ইয়ুথ থট

অধরাই রয়ে গেলো রাজীবের স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:৫৪ পিএম, ২২ অগাস্ট, ২০২০


Thumbnail

‘রোজ রাতেই আমার ছেলে আমার স্বপ্নে আসে। মনে হয় যেন সত্যিই এসেছে। আর ঘুমাতে পারিনা। ছেলের স্মৃতিগুলো মনে করতে করতেই সকাল হয়ে যায়।’ এ যেন এক রূপকথা। কিন্তু না। আবার যেন রূপকথার চেয়েও কোনো অংশে কম না। ছেলেহারা এক মায়ের কথার কাছে রূপকথার গল্প যেন অর্থহীন। ‘মা’ এমন একটি শব্দ যার কাছে পৃথিবীর সকল সুখ হার মেনে যাবে। সুখের রানী সেই মা তখনই হার মেনে নেয় যখন তার স্বপ্ন দেখা সেই সন্তান, যে কিনা ভবিষ্যতে আর্মি অফিসার হবে- সে তার স্বপ্নেই হারিয়ে যায়। মায়ের সেই স্বপ্নের রাজা তার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে। ধীরে ধীরে স্বপ্নপূরণের জন্য এগিয়েও যাচ্ছিলো। কিন্তু ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই যেন কাল হয়ে আসে তার জীবনে।

ঘাতক বাস জাবালে নূর কেড়ে নিলো মায়ের বুক থেকে তার মানিককে। বাসের চাকার নিচে চাপা পড়ে গেলো মা- ছেলের সেই স্বপ্ন। অধরাই রয়ে গেলো সেই স্বপ্ন। হেরে গেলো এক মা। একজন নয়, রাজীবের মৃত্যুসঙ্গী ছিলো আরও একজন। আর তার নাম দিয়া খানম মিম। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় নিহত হয়েছিল শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ২ শিক্ষার্থী আব্দুল করিম রাজ্বী ও দিয়া খানম মিম। বলছিলাম নিহত সেই রাজীবের মায়ের কথা।

ঘাতক জাবালে নূরের বাসের চাপায় মা ছেলের সেই স্বপ্ন চাপা পড়ে গেছে। হেরে যাওয়া সেই মা আজও জেতার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। কবে আসবে সেই দিন। নাকি আসবে না?

মিম ও রাজীবের মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের জন্য সারা দেশব্যাপী যে আন্দোলন হয়েছিল তা ছিল বিশ্বকে জানান দেওয়ার জন্য এক আন্দোলন। সেই আন্দোলনে বিশ্ব জেনেছিল রাজীব-মিমের কথা। এখন হয়ত ভুলেও গেছে। হয়তবা কোনো পরশপাথরে খোদাই করা হয়নি তাদের নাম। কিন্তু খোদাই করা রয়েছে যেন তার মায়ের হৃদয়ের সেই রক্তিম হৃদপিণ্ডে। এখনো ছেলের কথা মনে করলে চোখের জলে ভেসে যায় রাজীবের মায়ের আঁচলের সেই স্নিগ্ধ সুবাস। সবাই সেই রাজীবকে ভুলে গেলেও ভোলেনি সেই মমতাময়ী মা। হয়ত যতদিন বেঁচে থাকবে, এভাবেই মনে রাখবে তার ছেলেকে। প্রতি মুহূর্তে ছেলের অভাবে কষ্ট পাবে সে।

কিন্তু এমন ছিল না তাদের দিন। ছেলের জন্য আজ সে যতটা কষ্ট পাচ্ছে একসময় ঠিক ততটাই আনন্দ পেতো। কাউকে কষ্ট পেতে দিতো না। রাজীব সকলকে মাতিয়ে রাখতো আনন্দে। আজ সে সকলকে কষ্টের এক বিশাল বহর উপহার দিয়ে চলে গেছে অচেনা পৃথিবীতে। যেই পৃথিবীতে খুব ছোটবেলায় তার বাবা চলে গেছেন। বাবা চলে যাওয়ার পর রাজীবের সব আবদার ছিল বড়বোন কুলসুমকে ঘিরে। ভাইয়ের স্বপ্নটি পূরণ করার জন্য ঢাকায় এনেছিল তাকে। স্বপ্ন ছিল আর্মি অফিসার হবে। আর স্বপ্নপূরণ হলে ভাই পরিবারের সবাইকে খুব সুখে রাখবে। তাই সেই স্বপ্নের ছোঁয়া বাস্তবে রূপান্তর করতে বোনের কাছে আসা। কিন্তু সেই বোনও জানতো না আদরের রাজীব তার স্বপ্নের বিনিময়ে রাঙিয়ে দিয়ে যাবে বিমানবন্দর সড়কটি। যেই সড়কের প্রতিটি ইট সাক্ষী ছিল রাজীবের পথচলার।

রাজীবের পথচলার নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল তার বন্ধু মাহফুজ হাসান রাহাত। একে অপরের গানেরও সঙ্গী তারা। কাকতালীয়ভাবে তাদের বন্ধুত্বটা তৈরি হয়েছিল, তেমনি চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেছে সব। বন্ধুর ফোন নাম্বারটি আজও তার ফোনে সেইভ করা, কিন্তু আর কোনো ফোন আসেনা। হয়ত আর কখনো দুইবন্ধুর হাঁটা হবে না ওই রাস্তাটিতে। এটাই হয়ত নিয়তি!

