নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১০ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
আমি শুকরিয়া মুন্নি। থাকি চট্টগ্রাম শহরে। করোনা ভাইরাসের তান্ডবে পুরো বাংলাদেশ দীর্ঘসময় লকডাউনে ছিল। যদিও লকডাউন শেষ হয়েছে তবে শেষ হয়নি করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব। লকডাউন শেষ হওয়ায় এবং ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে এসেছি ব্রাহ্মনবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বরিশাল গ্রামে।
আমার গ্রামটি দেখতে অনেক সুন্দর। সবুজে সবুজে ভরা গ্রামটা যেন সজিবতায় ভরা। কিন্তু সজিব, সতেজ আর মুখভরা হাসি নেই দেশের গ্রামীন মানুষগুলোর মুখে। কারণ গ্রামের লক্ষাধিক নিম্নশ্রেণীর ও মধ্যবিত্ত পরিবার শহরে বসবাস করতেন, থাকতেন ভাড়া বাসায়। ছাত্রদের কেউ কেউ থাকতেন ব্যাচেলর। করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন হাজার পরিবারের গৃহকর্তা। চাকরি হারানোর পরে আয় উপার্জনের ভিন্ন পথ খুজেও ব্যর্থ হন অনেকে। যার ফলে বেশিরভাগ মানুষ সব হারিয়ে ভাগ্যকে মেনে নিয়েছেন। তিলে তিলে গড়া সংসারকে মাত্র একটি ট্রাকে নিয়ে ফিরেছেন গ্রামে। দীর্ঘ লকডাউনের কারনে ভেঙ্গে পড়েছে দেশের অর্থব্যাবস্থা। বেড়েছে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা। এসব কারনে গ্রামের মানুষের মধ্যে বাড়ছে বিষণ্ণতা। করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থী তাদের বাবা মায়ের সাথে গ্রামে চলে এসেছে। ফলে গ্রামের স্কুলে শিক্ষার্থীদের চাপ বাড়ার একটি আশঙ্কা রয়েছে।
করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর শ্রেণীকক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় পাঠদান চালিয়ে নিতে দূরশিক্ষন পদ্ধতি চালু করেন সরকার। কিন্তু গ্রামে অনুকুল পরিবেশ না থাকায় বাড়িতেও এগুচ্ছেনা পড়ালেখা। দীর্ঘ ছুটি ও আর্থিক দুরবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ার ঝুকিও বেড়েছে বহুগুন। গ্রামে শিক্ষকদের অবস্থাও ভাল নয়। টানাপোড়েন বেড়েছে গ্রামের অনেক শিক্ষকদের সংসারেও। উপার্জন করার ব্যাবস্থা না থাকায় জীবন কাটছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাড়ছে বাল্যবিবাহ। গ্রামে নানান অজুহাতে বিদেশ ফেরত গৃহকর্তাদের সহমতে হচ্ছে বাল্য-বিবাহ। অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেবার কারণ হিসাবে বলছেন, চারদিকে বাড়ছে ধর্ষণ আর নেই সঠিক বিচার, তাই কন্যা সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে দিয়েছেন বিয়ে। আবার কেউ বলছেন আর্থিক দূরবস্থার কথা। নানান অজুহাতে গ্রামের শিক্ষার্থীরা শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়ের। আর এই বাল্যবিয়ের কারণে ভাঙছে হাজার কিশোরীর স্বপ্ন।
করোনার কারণে বাড়ছে শিশু-শ্রম, যেখানে রয়েছে কিশোর কিশোরী উভয়। গ্রামের বেশিরভাগ শিশুরা উপার্জনের পথে নেমেছে। কেউ কেউ নতুন কাজের সন্ধানে চলেছে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে। অনেকে ভাড়ায় নৌকা ও অটোরিকশা চালাচ্ছে। আবার কেউ করছে ইট ভাঙ্গার কাজ। জীবন বাচিয়ে রাখতে তারা নেমেছে জীবনসংগ্রামে।
করোনার কারণে সৃষ্ট লকডাউনের ফলে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। খেয়ে না খেয়ে কাটছে গ্রামের সাধারন মানুষের জীবন। করোনা মহামারী হয়তো একদিন কেটে যাবে, কিন্তু গ্রামের এই গরীর দুঃখী মানুষেরা করোনার এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে তো?
