটা প্রাক্টিসের জন্যে করছি। এভাবে অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করার পরে ক্লান্ত হয়ে যাই এবং আবার ট্রেকিং রুটে ফিরে আসি।
১২:৩০ এ আমি রি এর চূড়ায় পৌঁছাই, পৌঁছানোর একটু পর আমার ভূল ভাঙ্গে। এটা আসলে নিচের চূড়াটা যাকে কায়ানজি রি লোয়ার পিক বলা হয়, এর উচ্চতা ৪,৩০০ মিটার। আসলে নিচে থেকে উপরের চূড়াটা দেখতে না পাওয়ায় এই বিভ্রান্তি। কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পরেছি। উপরের চূড়ায় পৌঁছাতে আমাকে এখনও ৩০০ মিটার এর বেশি উপরে উঠতে হবে এবং ম্যাপ অনুযায়ী ১.৫ কি:মি দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। এদিকে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে, পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে গিয়ে ভালোই শক্তি ক্ষয় হয়েছে।
অবশেষে ইচ্ছা শক্তিরই জয় হলো। দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে উপরের চূড়ার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করি। ১:১০ এ চূড়ায় পৌঁছাই, এর উচ্চতা ৪,৬৫০ মিটার। বাতাসের তীব্রতার কারণে ও তারাতাড়ি ফিরার ইচ্ছে থেকে ১০-১৫ মিনিট পরেই চূড়া থেকে নামা শুরু করি। ৩ টার দিকে গোম্পা ফিরে আসি। লজে ঢুকে গরম টমেটো স্যুপ খেয়ে ঘুমানোর জন্যে রূমে চলে আসি।
ঘুম থেকে উঠার পর হালকা মাথা ব্যথা এবং কিছুটা খারাপ লাগা অনুভব করি। চিন্তা হচ্ছে, এরকম হলে কালকে সারগিও রি যেতে পারব না। ঘুমানোটা হয়ত উচিৎ হয়নি। শরীর রিকভারি করার জন্যে ডিনারে বেশি পরিমাণে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং দেশ থেকে সাথে করে আনা গরুর মাংসের আঁচার দিয়ে ডাল ভাত খাই। পেট ভরার পরও যতটা পারি খাওয়ার চেষ্টা করি। রাত ১০ টায় একটা নাপা খেয়ে ঘুমিয়ে পরি।
৬ষ্ঠ দিন-গন্তব্য: সারগো রি, উচ্চতা ৪৯৮০ মিটার
কাল রাতে ঘুম ভালো হয়েছে এবং সকালে একদম চাঙ্গা অনুভব করছি। রাতে শরীর নিয়ে যে শঙ্কা করেছিলাম তা এখন একেবারেই নেই। সুতরাং সারগো রি যাচ্ছি।
সকাল ৭টায় সারগো রি এর উদ্দেশ্যে বের হই এবং ১০:৩০ এ চূড়ায় পৌঁছাই। পথে আনায়া (অস্ট্রেলিয়ান) আমার কয়েকটা ছবি তুলে দেয়। চূড়ার পৌঁছানোর আগে শেষ ২০-৩০ মিটার পুরো রাস্তায় পাথর ভারগেলাস এ আবৃত ছিল।
আধা ঘন্টা চূড়ায় থেকে নেমে আসি। নামার সময় ভারগেলাস এড়ানোর জন্য অন্য একটা পথ বেছে নেই এবং ১ টার দিকে গোম্পায় ফিরে আসি।
লাঞ্চ করার পরে রোদে বিশ্রাম নিচ্ছি, এমন সময় শুনতে পাই কয়েকজন নেপালি সারগো রি যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পরে। ওদের জন্য হেলিকপ্টার ডাকা হচ্ছে। হেলিকপ্টার এ করে ওরা কাঠমান্ডু ফিরে যাবে।
৭ম দিন-উচ্চতা ৪৬০০ মিটার
সকাল ৮টা, গোম্পা থেকে বের হচ্ছি ইয়ালা বেইজ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে, সাথে পোর্টার চিরিং। যদিও পোর্টার নিব কিনা একটা দ্বিধা ছিল, তবে চ্যাম্বেল যে ভাবে পিছনে লেগে ছিল তাতে এমনিতেও না নিয়ে উপায় ছিল না। আরেকটা কারণে পোর্টার নিতে রাজি হয়েছি, সামিটের সময় যদি রোপ দিয়ে এংকর করতে হয় তখন যাতে ওকে এংকর পয়েন্টে রাখতে পারি।
বের হওয়ার আগে গ্যাস বার্নারটা পরীক্ষা করছিলাম। সঠিকভাবে ফিট না হওয়ায় সংযোগ এর জায়গা দিয়ে আগুন ধরে যায়, চিরিং এবং চ্যাম্বেল দুজনই সাথে সাথে ভোদৌড়। পরে আগুন নিভিয়ে আমি পুনরায় সঠিকভাবে বার্নার আর গ্যাস কেনিস্টার সংযোগ করি এবং কোন সমস্যা ছাড়াই আগুন জ্বালাতে সক্ষম হই। অবশ্য এর আগে চ্যাম্বেল আমার ক্রয়কৃত গ্যাস কেনিস্টার এবং বার্নারকে ২নং উপাধি দিয়ে ফেলেছিল।