সবার এই অদ্ভুত অপেক্ষা দেখে রাজীবেরও ভালো লাগছে। যে কখনো কাউকে কষ্ট দিতো না, সে এখন সবাইকে কষ্টের এক বিশাল সাগরে ভাসিয়ে পরপারে সুখেই দিন কাটাচ্ছে। রাজীব ও মিমের পরিবারের মতো না জানি আর কত পরিবার কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে।

মীম, রাজিবের সাথে সেদিন আর যেই ৬জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছিল, তারা আজও সেই ভয়াবহ দৃশ্য ভুলতে পারেনি। রাজীব-মীমের জীবনের বিনিময়ে পাশ হয়েছিল সড়ক আইন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শহীদ বীর বিক্রম রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে ৫টি বাস উপহার দিয়েছেন। তাদের জীবনের বিনিময়ে যে সড়ক আইন পাশ হয়েছে তার প্রভাব জনজীবনে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে তা জানার জন্য শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী শান্তা মনিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, সড়ক আইন পাশ হলেও তা কার্যকর এবং বাস্তবায়নে এখনো ঘাটতি রয়েছে। তারা এখনো নিরাপদ সড়ক পায়নি। এক্ষেত্রে সরকারের যেমন যথাযথ আইন প্রয়োগের ঘাটতি রয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের অসচেতনতাও দায়ী। ভালো নেই রাজীবমীমের পরিবার। কষ্টকে নিত্যদিনের সঙ্গী করেই তাদের দিন কাটছে।

আমরা আর কোনো রাজীব-মীমকে হারাতে চাই না। জনগণ চায় না আর কোনো রাজীব-মীম বেলাশেষে এভাবে ঝরে পড়ুক। ঘাতক পরিবহনগুলোর জন্য ঝরে পড়ছে হাজারো রাজীব-মীম। প্রতিনিয়তই কাড়ছে প্রাণ, মেরে ফেলছে স্বপ্ন। হয়ত রাজীব তার মায়ের স্বপ্নে এসে হাতছানি দেয় এই বলে যে, ‘মা, তোমার আর কোনো সন্তান যেন অকালে ঝরে না পড়ে। তাদের স্বপ্ন যেন পূর্ণ হয়। দেশবাসী যেন বেলাশেষে অধরা এক স্বপ্নের রূপকথা আর না শোনে।

লেখক: সাদিয়া খাতুন ইলমা
বয়স: ১৮
উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষ, শহীদ বীর বিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল

ফাহিম মুনতাসির জিহাদ
বয়স: ১৬
দশম শ্রেণী, বাউনিয়াবাঁধ আইডিয়াল হাই স্কুল



মন্তব্য করুন


ইয়ুথ থট

৩৫শতাংশ তরুণ দেশের নেতৃত্ব নিতে আগ্রহী: সিপিডির জরিপ

প্রকাশ: ০১:২২ পিএম, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩


Thumbnail

৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ দেশের নেতৃত্ব নিতে আগ্রহী। আর নীতি পরিবর্তন হলেই কেবল ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ দেশের নেতৃত্বে অংশ নিতে চান।

বর্তমান জাতীয় প্রেক্ষাপটে ‘তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক এক জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে এ তথ্য। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আয়োজন শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে যুব সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

জরিপের জন্য চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর- এই দুই মাসে পাঁচ হাজার ৭৫ জনের মতামত নেওয়া হয়। এরমধ্যে ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী, ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ চাকরিজীবী ও ২৮ শতাংশ বেকার। এছাড়া ৭৮ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ, ২১ দশমিক নারী ও শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। এই পাঁচ হাজার জনের মধ্যে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশের বাস শহরে আর ৪০ দশমিক ৮ শতাংশের বসবাস গ্রামে।

 জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, ৬৭ শতাংশ তরুণ কোনো রাজনৈতিক প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেননি। ৭৯ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ও রাজনীতি সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারেন। ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ খবরের কাগজের মাধ্যমে ও রাজনৈতিক আলাপ সম্পর্কে জানতে পারেন। একইভাবে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে এবং ৭ দশমিক ৭ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ খবর সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নন।

জরিপে উল্লেখ করা হয়, ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ এখন পর্যন্ত ভোট দিতে পারেননি। যাদের মধ্যে ১৮-২৫ বয়সীর সংখ্যা ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২৫-২৯ বয়সীর সংখ্যা ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৩০-৩৫ বয়সীর সংখ্যা ২৫ শতাংশ। ৪৬ শতাংশ তরুণ কোনো স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ রাজনীতি ও ছাত্র রাজনীতিতে আগ্রহী নন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার হয়েছেন। ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ তাদের মতামত প্রকাশের জন্য নিগ্রহের স্বীকার।

অপরদিকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ তরুণ, যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা মত প্রকাশের জন্য নিগ্রহের স্বীকার হয়েছেন। ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ মনে করেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তরুণদের মতামত নেওয়া হয় না।

