কোভিড-১৯-এর কারণে বন্ধ হয়ে আছে বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্কুল। শিশুরা বাড়িতে নিরাপদে আছে এমনটি ভাবলেও আদতে তাদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। স্কুলের সামাজিকতা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা, ক্লাসে বসে শিক্ষাগ্রহণ সবকিছু থেকেই তারা বঞ্চিত। মহামারী শেষে স্কুল খুললেও শিশুরা কি পারবে আগের মতো সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে?
দীর্ঘদিন বন্ধ স্কুল
এই বৈশ্বিক মহামারীর মাঝে বড় হয়ে আজকের শিশু-কিশোররা কি একবারের জন্য হলেও নিজেদের ‘হারানো প্রজন্ম’ বলে ভাববে না? এই যে এতগুলো দিন কেটে যাচ্ছে এমনি এমনি, বলার মতো বড় কোনো কাজ নেই, স্কুল বলতে অনেকের কাছে এখন অনলাইন ক্লাস, বাইরে খেলাধুলা একদম বন্ধ। এই সময়গুলো কি তাদের তাড়িয়ে ফিরবে না কখনো? কভিড-১৯ এ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের ওপর মানসিক প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। ইউনেস্কোর মতে, ১৯০টি দেশের অন্তত ১৬০ কোটি শিশুর শিক্ষায় প্রভাব ফেলেছে কভিড-১৯। অর্থাৎ না হলেও ১০০ ভাগের মধ্যে ৯০ ভাগ শিশুর শিক্ষায় গুরুতর প্রভাব পড়েছে। এখনো নিশ্চিত নয়, শিশুদের স্কুল কবে খুলবে, কবে শিক্ষাব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, স্কুল খুললেও অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন কি না। স্কুল বন্ধ হলেও যতদিন খোলা ছিল ততদিনে ভাইরাস কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। করোনাভাইরাস উহানে প্রথম দেখা দেয় এ তথ্য প্রকাশের ৫ মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেলেও তাদের ভাইরাস নিয়ে সঠিক তথ্য প্রদান এবং রোগপ্রতিরোধে সঠিক ভূমিকা এখনো ঘোলাটে। নানা তথ্য-উপাত্ত যতই ঘোলাটে বা প্রশ্নবিদ্ধ হোক, এখন চিন্তা শিশুদের নিয়ে। এই বন্ধ সময়ে তাদের মানসিক বিকাশে কতটা খারাপ প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে ভাবাটাই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি।
বুদ্ধিমত্তা বিকাশে বাধা
করোনাকালে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধে, সামাজিক পরিবেশ থেকে একদম দূরে থাকায় শিশুদের ওপর কেমন প্রভাব পড়ছে সেটি হিসাবের আগে ঠিক এমনই আরেকটি বিষয় নিয়ে জানা যাক। ২০০৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক ডেভ মার্কোটি মেরিল্যান্ডের তৃতীয়, পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার নম্বর দেখছিলেন। নম্বর, স্কুল বন্ধের সময়, শিশুদের মনে রাখার ক্ষমতা সবকিছু মিলিয়ে তিনি খেয়াল করলেন স্কুল বন্ধের প্রভাবগুলো সর্বকনিষ্ঠ শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি ছিল। প্রতিটি হারানো দিনের কারণে ০.৫৭ শতাংশ শিশু গণিতে এবং বই দেখে রিডিং পড়ার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত নম্বরের চেয়ে কম নম্বর পেয়েছিল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে স্কুলটি ৫দিন বন্ধ থাকে। এতেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। আগের বারের চেয়ে সামগ্রিক পাসের ক্ষেত্রে সে সময় ৩ শতাংশ পাসের সংখ্যা হ্রাস পায় অর্থাৎ প্রতি ৩০ জনের শ্রেণিতে অন্তত একজন শিশুর এই সমস্যা হয়। সংখ্যাটি দেখে আপাতদৃষ্টিতে হয়তো খুব বেশি মনে হচ্ছে না। কিন্তু সেই স্কুলের জন্য এই সংখ্যাটিই ছিল অনেক বেশি। ঠিক একই ঘটনা ঘটতে পারে এই মহামারীতে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা ইতিমধ্যে যা শিখেছিল তা ভুলতে শুরু করবে। যদি সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ স্কুল না খোলে, তবে প্রায় ২০ সপ্তাহ হয়ে যাবে শিশুদের স্কুলে না যাওয়ার সময়। শিক্ষা থেকে দূরে থাকার জন্য এই সময়টা অনেক বেশি। এ থেকে শিশুদের কতটুকু ক্ষতি হতে পারে তা হয়তো আমরা কোনো ডেটা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানতে পারব না। দীর্ঘ সময়ের এই বিরতি শিশুদের বুদ্ধিমত্তা এবং জ্ঞান বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এই সমস্যার সমাধানে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। অনেকেই ভাবছেন হয়তো শিশুদের এতে কিছুটা হলেও লেখাপড়ার ঘাটতি মিটবে। তবে প্রকৃত শিক্ষার জন্য এই পদ্ধতি খুব বেশি কার্যকর নয়। মার্কোটি বলেন, ‘সত্যিকারের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলার মাধ্যমে লেখাপড়ায় মনোযোগ দেওয়া যত সহজ, এক রুমে বন্দি হয়ে কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকিয়ে সেই একই বিষয়ে দক্ষতা আনা ঠিক ততটাই কঠিন।’
স্কুলে শুধু লেখাপড়াই হয় তা নয়, শিশুরা একে অপরকে দেখেও নতুন কিছু শেখে। স্কুলে টিফিন ব্রেকে একে অপরের সঙ্গে খাবার শেয়ার করে খাওয়া, গল্প করা এই বিষয়গুলো এখন একদম বন্ধ। এছাড়াও নাচ, গানের ক্লাস, লাইব্রেরিতে পড়ালেখা, মিউজিয়াম বা ক্যাম্পে যাওয়ার মতো মজার বিষয়গুলো থেকেও এখন তারা অনেক দূরে। সাধারণ জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর স্কুল থেকে যে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো তার সবই এখন স্থবির হয়ে আছে। শিশুদের ওপর এই বিষয়টিও গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নামঃ সালমা আকতার
বয়সঃ ১৭
কলেজঃ ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তারুন্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত বাংলাদেশে।সে লক্ষ্যে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কাঠামোগত উন্নয়নের একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ কে দেখলে বুঝা যায় দেশে কি উন্নয়ন হয়েছে।এটি কোনো যাদু নয়, এটা হয়েছে শেখ হাসিনার যাদুকরি নেতৃত্বের কারণে।
