ইনসাইড বাংলাদেশ

অনেক প্রশ্নের জবাব দেয়া এক নির্বাচন


প্রকাশ: 16/01/2022


Thumbnail

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলো। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ার কারণে আটটার আগেই নির্বাচনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এ নির্বাচনের ফলাফলে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে সেলিনা হায়াৎ আইভী তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা ছিল সারাদেশব্যপী। বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানারকম সমালোচনার মুখে এই নির্বাচন ছিল বাংলাদেশে ভোটের অধিকারের একটা অগ্নিপরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় নির্বাচন জয়যুক্ত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনের ফলাফল যে ঘটনাগুলোকে সামনে এনেছে তার মধ্যে রয়েছে:

১. দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে অজনপ্রিয় হয় না: সেলিনা হায়াৎ আইভী কার্যত ২০০৩ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বে। নারায়ণগঞ্জের পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ যখন সিটি কর্পোরেশন হয় তখন প্রথমবার এবং দ্বিতীয়বার তিনি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। অর্থাৎ টানা ১৯ বছর তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে নানা রকম দোষ-ত্রুটি বের হয়, দুর্নীতির অভিযোগ আসে এবং অনেক ক্ষেত্রেই একটি প্রতিপক্ষ তৈরি হয়। কিন্তু সেলিনা হায়াৎ আইভী দীর্ঘ উনিশ বছর ক্ষমতায় থেকে প্রমাণ করলেন জনপ্রিয়। এটি বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় আছে। টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ যদি দুর্নীতি মুক্ত থাকে, সঠিকভাবে কাজ করে এবং জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে আওয়ামী লীগও যে অজনপ্রিয় হবে না, এই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তার একটি বড় প্রমাণ।

২. ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বড় শক্তি: আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ হলো আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ যেন এক টুকরো বাংলাদেশ। এখানে একদিকে আওয়ামী লীগের নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। এ দুজনের বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য একটা বিষফোড়া হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা জাহাঙ্গীর কবীর নানকের নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা করেন এবং তারা শামীম ওসমানকে আইভীর বিরোধিতা থেকে নিবৃত্ত করেন। শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে আইভীর পক্ষে সমর্থন জানাতে বাধ্য হন এবং আজ ভোটের পরে তিনি সেখানে তিনি বলেন যে, নৌকার পক্ষেই তিনি ভোট দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে আপাত যে বিরোধ, সেই বিরোধের অবসান ঘটেছে। শুধু অবসানই নয়, এই নির্বাচনী ফলাফল প্রমাণ করলো যদি আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা অত্যন্ত কঠিন।

৩. বিএনপির ভ্রান্ত নীতি: এই নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। বরং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী না হয়ে যদি তিনি বিএনপির প্রার্থী হতে পারতেন তাহলে হয়তো এই নির্বাচনে তিনি আরো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে নারায়ণগঞ্জের বিএনপি আরো সংগঠিত হতো। বিএনপি যে ভুলের বৃত্তে আবর্ত, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন তার আরেকটি বড় প্রমাণ। এই নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকার দেখিয়ে দিলেন যে, নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সকলে যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে সকলেই নির্বাচনে কারচুপি বা অন্যান্য ঘটনাগুলো বন্ধ করা যায়। তৈমুর আলম খন্দকার সেই অর্থে হেরেও এখানে বিজয়ী।

৪. সুন্দর প্রচারণা হলেই মানুষ ভোটকেন্দ্রে আসে: ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের যে ভোট বিমুখতা সেই ভোট বিমুখতার বিপরীতে নারায়ণগঞ্জের ভোট ছিলো উৎসবমুখর। ১৭ দিন ধরে এখানে এক উৎসবমুখর প্রচারণা হয়েছে। এর মাধ্যমে আরেকটি জিনিস হলো যে, মানুষ যদি তার পছন্দের প্রার্থী পায় এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি নিরপেক্ষ থাকে তাহলে মানুষ ভোট উৎসব করতে দ্বিধা করে না।

অনেক প্রশ্নের উত্তর দিলো নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এ নির্বাচন প্রমাণ করল যে, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