৫৬ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ মনে করেন দুর্নীতি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব উন্নয়নে বড় চ্যালেঞ্জ। ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে।

এছাড়া ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ তরুণ বিদেশে পুরোপুরিভাবে চলে যেতে চান। তবে ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ তরুণ দেশেই থাকতে চান। ৩৫ শতাংশ তরুণ দেশের নেতৃত্বে অংশ নিতে চান। আর নীতি পরিবর্তন হলে ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ দেশের নেতৃত্বে অংশ নিতে চান।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দ্রুততার সঙ্গে আমাদের সমাজে যুবদের সংখ্যা ও অনুপাত বেড়ে চলেছে। এই যুব সমাজের আশা আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমরা কতটা সফল। এই জিজ্ঞাসা বার বার আসছে। সামনে নির্বাচন। সেখানে আমরা যুব সমাজের অংশগ্রহণ দেখতে চাই।

 


তরুণ   সিপিডি   জরিপ   দায়িত্ব   নেতৃত্ব   দৃষ্টিভঙ্গি  


মন্তব্য করুন


ইয়ুথ থট

নদী দখলদারদের উচ্ছেদের দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পদযাত্রায় রাকিব


Thumbnail

দেশের নদী দখলদারদের উচ্ছেদ ও  নদীর প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করে তালিকা প্রনয়ণের দাবিতে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছেন রাকিব হাসান (২৪)।  রাকিব হাসান কক্সবাজারের  মহেশখালীর শাপলাপুরের ষাইটমারা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। "দুরত্ব ও সীমাবদ্ধতাকে পরাজিত কর" শিরোনামে গত ২০ এপ্রিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বাংলাবান্দা জিরোপয়েন্ট থেকে তিনি এ যাত্রা শুরু করেন। শেষ করবেন টেকনাফ জিরো পয়েন্টে গিয়ে। আগামী ১০ মে তিনি পর্যন নগরী কক্সবাজারে পৌঁছবেন। ১১ মে  ভোর ৬ টায়  টেকনাফের উদ্দেশ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে যাত্রা করবেন। ১২ মে অর্থাৎ ২৪ তম দিনে তিনি টেকনাফ গিয়ে যাত্রা বিরতি শেষ করবেন।

এই প্রতিবেদন লেখা অব্দি তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়  উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া সীমান্তবর্তী আজিজ নগরে  অবস্থান করছেন। পায়ে হেটে এখন পর্যন্ত সে পথ অতিক্রম করেন ৮৪৫  কিলোমিটার। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত হাঁটেন তিনি। রাতে যেখানে হাঁটা বন্ধ হয়ে যেত, ওই এলাকায় পরিচিত কারও বাসায় পরিচিত না থাকলে হোটেলে, মসজিদে, পেট্রোল পাম্প এর রেস্ট হাউজে রাতযাপন করেন। দূরত্ব ভীতির কারনে কেউ সঙ্গী না হওয়ায় একাকী সে পদযাত্রা শুরু করে বলে জানায় তিনি। রাকিব আরও জানান, এটাই তার প্রথম দীর্ঘ একাকী পদযাত্রা। দুরত্ব ও দিনের হিসেব করে তিনি ২৪ দিনে তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন বলে আশা করেন। এবং তিনি একাই ১০০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ  দূরত্ব অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।


রাকিব জানান, তিনি একাকী পদযাত্রায় বিচলিত নন। বরং তিনি দেশের নদীর দখল ও নদীর বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে বিচলিত। তিনি আরও জানান,, নদী আমাদের দেশের রক্তনালীর মত। দেশে প্রবাহমান সমস্ত নদী এখন শুকিয়ে গেছে। আগামি দশকের মধ্যে অনেক নদী হয়তো মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে। যদি এই সময়ে  সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নদী রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে দেশের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। এতে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে। যা তাকে উদ্ধিগ্ন করেছে। তাই তিনি সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েই পদযাত্রার পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ঐক্যবদ্ধ  হয়ে  নদী রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানোর ও চেষ্টা করছেন তিনি। 

পদযাত্রার সীমাবদ্ধতার প্রশ্নে রাকিব জানান, প্রথম কয়েকদিন হাটার পর পা ব্যথা ও ফুলে গেলেও এখন তা সুস্থ হয়ে গেছে। এবং তিনি মনোবলের উপর জোর দিচ্ছেন। এতে করে তিনি তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।


বাঁচতে হলে মহাশয়, রক্ষা করুন জলাশয়। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ,আলোর হবে পরিবেশ। দখল দূষণ বন্ধ করি/নদীর মতন জীবন গড়ি। এ স্লোগানকে সামনে রেখে নদী রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান সচেনতন মহলের প্রতি।

বাংলাদেচ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার)  কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, নদী, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে  রাকিবের একক আন্দোলন ও প্রতিবাদ অনন্য  দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যে বার্তা দিচ্ছেন এতে নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে  নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবেন।তার এই  কাজে সবার সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে নদী রক্ষায়  দেশবাসীকে সচেতন করেছেন তিনি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদী,পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে তাঁর এ পদ যাত্রা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ২৪ বছরের এ যুবক   একজন শিক্ষার্থী। তাঁর দেশপ্রেম, অদম্য সাহস ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন স্মরণে রাখবে।