শুকরিয়া আকতার মুন্নি
বয়সঃ ১৮
কলেজঃ মেকানিকাল টেকনোলজি, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক
মন্তব্য করুন
দেশের নদী দখলদারদের উচ্ছেদ ও নদীর প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করে তালিকা প্রনয়ণের দাবিতে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছেন রাকিব হাসান (২৪)। রাকিব হাসান কক্সবাজারের মহেশখালীর শাপলাপুরের ষাইটমারা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে। "দুরত্ব ও সীমাবদ্ধতাকে পরাজিত কর" শিরোনামে গত ২০ এপ্রিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বাংলাবান্দা জিরোপয়েন্ট থেকে তিনি এ যাত্রা শুরু করেন। শেষ করবেন টেকনাফ জিরো পয়েন্টে গিয়ে। আগামী ১০ মে তিনি পর্যন নগরী কক্সবাজারে পৌঁছবেন। ১১ মে ভোর ৬ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে যাত্রা করবেন। ১২ মে অর্থাৎ ২৪ তম দিনে তিনি টেকনাফ গিয়ে যাত্রা বিরতি শেষ করবেন।
এই প্রতিবেদন লেখা অব্দি তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় উপজেলা ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া সীমান্তবর্তী আজিজ নগরে অবস্থান করছেন। পায়ে হেটে এখন পর্যন্ত সে পথ অতিক্রম করেন ৮৪৫ কিলোমিটার। ভোর ৬টা থেকে শুরু করে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত হাঁটেন তিনি। রাতে যেখানে হাঁটা বন্ধ হয়ে যেত, ওই এলাকায় পরিচিত কারও বাসায় পরিচিত না থাকলে হোটেলে, মসজিদে, পেট্রোল পাম্প এর রেস্ট হাউজে রাতযাপন করেন। দূরত্ব ভীতির কারনে কেউ সঙ্গী না হওয়ায় একাকী সে পদযাত্রা শুরু করে বলে জানায় তিনি। রাকিব আরও জানান, এটাই তার প্রথম দীর্ঘ একাকী পদযাত্রা। দুরত্ব ও দিনের হিসেব করে তিনি ২৪ দিনে তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন বলে আশা করেন। এবং তিনি একাই ১০০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাকিব জানান, তিনি একাকী পদযাত্রায় বিচলিত নন। বরং তিনি দেশের নদীর দখল ও নদীর বিলীন হয়ে যাওয়া নিয়ে বিচলিত। তিনি আরও জানান,, নদী আমাদের দেশের রক্তনালীর মত। দেশে প্রবাহমান সমস্ত নদী এখন শুকিয়ে গেছে। আগামি দশকের মধ্যে অনেক নদী হয়তো মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাবে। যদি এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নদী রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে দেশের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে। এতে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে। যা তাকে উদ্ধিগ্ন করেছে। তাই তিনি সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েই পদযাত্রার পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ঐক্যবদ্ধ হয়ে নদী রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানোর ও চেষ্টা করছেন তিনি।
পদযাত্রার সীমাবদ্ধতার প্রশ্নে রাকিব জানান, প্রথম কয়েকদিন হাটার পর পা ব্যথা ও ফুলে গেলেও এখন তা সুস্থ হয়ে গেছে। এবং তিনি মনোবলের উপর জোর দিচ্ছেন। এতে করে তিনি তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁচতে হলে মহাশয়, রক্ষা করুন জলাশয়। বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ,আলোর হবে পরিবেশ। দখল দূষণ বন্ধ করি/নদীর মতন জীবন গড়ি। এ স্লোগানকে সামনে রেখে নদী রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার আহবান সচেনতন মহলের প্রতি।
বাংলাদেচ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, নদী, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে রাকিবের একক আন্দোলন ও প্রতিবাদ অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যে বার্তা দিচ্ছেন এতে নদী ও পরিবেশ বাঁচাতে নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবেন।তার এই কাজে সবার সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে নদী রক্ষায় দেশবাসীকে সচেতন করেছেন তিনি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, নদী,পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনতে তাঁর এ পদ যাত্রা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ২৪ বছরের এ যুবক একজন শিক্ষার্থী। তাঁর দেশপ্রেম, অদম্য সাহস ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন স্মরণে রাখবে।
মন্তব্য করুন
(পর্ব-১)
স্বপ্নের নেপাল। হিমালয়ের কন্যা সে। সাদা সুউচ্চ পর্বত একে তুষারের শুভ্রতা দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখে গভীর আর মৌন সৌন্দর্যে। আর তাই যারা পাহাড় ভালোবাসেন, উচ্চতাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে হিমালয় হলো স্বর্গ
এক একটা পাহাড় জয় করা যেনো পাহাড়প্রেমীদের কাছেও স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নপূরণ করতে বাংলাদেশের থেকে যাত্রা করেন মোহাম্মদ তানভীর আলম। ছুয়ে আসেন ইয়ালা পিকের শিখর। ল্যাংটাং রিজিয়নের ইয়ালা পাহাড়ের উচ্চতা ৫৫২০ মিটার বা প্রায় ১৯ হাজার ফুট। সেই গল্প ও নেপাল পৌছানোর পর তার দিনলিপি নিয়ে লিখেছেন আমাদের কাছে। তার গল্প আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো দুইটি ভিন্ন পর্বে। আজকের পর্বে থাকছে সেই গল্পের একাংশ।
৩০.১০.২২, দিন ১
সকাল ৬ টায় বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার মাধ্যমে অভিযানের যাত্রা শুরু। কোন গাইড ছাড়া নিজের প্রচেষ্টায় নেপালের লাংটাং রিজিওনে ৫,৫০০ মিটার উচ্চতার ট্রেকিং চূড়া ইয়ালা পিক সামিট এই অভিযানের উদ্দেশ্য।
১২:৩০: ত্রিভূবন এয়ারপোর্ট, কাঠমান্ডু থেকে বের হয়ে হোটেল এর উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি নিলাম। হোটেল ফ্লোরিড আজকের অস্থায়ী ঠিকানা। হাতে সময় না থাকায় ঢাকা থেকেই হোটেল বুকিং করে এসেছিলাম।যদিও রূম পছন্দ হয়নি কিন্তু ওদের নীচতলায় যে রেষ্টুরেন্ট তার জন্য হোটেল এর পিছনে খোলা উঠানে বসার ব্যবস্থাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওদের রিসেপশনে ছোট্ট একটা লাইব্রেরী বা বইয়ের সংগ্রহ আছে। হোটেল এর লোকেশনটা অবশ্য অনেক ভালো, কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র থামেলের জেড স্ট্রীটে এটির অবস্থান। এবং হোটেল মালিক মিঃ দিপক খুবই আন্তরিক। বাজেট হোটেল হিসেবে হোটেলটি ভালো।
সন্ধ্যায় কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করে ও স্লিপিং ব্যাগ ভাড়া নিয়ে রূমে ফিরে ব্যাকপ্যাক গোছানো শুরু করলাম। কালকে সকালে বাস ধরতে হবে।
৩১.১০.২২, ২য় দিন
গন্তব্য সায়াব্রুবেসি