ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনের পরে নারায়ণগঞ্জে কি হবে?


প্রকাশ: 16/01/2022


Thumbnail

উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ভোটগ্রহণ একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। হাইভোল্টেজ এ নির্বাচনে কোনো ধরণের অঘটন না ঘটলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয় সুনিশ্চিত। অন্যদিকে, কোন অঘটনের মাধ্যমে তৈমুর আলম খন্দকার যদি জিতে যান, তাহলে সেটি হবে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে গেছে শামীম ওসমানের সংবাদ সম্মেলনের পর। যদিও দুই প্রার্থীই দাবি করেছেন, ভোট সুষ্ঠ হলে ফলাফল তাদের পক্ষেই যাবে। তবে মেয়র পদে যিনিই নির্বাচিত হোক না নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শামীম ওসমান আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের পরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে প্রকৃতপক্ষে কি হবে তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে চলছে আলাপ-আলোচনা।

নির্বাচনের প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির সাবেক নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। প্রার্থী না হয়েও নির্বাচনী আলাপ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখনো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান। দুই প্রধান প্রার্থী ও শামীম ওসমানের ছায়া-প্রচ্ছায়া নিয়ে যত আলোচনা, অন্য প্রার্থীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর তেমন আগ্রহ নেই। অনেকেরই ধারণা, নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জিতলে প্রথম যে ঘটনাটি ঘটবে, তা হলো নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শামীম ওসমানের প্রভাব নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই নারায়ণঞ্জের রাজনীতিতে শামীম ওসমানের প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জের এসপির সাথে গণ্ডগোল করে শেষ পর্যন্ত নিজের শৌর্য-বীর্য ধরে রাখতে পারেননি শামীম ওসমান। ফলে এবারের নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয়ী হলে শামীম ওসমান আরও মিইয়ে যাবেন এবং আইভীর বিজয় শামীম ওসমানের নারায়ণগঞ্জ রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঢুকানো হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আবার ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী যদি কোনো অঘটনে পরাজয় বরণ করেন, তাহলেও ক্ষতি শামীম ওসমানেরই হবে। আইভী হেরে গেলে দল আওয়ামী লীগের খড়গের মুখোমুখি হতে হবে শামীম ওসমানকে। কেননা কেন্দ্র জানে যে, শামীম ওসমানের বিরোধীতা ছাড়া আইভী পরাজিত হতে পারে না। ফলে এক প্রকারের শাঁখের করাতের ওপরই অবস্থান করছেন শামীম ওসমান। নির্বাচনে আইভীর জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, ক্ষতিগ্রস্ত হবে একজনই। আর ওই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিটি যে শামীম ওসমান হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। ফলে এই নির্বাচনের পর শামীম ওসমানের কর্তৃত্বের অবসান ঘটবে নারায়ণগঞ্জে, সেটি হলফ করেই বলা যায়।

অন্যদিকে নির্বাচনে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন তৈমুর আলম খন্দকার। তার হারানোর কিছু নেই। জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন তৈমুর আলম খন্দকার অনেক কিছুই অর্জন করতে পারবেন এই নির্বাচন থেকে। যদি নারায়ণগঞ্জে নাটকীয়ভাবে তৈমুর আলম খন্দকার জিতে যায়, তাহলে সে একসাথে সব পাবে। মেয়র হতে পারবে। দল বিএনপিও তাকে দেওয়া অব্যাহতিদেশ তুলে নেবে। তার বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে বিএনপির নেতারাই বলছেন যে, নির্বাচনের পর এই অব্যাহতি তুলে নেওয়া হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আর তৈমুর যদি হেরে যান, তাহলেও তার তেমন কোনো ক্ষতি নেই। হারলেও শতধা বিভক্ত নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তার একক প্রভাব বলয় সৃষ্টি হবে। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ছিলো। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা তৈমুরের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির একক নেতা হিসেবে নারায়ণগঞ্জে আবির্ভূত হবেন, এটা নিশ্চিত। এছাড়াও এই নির্বাচনের মাধ্যমে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপিকে সুসংগঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান এবং আইভীর জনপ্রিয়তার দাপটে এতদিন ম্লান ছিলো বিএনপি এবং সাংগঠনিক ভাবে খুবই দুর্বল অবস্থায় চলে গিয়েছিল। এই সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং এটি বিএনপিকে ভবিষ্যতে সুযোগ করে দিবে। ফলে এই নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন তৈমুর আলম খন্দকার অনেক কিছুই পাবেন। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে কি জোটছে, তা জানতে শুধু কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