মন্তব্য করুন


ইয়ুথ থট

সোলো এক্সপিডিশনে ইয়ালা পিক'র চূড়ায় বাংলাদেশের তানভীর

প্রকাশ: ১২:৫২ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail

(পর্ব-১)

স্বপ্নের নেপাল। হিমালয়ের কন্যা সে। সাদা সুউচ্চ পর্বত একে তুষারের শুভ্রতা দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখে গভীর আর মৌন সৌন্দর্যে। আর তাই যারা পাহাড় ভালোবাসেন, উচ্চতাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে হিমালয় হলো স্বর্গ

এক একটা পাহাড় জয় করা যেনো পাহাড়প্রেমীদের কাছেও স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নপূরণ করতে বাংলাদেশের থেকে যাত্রা করেন মোহাম্মদ তানভীর আলম। ছুয়ে আসেন ইয়ালা পিকের শিখর। ল্যাংটাং রিজিয়নের ইয়ালা পাহাড়ের উচ্চতা ৫৫২০ মিটার বা প্রায় ১৯ হাজার ফুট। সেই গল্প ও নেপাল পৌছানোর পর তার দিনলিপি নিয়ে লিখেছেন আমাদের কাছে।  তার গল্প আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো দুইটি ভিন্ন পর্বে। আজকের পর্বে থাকছে সেই গল্পের একাংশ।

৩০.১০.২২, দিন ১

সকাল ৬ টায় বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার মাধ্যমে অভিযানের যাত্রা শুরু। কোন গাইড ছাড়া নিজের প্রচেষ্টায় নেপালের লাংটাং রিজিওনে ৫,৫০০ মিটার উচ্চতার ট্রেকিং চূড়া ইয়ালা পিক সামিট এই অভিযানের উদ্দেশ্য।

১২:৩০: ত্রিভূবন এয়ারপোর্ট, কাঠমান্ডু থেকে বের হয়ে হোটেল এর উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি নিলাম। হোটেল ফ্লোরিড আজকের অস্থায়ী ঠিকানা। হাতে সময় না থাকায় ঢাকা থেকেই হোটেল বুকিং করে এসেছিলাম।যদিও রূম পছন্দ হয়নি কিন্তু ওদের নীচতলায় যে রেষ্টুরেন্ট তার জন্য হোটেল এর পিছনে খোলা উঠানে বসার ব্যবস্থাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওদের রিসেপশনে ছোট্ট একটা লাইব্রেরী বা বইয়ের সংগ্রহ আছে। হোটেল এর লোকেশনটা অবশ্য অনেক ভালো, কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র থামেলের জেড স্ট্রীটে এটির অবস্থান। এবং হোটেল মালিক মিঃ দিপক খুবই আন্তরিক। বাজেট হোটেল হিসেবে হোটেলটি ভালো।

সন্ধ্যায় কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করে ও স্লিপিং ব্যাগ ভাড়া নিয়ে রূমে ফিরে ব্যাকপ্যাক গোছানো শুরু করলাম। কালকে সকালে বাস ধরতে হবে।

৩১.১০.২২, ২য় দিন
গন্তব্য সায়াব্রুবেসি


৭ টায় মাছাপোখারি বাস-স্ট্যান্ড এ এসে কয়েকজনকে সায়াব্রুবেসির কথা জিজ্ঞেস করলে লাল একটি বাস দেখিয়ে দিল (আসলে হেলপার এসে ডেকে নিল), বাসটির সামনে শুধু ডিলাক্স লেখা ছাড়া আর কিছু পড়তে পারলাম না। কারণ শুধু এটুকুই ইংরেজী শব্দ  এবং বাসটি যাত্রীতে পরিপূর্ণ।

তবে, বাসে যেহেতু আরো কয়েকজন ট্যুরিস্ট (ইউরোপীয়ান) আছে তাই নিশ্চিন্তে উঠে পরলাম। তবে সিট একবারে পিছনের সারির বাম পাশে কোণায় । যদিও অনেক দীর্ঘ রাস্তা তবু অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই সিটেই বসে পরলাম কারণ পরের বাসের জন্য আবার ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে যেটার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।

৩১.১০.২২, ২য় দিন- গন্তব্য সায়াব্রুবেসি

৭ টায় মাছাপোখারি বাস-স্ট্যান্ড এ এসে কয়েকজনকে সায়াব্রুবেসির কথা জিজ্ঞেস করলে লাল একটি বাস দেখিয়ে দিল (আসলে হেলপার এসে ডেকে নিল), বাসটির সামনে শুধু ডিলাক্স লেখা ছাড়া আর কিছু পড়তে পারলাম না। কারণ শুধু এটুকুই ইংরেজী শব্দ  এবং বাসটি যাত্রীতে পরিপূর্ণ।

তবে, বাসে যেহেতু আরো কয়েকজন ট্যুরিস্ট (ইউরোপীয়ান) আছে তাই নিশ্চিন্তে উঠে পরলাম। তবে সিট একবারে পিছনের সারির বাম পাশে কোণায় । যদিও অনেক দীর্ঘ রাস্তা তবু অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই সিটেই বসে পরলাম কারণ পরের বাসের জন্য আবার ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে যেটার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।

