ইনসাইড পলিটিক্স

আইভী বনাম তৈমুর: কার পাল্লা ভারী?


প্রকাশ: 08/01/2022


Thumbnail

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের উত্তাপ জোরেশোরে শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কর্মী-সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণায় উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে গোটা নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি, সবখানিই শোভা পাচ্ছে এই দুই প্রার্থীর পোস্টার। মেয়র পদে আরও পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এই দুই প্রার্থীকে ঘিরেই নাসিক নির্বাচন আবর্তিত হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নারয়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে নারয়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, অন্যদিকে মেয়র পদপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান এবং ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দ্বন্দ্বের ফলে শামীম ওসমানের সমর্থকরা আইভীর বিপরীতে এবং তৈমুরের পক্ষে কাজ করবে। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত সমর্থিতরা শামীম ওসমান বিরোধী। ফলে তাদের একাংশের সমর্থন আইভীর পক্ষে রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আইভী রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান এবং তিনি জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একবারও মেয়র পদে পরাজিত হননি তিনি। একজন গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর কোনো সন্দেহ নেই। ফলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিখ্যাত নারায়ণগঞ্জে যদি আওয়ামী লীগের সবাই একাট্টা হয়ে নির্বাচন করে, তাহলে সেলিনা হায়াত আইভীর পরাজয়ের কোন কারণ নেই। তবে এ ‘যদি’ কে আরও সন্দেহযুক্ত, আরও পাকাপোক্ত করছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের আরেক সিংহপুরুষ শামীম ওসমান ও তার নীরবতা। একজন সাংসদ হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি অংশ নিতে পারছেন না, তা বেধগম্য। কিন্তু তার কর্মী-সমর্থকদের নীরবতা ও প্রচার-প্রচারণায় অংশ না নেওয়া, স্পষ্টতই শামীম-আইভীর পুরনো লড়াই জিইয়ে রাখার বার্তা দেয়। বিশেষ করে শামীম ওসমানের নিকটতম সহযোগী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের মহাসচিব খোকন সাহা, সহ সভাপতি চন্দন শীল ও যুগ্ম সচিব শাহ নিজাম আইভির পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিলেও তারা সেভাবে সক্রিয় নন বলে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও আইভির মধ্যের দ্বন্দ্বের কথা 'ওপেন সিক্রেট' ছাড়া আর কিছুই নয়। এই দ্বন্দ্ব দলীয় নয়, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বলেই মনে করেন অনেকে। শোনা যাচ্ছে, তারা গোপনে তৈমূরকে সমর্থন দিচ্ছেন। আইভীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের একাংশের এই না থাকার নেতিবাচক প্রভাব ব্যালটে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

তবে নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচনকে খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নৌকা প্রতীকপ্রাপ্ত আইভীকে জেতাতে আদা জল খেয়ে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। বিশেষ করে প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিমসহ হেভিওয়েট নেতারা মাঠে নেমে কাজ করছেন। জাহাঙ্গীর কবীর নানক প্রায় প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছেন। সব স্তরের নেতাকর্মীদের সাথে মিটিং করছেন। অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে তার প্রচেষ্টাও ইতোমধ্যে সবার নজর কেড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি অবশ্য বলছেন যে, নেত্রী তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি তা পালনের চেষ্টা করছেন মাত্র।  

বিপরীতে তৈমুর আলম বিএনপি থেকে অব্যাহতি পেলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতারা তাকে ঠিকই সমর্থন করছেন। প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তবে যখন তিনি প্রচারণা শুরু করেন, তখন দলের বেশ কিছু নেতা পাশে থাকলেও তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর অনেকেই সরে গেছেন। প্রচারণার প্রথম দিকে তৈমুরের সাথে ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন রোজেল ও আবদুল হাই রাজু। কিন্তু এখন জেলা বিএনপির মহাসচিব এটিএম কামালসহ মাত্র অল্প কয়েকজন তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনও তৈমূরের প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত নন। জানা গেছে, তার হাতে শহরের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় একটি শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে। তবে ছেলে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী গোলাম সাদরিলের জন্য ভোট চাইছেন গিয়াস উদ্দীন। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সাদরিল নিজেও আইভির জন্য প্রচারণায় ব্যস্ত।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন এখন সরকারের প্রতি আস্থার গণভোট হিসেবে পর্যবসিত হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, প্রশাসন বিরোধী দলগুলোর প্রচার-প্রচারণায় কোনো ধরণের বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করছে না। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাও নিজ নিজ প্রচারণায় ব্যতিব্যাস্ত। তারাও কোনো বিরোধীদের কর্মসূচিতে কোনো ধরণের বাধা দিচ্ছে না। প্রচারণার মতো নির্বাচনের দিনটি গেলেই একটি অবাধ, ‍সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নারায়ণগঞ্জবাসীকে উপহার দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে তৈমুর ও আইভীর এ লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন, এটি এখন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রধান প্রশ্ন। আর এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আরও কিছুদিন পরে, ১৬ জানুয়ারি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