মন্ত্রী আজ শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে জেসিআই টয়োপ এওয়ার্ড ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
২য় বারের মতো জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেসিআই বাংলাদেশের এর ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট নিয়াজ মোরশেদ এলিট। অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কানাডা আওয়ামীলীগের সভাপতি সরওয়ার হাসান,কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপিসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এওয়ার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে ৮ টি ক্যাটাগরিতে ১০ জন তরুন তরুনীকে বিশেষ অর্জনের জন্যে এওয়ার্ড দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন
বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কারনে শিশুশ্রম অনেকটাই নিন্মমখি।কিন্তু করোনা কালিন পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর। এই শিশুশ্রম আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে শ্রমে থাকা শিশুদের হয়ত আরও বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে বা তাদের আরও খারাপ পরিবেশে কাজ করতে হতে পারে। তাদের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে হয়ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকির কারণ হচ্ছে । মহামারী পারিবারিক আয়ে বিপর্যয় নিয়ে আসায় কোনো সহায়তা না পেয়ে অনেকেই শিশু শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হবে। সংকটের সময়ে সামাজিক সুরক্ষা অপরিহার্য, যেহেতু তা সবচেয়ে বিপর্যস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়। শিশু শ্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রশমনে শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার, শ্রমবাজার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও শ্রম অধিকার বিষয়ে সমন্বিতভাবে বৃহত্তর পরিসরে নীতিমালা প্রণয়ন বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
কোভিড-১৯ এর ফলে দারিদ্র্য বেড়ে গিয়ে শিশু শ্রম বাড়াবে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য পরিবারগুলো সম্ভাব্য সকল্ভাবে চেষ্টা করবে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে,নির্দিষ্ট কিছু দেশে দারিদ্র্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধিতে শিশু শ্রম অন্তত দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে।
সংকটের সময় অনেক পরিবারই টিকে থাকার কৌশল হিসেবে শিশু শ্রমকে বেছে নেয়।
“দারিদ্র্য বৃদ্ধি, স্কুল বন্ধ ও সামাজিক সেবা প্রাপ্তি কমতে থাকায় অধিক সংখ্যায় শিশুদের কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরবর্তী বিশ্বকে আমরা নতুনভাবে দেখতে চাই বলে আমাদের নিশ্চিত করা দরকার যে, শিশু ও তাদের পরিবারগুলো ভবিষ্যতে একই ধরনের ধাক্কা সামলে নিতে বিকল্প পথ খুঁজে পায়। মানসম্পন্ন শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা সেবাসহ আরও ভালো অর্থনৈতিক সুযোগ ইতিবাচক এই পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।
অর্থনৈতিক মন্দায় অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে কর্মরত ও অভিবাসী শ্রমিকদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী ও বেকারত্ব বৃদ্ধি, জীবনমানের পতন, স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতিসহ অন্যান্য চাপ সৃষ্টি হবে। বর্তমান সংকটের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু শ্রম হ্রাসে দারুন কাজ করে আসছিল।
চলমান মহামারীর কারণে এই অর্জন যেন নস্যাৎ না হয় তা নিশ্চিত করতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের আরও বেশি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সময়োচিত এই প্রতিবেদনটি কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রভাবের ওপর আলো ফেলেছে এবং সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সামনে বর্তমান সংকট মোকাবেলার সর্বোত্তম পথ খুঁজে পেতে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে অসহায় শিশুদের জীবন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতের ওপর কোভিড-১৯ মহামারী বিশেষ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্কুল বন্ধ ও পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অনেক শিশুর জন্য শ্রমে যুক্ত হওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। “গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকে তাদের আবার স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা ততটাই কমে যায়। আমাদের এখন শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং মহামারীর পুরো সময়জুড়েই তা অব্যাহত রাখা উচিত,
মহামারীর এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু শ্রম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ ধারাবাহিকভাবে আসছে। বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি যখন পুনরায় ক্লাস শুরু হবে তখন অনেক বাবা-মায়ের হয়ত তাদের সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে না।
ফলশ্রুতিতে আরও অনেক শিশু বঞ্চনামূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যোগ দিতে বাধ্য হবে। লিঙ্গ বৈষম্য আরও তীব্র হতে পারে। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের কৃষি ও গৃহকর্মে বঞ্চনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কোভিড-১৯ ও শিশু শ্রম: সংকটের সময়, পদক্ষেপের সময়’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে এপর্যন্ত শিশু শ্রম ৯ কোটি ৪০ লাখ কমেছে, কিন্তু এই অর্জন এখন ঝুঁকির মুখে।
ইভান খান হোসাইন
বয়সঃ ১৬
কলেজঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাইসার নিলুফার কলেজ
মন্তব্য করুন