ড্রাইভার এবং হেলপার খুবই প্রফেশনাল; বাসের এক ইঞ্চিও ফাঁকা রাখে নাই। সিট পরিপূর্ণ হওয়ার পর মাঝখানের জায়গা বস্তা দিয়ে পরিপূর্ণ করেছে এবং  মাল বোঝাই সেই বস্তাগুলোকে আবার সিটে রূপান্তরিত করে তার উপর যাত্রীও বসাইছে । বাসটি লোকাল হলেও এসি ও টিভি আছে, এবং  সবার বিনোদনের জন্য হেলপার প্রায় পুরো রাস্তা টিভিতে নেপালি ও হিন্দি মিউজিক ভিডিও চালু রেখেছে।

গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে দুই জায়গায় পুলিশ চেক পোস্টে এন্ট্রি করতে হয়েছে এবং ধুনচেতে আর্মি চেক পোস্টে ব্যাগ চেকিং করাতে হয়েছে। বাংলাদেশ এর কথা শুনে ব্যাগ খুলে নাই। চেকপোস্ট এর পাশেই ট্রেকিং পারমিশন সেন্টার, ওখান থেকে ১৫০০ রূপি (সার্ক কান্ট্রি না হলে ৩০০০ রুপি) দিয়ে পারমিশন নিয়ে নিলাম।

সন্ধ্যা ৫:৩০ এ সায়াব্রুবেসিতে এসে পৌঁছালাম, ১০:৩০ ঘন্টার বাস জার্নি। বাস জার্নিটা প্রথমে উপভোগ্য থাকে, ভ্রমন শুরুর উত্তেজনা এবং চারপাশে মনোরম দৃশ্য। কিন্তু যত সময় গড়ায় তত বিরক্ত লাগে, কখন জার্নি শেষ হবে শুধু এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়।  পিছনের সিটে যতটা ঝাঁকির আশা করেছিলাম অল্প কিছু জায়গা ছাড়া সেটা পাইনি।

হোটেল গার্ডেন ইন  আজকের ঠিকানা। হোটেলের পিছনের উঠানটি একেবারে নদীর কোল ঘেঁষে। উঠানে বসলে ত্রিশুলি নদীর তীব্র স্রোতের অনবরত শব্দ একধরনের ঘোর তৈরি করে, সাথে ঠান্ডা বাতাস আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক সেই ঘোরের মাত্রা বাড়িয়ে মোহাবিষ্ট করে কল্পনার কোন এক জগৎ এ নিয়ে আছড়ে ফেলে।

১.১১.২২, ৩য় দিন

আজকে ট্রেকিং শুরু, মানে ট্রেকিং এর প্রথম দিন। আজকে গন্তব্য লামা হোটেল, দূরত্ব ১১ কিঃমিঃ।

২৫+ কেজি ব্যাকপ্যাক এর জন্য একবার পোর্টার নেয়ার চিন্তা করেও পরে নিজেই বহন করার সিদ্ধান্ত নেই।

সকাল ৭টায় হাঁটা শুরু করলাম। ট্রেইলের শুরুতে একটা চেকপোস্ট পরে, ডাকল না দেখে নিজে গিয়ে পারমিশন দেখাতে চাইলাম তাও দেখল না। হাঁটা শুরু করার একটু পরেই একটা Y জাংশনে এসে দ্বিধায় পরে গেলাম। আমিতো লামা হোটেল যাব, কিন্তু সাইনবোর্ডে লামা বা লাংটাং এর কোন নাম নেই। ডানদিকে দেখাচ্ছে কিওয়াহারি আর বাম দিকের নামটা ঠিক মনে নেই। রাস্তাটা উপরের দিকে লুপের মত উঠে গেছে তাই ম্যাপ দেখেও ১০০% বুঝতেছিনা কোন দিকে যাব। পরে ডানে বামে দুই দিক দিয়ে উঠানামা করে বুঝলাম রাস্তা ডানদিকের টা এবং একজন স্থানীয় বাসিন্দা ঐখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিলাম যে রাস্তা ডানদিকেরটা। এখান থেকে ট্রেলটি লাংটাং খোলার (নদী) পাশ দিয়ে চলে গেছে।


রাতে ব্যাগের ওজন নিয়ে যে একটু চিন্তা ছিল হাঁটা শুরু করার পরে সেটি চলে গেছে। খুব সহজেই এই ওজন নিয়ে একটানা ২ ঘন্টা হেটে ডোমেন চলে আসলাম এবং প্রথম বিরতি নিলাম। ট্রেলটি এখানে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে। ডোমেন থেকে বেম্বো পর্যন্ত পরের ২ ঘন্টা একটু কষ্ট হয়েছে কারণ রাস্তাটা উপরের দিকে উঠে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে শেষের ৩ ঘন্টা বেম্বো থেকে রিমচে পর্যন্ত। এই রাস্তাটা ৬০০ মিটার উপরের দিকে উঠে গেছে এবং শেষ ৫০০ মিটার খাড়া।তারউপর ৯০% রাস্তা উঁচু সিঁড়ি। এই সিঁড়ি গুলো উঁচু হওয়ার কারণে আমি হাতের পোল থেকে তেমন একটা সাপোর্ট নিতে পারছিলাম না। যে কারণে পুরো ভর আমার উরুর সামনের মাংসপেশীতে এসে পরে। একপর্যায়ে এমন একটা অবস্থা দাঁড়ায় যে আমার পেশীগুলো ক্লান্ত হওয়া সত্ত্বেও দাঁড়াতে পারছিনা, কারণ দাঁড়ালেই পায়ের মাংসপেশি ক্রাম্প করছে। ভাবছি কোন ভাবে রিমচে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে আজকে আর সামনে আগাবো না, তবে নেপালি একটি যুগল সাহস দিল এবং ঠিক করলাম লামাতেই যাব। রিমচে থেকে লামা পর্যন্ত রাস্তা কিছুটা সমতল ও কিছুটা ডাউনহিল। সিঁড়ির পুরো রাস্তাটা আমি মনে মনে একটা বাক্যই আওড়াইছি সেটা হল 'আই হেট সিঁড়ি'।

