ইনসাইড পলিটিক্স

ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন: বর্ণহীন সংলাপকে রঙ্গিন করলো আওয়ামী লীগ?


প্রকাশ: 18/01/2022


Thumbnail

গত এক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন্ডিং টপিকগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল 'রাষ্ট্রপতির সংলাপ'। নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৩২টি দলকে বঙ্গভবন সংলাপের আমন্ত্রণ জানায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির ডাকা  এ সংলাপকে কয়েকটি রাজনৈতিক দল লোক দেখানোর সংলাপ বললেও শেষ মূহুর্তে আওয়ামী লীগের ক্যারিশমেটিক সিদ্ধান্তে ইউটার্ন নিয়েছে সব দলের রাজনৈতিক সমীকরণ। বিশেষ করে সব রাজনৈতিক দলের চাওয়া ও সুশীল সমাজের ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি গতকাল সোমবার মন্ত্রীপরিষদে পাস হয়েছে এবং  সে আইনে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। এমতাবস্থায় সার্চ কমিটি ও নির্বাচক কমিশনে কে কে থাকবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

বলা হয়ে থাকে যে, কামান না দাগানোর ১০১টি কারণ থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু বারুদ না থাকলে বাকি একশটি কারণ জানারই দরকার নেই৷ তেমনি একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন ৷ সেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গত ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টিকে দিয়ে শুরু হওয়া রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ গতকাল শেষ হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনার মাধ্যমে। এর আগে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংলাপ বর্জন করে। প্রথম দিকে অনেকেরই মনে হচ্ছিল সংলাপ বুঝি জলে যাচ্ছে। দিন চারেক আগেও মনে হচ্ছিল রাজনীতির গন্তব্য অনিশ্চিত। কিন্তু এক সময়ে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ করা আন্দালিব রহমান পার্থের দল বিজেপির সংলাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্জন অর্জনে ইউটার্ন নেয়। আসলে রাজনীতির কৌশল কখন কোন পথে হাঁটতে শুরু করে তা বলতে পারা খুবই মুশকিল। বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় না আসলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টিসহ বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি রাষ্ট্রপতির আহ্বানে বঙ্গভবনে নিজেদের কথা বলে যায়। 

সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসি শক্তিশালীকরণসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি আইন প্রয়োজন বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ এবং সে আইন প্রণয়নের খসড়া ইতোমধ্যে মন্ত্রীপরিষদে পাসও হয়েছে। খসড়ায় যেহেতু বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, কাজেই সংলাপের পরবর্তী ধাপ সার্চ কমিটি হবে এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সেই নির্বাচন কমিশন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলেই সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো আশ্বস্ত করেছেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছে না বিএনপিসহ কয়েকটি দল। এরকম পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, রাষ্ট্রপতি যদি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেন, তাহলে প্রথমেই হোঁচট খাবে বিএনপিসহ সংলাপ বর্জনকারী দলগুলো। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা গেলে তা সব মহলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তবে বিএনপির হুমকি-ধামকিও খুব একটা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের নেতারা। এমনকি বিএনপিসহ সংলাপ বর্জনকারী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলেও শেষ পর্যন্ত সেটি নির্বাচনের পথে কোন বাঁধা হবে না বলেও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল মহল মনে করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভিত্তিকই হবে। ইতোমধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে গঠিত নতুন গণঅধিকার পরিষদ আগামী  নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দলও নির্বাচনে আসবে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির ভেতরেও গৃহযুদ্ধ চলছে। দলটির একটি অংশ বিশেষ করে তারেক পন্থীরা নির্বাচনে আসতে না চাইলেও তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের পক্ষে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি রাজনৈতিক সংলাপ নিঃসন্দেহে অর্থবহ উচিত। রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ এবং তিনি জাতির অভিভাবক। তিনি যখন এ ধরনের বৈঠক করেন তখন সেই বৈঠকটি অবশ্য অর্থপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে এবার বিএনপিসহ কয়েকটি দল সংলাপে যায়নি। যতই ভিন্নমত পোষণ করেন না কেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংলাপের বিকল্প কিছুই নেই। আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সংকট নিরসনের ওষুধ লুকায়িত আছে। ফলে যারা বর্জন করেছে তাদের বর্জন করাটি উচিত হয়নি। আবার উল্টো দিকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত যেসমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এবারের সংলাপটি হয়েছে, সেসমস্ত দলগুলো বাংলাদেশের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াতে কতটুকু অবদান রাখতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে বিশ্লেষকদের।
 
বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন পছন্দ করেন এবং ভোটের মাধ্যমে মতপ্রকাশ করার এই সংস্কৃতি দেশের গণতন্ত্রের জন্য আশাবাদের একটি জায়গা। আর এই নির্বাচন কার্য পরিচালনা করা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু বিগত কিছু নির্বাচনের কারণে জনমনে নানা আশঙ্কা আর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বর্তমান ইসির গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে খোদ ইসির ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা এখন রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে আছি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন অত্যাবশকীয়। ফলে নির্বাচন কমিশন আইন মোতাবেক আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। এখন পর্যন্ত যাই হোক না কেন, এগুলোকে কোনো বিষয় বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। বরঞ্চ তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনে কারা বসছে, সেটিই হলো আসল বিষয়। ইসি যদি নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করে এবং তারা যদি ব্যক্তিত্ববান হন, তাহলে কে বর্জন করলো, কে আসলে সেটি ম্যাটার করবে না এবং শেষ পর্যন্ত সব দলই ইসিকে গ্রহণ করবে। এমতাবস্থায় একটি নিরপেক্ষ ইসি গঠনই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