বেম্বোর কিছুদূর পর লাঞ্চের জন্য বিরতি নেই। আমি সাধারণত নিরিবিলি জায়গায় লাঞ্চ করতে পছন্দ করি। যেহেতু প্রায় সবাই বেম্বোতে লাঞ্চ সেরে ফেলে তাই আমি যেখানে বসেছি এখানে তেমন কেউ থামে না। এখান থেকেই রাস্তাটা খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে।

বিকাল ৩:৩০ এ লামা হোটেল এসে পৌঁছালাম। রাতে এবং সকালে খাব এই চুক্তিতে রূম ফ্রীতে নিলাম। এই জায়গাটা নদীর পাড়ে এবং জঙ্গলের ভিতরে। রূমে ব্যাগ রেখে হাতে চা নিয়ে নদীর পাড়ে চলে আসলাম বিকালটা উপভোগ করার জন্যে।

৪র্থ দিন, ০২.১১.২২- গন্তব্য মুন্ডু, দূরত্ব ১৩ কিঃ মিঃ, উচ্চতা ৩৪০০ মিটার

সকাল ৬:৪৫ এ লামা হোটেল থেকে মুন্ডুর  উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু করলাম। কয়েকবার ভালো করে ম্যাপের কন্টুর লাইনগুলো চেক করলাম, না আজকের রাস্তা ওতো খারা না।

ট্রেক শুরুর ঘন্টাখানেক পরে ঘুমনাচক নামক একটা জায়গায় এসে পৌঁছাই, যার উচ্চতা ২৭০০ মিটার। যদিও এত তাড়াতাড়ি চা পানের বিরতি নেওয়ার কোন ইচ্ছে নেই তারপরও জায়গাটির আকর্ষণ এড়াতে না পেরে এইখানে অনেকক্ষণ সময় অতিবাহিত করি। এখানে রাস্তাটা নদীর পাশ দিয়ে চলে গেছে এবং রাস্তার পাশে একমাত্র লজটির নাম রিভারসাইড হোটেল। লেমন টি হাতে নিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে ইচ্ছে করছে এখানে সারাটা দিন পার করে দেই, অসাধারণ সুন্দর একটি জায়গা। একদিকে নদীর সৌন্দর্য আরেকদিকে লাংটাং লিরুঙের চূড়ার সৌন্দর্য আমাকে বিমোহিত করে ফেলছে।

চা বিরতির পর ট্রেকিং শুরুর কিছুক্ষণ পরে বনের মাঝে ঝিরি বা নদীর উপরে সুন্দর একটি কাঠের ব্রীজের ছবি তোলার সময় হাতের গ্লাভস হারিয়ে ফেলি। পরে গ্লাভসটি উদ্ধার করার জন্য ওই একই রাস্তায় দুইবার পুনরায় উঠা নামা করি কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গ্লাভসটি আর খুঁজে পাই নি। গ্লাভস এর আশা বাদ দিয়ে সামনে আগানো শুরু করি, একটু পরেই জঙ্গলের ভিতর লাঙ্গুর (বানর প্রজাতি) দেখতে পাই। বনের ভিতর বন্য প্রাণী দেখার অনূভুতিই অন্যরকম।

ভিড় এড়িয়ে লাঞ্চ করার জন্য ম্যাপ দেখে চামকি নামক একটা জায়গা ঠিক করে রাখি। কারন আমার হিসাব মতে ওই জায়গায় পৌঁছাতে দুপুর একটা বেজে যাবে এবং সাধারণত অন্যান্য ট্রেকাররা এর আগে লাঞ্চ সেরে ফেলবে। সাধারণত বেশিরভাগ ট্রেকার দুপুর বারোটার দিকে লাঞ্চ করে ফেলে। আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে চামকিতে একটি মাত্র বেকারি শপ এবং এটি সম্পূর্ণ ফাঁকা। কেরট কেক আর হট চকলেট অর্ডার করে বেকারির বাইরের উঠোনে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমার সামনে সাদা শুভ্র ও সবুজে আচ্ছাদিত পাহাড়গুলো মাথা উঁচু করে তার সৌন্দর্য ও বিশালতা জানান দিচ্ছে। আমি অপার নয়নে সেই সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে আমাকে স্বাগতম জানানো মেয়েটির কথা ভাবছিলাম। কেন যেন মনে হচ্ছে ওর ভিতরে একটা গল্প আছে। এবং চেহারায় অদ্ভূত একধরনের মায়া ফুটে আছে। অর্ডার দেয়ার সময় কোন কথা হয়নি, কারণ ও কথা না বলে ইশারায় এবং লিখে যোগাযোগ করছে। আমার মনে হয় ও ইংরেজী জানে না এবং প্রশ্নগুলো কাউকে দিয়ে আগে থেকে লিখে রাখছে। খাওয়া শেষে বিল দেয়ার সময় আমার ভূল ভাঙ্গে এবং অবাক হয়ে দেখি ও ইংরেজী কমিকস বই পড়ছে। তারমানে ও ইংরেজী জানে, তাহলে কথা বলল না কেন? যখন নিজেই প্রশ্নের উত্তরটা পেলাম তখন মনটা বিষন্ন হয়ে গেল, বুঝতে পারলাম ও কথা বলতে পারে না। গল্প করার ইচ্ছেটা দমন করে রওনা দিলাম, কারণ সন্ধ্যার আগে মুন্ডু পৌঁছাতে হবে। মনে মনে ঠিক করে রাখলাম যদি এই রাস্তা দিয়ে ফিরি তবে ওর গল্প শুনব।

একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে রাস্তায় বেশিরভাগ নেপালিরা প্রথমে ওদের ভাষায় কথা শুরু করে, পরে যখন শুনে বাংলাদেশী তখন অনেক উচ্ছাস প্রকাশ করে।

লাংটাং গ্রামের আগে একটি লজে এক ভদ্রমহিলা সিবাকথর্ন জুস খাওয়ার জন্যে ডাক দেয়, প্রথমে দাঁড়ানোর ইচ্ছে না থাকলেও পাহাড়ে এই জুস পানের তীব্র ইচ্ছা আমাকে দাড় করিয়ে দিল। জুস পান করার পর নিজেকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিলাম। ভদ্রমহিলা জুসটা সত্যি অনেক ভালো বানিয়েছেন।

লাংটাং ভিলেজ থেকে প্রায় মুন্ডু পর্যন্ত একটি সীমানা প্রাচীর চলে গেছে যেটি প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা এবং এটি মানি ওয়াল নামে পরিচিত। ওয়ালটির শেষ ২০০ মিটার অবশ্য বেশি পুরনো না। এখানকার তিব্বতিয়ানরা লামা উপজাতি। এদের পূর্বপুরুষরা একটা কাগজে স্থানের বর্ণনা করে তার উপর এই সীমানা প্রাচীর তৈরি করে।

ঘড়িতে বিকাল ৫ টা, মুন্ডুতে চলে আসছি।  'এভারেস্ট হোটেল' লজটি পছন্দ হয়েছে, অনেক পরিছন্ন এবং রুম থেকে ভিউটা অনেক সুন্দর। এই প্রথম আমি উঁচু উচ্চ স্থানের লজে হাই কোমড পেলাম। আধুনিকতার ছোঁয়া এখানেও চলে আসছে।

পথে ওমর ও চন্দন প্রাসাদ এর সাথে পরিচয় হয়, ওরা নেপালের এটোরাতে থাকে। ওরা মূলত মোটরসাইকেল ভ্রমণ বা এডভেঞ্চার করতে বেশী পছন্দ করে। বছরে একবার ট্রেকিং এ বের হয়। ওঁরাও একই লজে উঠছে। ওরা  শুধু কায়ানজি রি পর্যন্ত যাবে। আমার মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ না করায় চন্দন ওর মোবাইলের ইন্টারনেট শেয়ার করে যার মাধ্যমে আমি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই‌। এই জায়গায় নেপাল টেলিকম এর নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়, কিন্তু আমার সিম এনসেল এর হওয়ায় নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। আজ রাত্রে এখানেই। কাল আবার যাত্রার চিন্তা নিয়ে ঘুমিয়ে পরি।

(চলবে........................)



মন্তব্য করুন


ইয়ুথ থট

ফটিকছড়িতে বরই চাষ করে যুবকের ভাগ্য বদল

প্রকাশ: ১০:৫৮ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বরই চাষ করে  আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন এক যুবক। পাশাপাশি তার বাগানে কাজ তরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অন্তত ১৫/২০ জন বেকার যুবকের। পতিত জমিতে বরই চাষ এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছ।বরই চাষের পাশাপাশি ষাথী ফসল হিসাবে  হাইব্রীট বারো পেয়ারা ও থাই আখের চাষ করা হয়েছে।

প্রতিদিন নানা বয়সী মানুষ ছুটে আসছেন বাগান দেখতে। অনেকেই বাগান দেখে বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বলতে গেলে উন্নত জাতের বরই চাষে বাজিমাৎ করেছেন এই যুবক।

জানাগেছে, উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের ছোট কাঞ্চনা গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তৌহিদুল আলম। লেখাপড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। শিক্ষার পাঠ শেষ না করে এনজিও সংস্থায় চাকুরী নিলেও স্বপ্ন দেখতেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করার।

এক সময় চাকরী ছেড়ে দিয়ে মনস্থীর করেন বাড়ির পাশে নিজেদের পতিত জমিতে চাষাবাদ করার। যেই চিন্তা সেই কাজ। শুরু করেন বরই চাষ। প্রথম দিকে ছোট্ট পরিসরে হলেও এখন তার বাগানে জমির পরিমাণ আশি শতকের কাছাকাছি।

প্রথম দিকে, আশানুরূপ ফলন না হলেও দুই বছরের মাথায় এসে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন এ যুবক।

প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় নার্সারি থেকে কলম চারা সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে শুরু করা হলেও বর্তমানে সুন্দরী, কাশ্মীরী, ভারত সুন্দরী, আপেল কুল, নারিকেলসহ অন্তত ১০ হাজার উন্নত জাতের বরই গাছ রয়েছে বাগানে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে কাচা – পাকা বরই। এমন ভাবে ফলন হয়েছে বরইয়ের ভারে গাছগুলো যেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে।

জানা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত একটি বরই গাছ থেকে কমপক্ষে ২০ -৩০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। প্রকার ভেদে প্রতি কেজি বরই ৭০/ ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।

সবকিছু মিলিয়ে আশি শতক জমিতে আবাদ করতে খরচ পড়েছে ৮ লক্ষাধিক টাকা। এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৯ লক্ষ টাকার মতো। গাছে যে ফলন অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলো বিক্রি করে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা আসতে পারে।

প্রতিদিন আশেপাশের এলাকা ছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে বেপারীরা এসে বরই কিনে নিয়ে যায়। এসব বরই খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদাও বেশী। দামও তুলনামূলক কম।

বরই কিনতে আসা বেশ কয়েকজন বেপারীর সাথে কথা হলে তারা বলেন এখানে উৎপাদিত বরই অধিক মিষ্টি। যার ফলে বাজারে চাহিদা বেশী থাকে। দামও ভাল পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে সফল বরই চাষী তৌহিদুল আলম বলেন এমন একটা সময় ছিল কৃষি মানে নিম্ন শ্রেণীর পেশা ভাবা হতো। বর্তমানে শিক্ষিত যুবকরা কৃষিতে এসে সেই ধ্যান ধারনায় পরিবর্তন এনেছেন।

তিনি আরো বলেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষাবাদ করলে সফল হতে সময় লাগে না। তবে, এক্ষেত্রে ইচ্ছা শক্তি ও পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আগ্রহী তরুণদের বরই চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন বলে জানান সফল বরই চাষী তৌহিদুল।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন ফটিকছড়ির উত্তর অঞ্চল ঢালু ও উর্বর হওয়ায় এখানকার মাটি বরই চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে উচ্চ ফলনশীল বরই চাষ করে অনেকে সফল হয়েছেন। এক্ষেত্রে তৌহিদুলের বাগানটি মডেল হিসেবে ধরে নেয়া যায়। আগামীতে বরই চাষে আগ্রহীদের পরামর্শ ও সরকারী সহযোগিতার আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।

বরই চাষ   যুবকের ভাগ্য বদল  


মন্তব্য করুন


ইয়ুথ থট

বছরের সেরা তরুন উদ্যোক্তা এ্যাওয়ার্ড পেলেন নাঈম সজল

প্রকাশ: ০৪:০৪ পিএম, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

২০২২ সালের সেরা তরুন উদ্যোক্তা এ্যাওয়ার্ড পেলেন ই-টপ ম্যাট্রেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সময় এক্সপ্রেস নিউজের সম্পাদক নাঈম সজল। সম্প্রতি ঢাকার সেগুনবাগিচায় এস আর মিউজিক আয়োজিত ২০২২ সালে নানান ক্ষেত্রে বিশেষ আবদানের জন্য এ্যাওয়ার্ড প্রধান অনুষ্ঠানে বছরের সেরা স্টারদের সন্মাননা  দেয়া হয়।  

স্মার্ট বাংলাদেশ ও মেট্রোরেলের শুভ সূচনায় মিডিয়া কর্মীদের অবদান শীর্ষক  এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান টিভি ও এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হারুন অর রশিদ সি আই পি। এতে সভাপতিত্ব করেন এস আর মিউজিক ফিল্মের কর্ণধার সাহাব ভূইয়া।  

এ্যাওয়ার্ড পাওয়া নিয়ে ই-টপ ম্যাট্রেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাঈম সজল জানান, 'আসলে আমি কখনোই পুরষ্কারের জন্য কাজ করিনা, তবে সন্মানিত হতে কার না ভালো লাগে! আমি আমার প্রতিষ্ঠান ই-টপ ম্যাট্রেস এর মাধ্যমে শুরু থেকেই গুনগত মানের পন্য দিয়ে আস্থা অর্জন করে আসছি, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও আমরা এই ধারা অব্যাহত রাখব। আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই এস আর মিউজিক এর কর্ণধার সাহাব ভূইয়া ভাইকে আজকে আমাকে সন্মানিত করার জন্য। ইনশাআল্লাহ এস আর মিউজিক অনেক দূরব এগিয়ে যাবে।


উদ্যোক্তা   এ্যাওয়ার্ড   নাঈম সজল  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন