ইনসাইড বাংলাদেশ

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের গোলটেবিল আলোচনা চলছে


প্রকাশ: 16/02/2022


Thumbnail

"জাতির পিতার স্বাস্থ্য ভাবনা এবং রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্যোগ" শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা চলছে। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টায় বিএমআরসি ভবনে এই গোলটেবিল আলোচনায় শুরু হয়।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা ও কবিতা পাঠ করেন শাহানা পারভীন, ন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটর, কমিটিউনিটি গ্রুপ এন্ড কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ, কমিটিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট।

মূল প্রবন্ধে শাহানা পারভীন বলেন, প্রতিটি বাঙালীর নয়নের আলো- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি , স্মরণ করছি বঙ্গমাতা সহ ১৫ই আগষ্ট নিশুতি রাতের অন্ধকারে যারা শহীদ হয়েছেন, স্মরণ করছি সেই ৩০ লক্ষ শহীদদের, ৩ লক্ষ মা-বোনদের, জাতীয় ৪ নেতাদের আর নাম না জানা সকল মুক্তিযাদ্ধাদের।

“জাতির পিতার স্বাস্থ্য ভাবনা এবং রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্যোগ” শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সঞ্চালক অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোদাচ্ছেরআলী সহ এই রুমে অবস্থানরত সম্মানিত সকলকেই আসসালামু আলাইকুম। আদাব ও নমস্কার। বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ মুজিব - মুজিব মানেই বাংলাদেশ। বাংলার মানুষের সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছেন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। তিনি স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকারের অংশ হিসেবে সংযোজন করেছিলেন। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি শক্ত নীতিমালা, পরিকল্পনা অবকাঠামো তৈরী করেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল সুখী সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ার। পিতার সেই স্বপ্ন নিয়ে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শুরুতে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠির জন্য একটি করে, দেশব্যাপি মোট ১৮ হাজার কমিউনিটিক্লিনিক স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা চরাই উৎরাই পেরিয়ে সারা দেশে আজ প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চলছে অনেক বেশি সফলতার সাথে। এ বছর নাগাদ আরও ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করতে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গ্রামে, গঞ্জে, হাওড়ে, বাওড়ে, প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিয়েছেন সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনা। এখানেই বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য ভাবনার সফল প্রতিফলনের এক মখমলি চাদর বিছিয়েছেন জননেত্রীশেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে “কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করেছেন যাতে ২০০১ এর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মতো আর কেউ কোনদিন জনগণের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে না পারে। বর্তমানে ৮ শতাংশ জমিতে চারকক্ষ বিশিষ্ট নতুন নকশার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ শুরু হয়েছে ।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনা কালীন সময়ে এক দিনের জন্যও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ ছিলনা। করোনা কালীন সময়ে সেবা দিতে গিয়ে আমরা কয়েকজন সিএইচসিপি কে হারিয়েছি, তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে তৎপর, কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিফলন ভীষণভাবে উল্লেখযোগ্য সেখানে ১৪ হাজার সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এর মধ্যে ৫৪% নারী এবং সিজি ও সিএসজি গ্রুপের ১৩-১৭ জন সদস্যের মধ্যে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশই নারী। সেবাগ্রহীতাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু, শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিকের উল্লেখযোগ্য সেবা সমূহ। সমূহের মধ্যে - মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিশুরোগের সমন্বিত চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরামর্শ প্রদান ইপিআই এবং এআরআই সেবা প্রদান, সদ্য প্রসূতি মা, মারাত্মক পুষ্টিহীনতা ও দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া, হামে আক্রান্ত শিশুদের ভিটামিন এ ক্যাপসুল প্রদান, সকল সিসিতেই মহিলা ও শিশুদের জন্য টিকা প্রদান। অপুষ্টি চিহ্নিত করে পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে শিশুদের গ্রোথমনিটরিং এন্ড প্রোমোশন কার্ড ব্যবহার করে পুষ্টি পরিমাপ করা, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের শনাক্ত ও রেফার করা, পুষ্টি শিক্ষা ও সম্পূরক অনুপুষ্টি প্রদান করা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নিয়ে ৮০%-৯৪% সেবা গ্রহীতা সন্তুষ্ট। থানা পর্যায়ে স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিটি নাগরিকের জন্য হেলথ আইডি প্রদানের কাজ শুরু হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আইডি প্রদান দেশব্যাপি চলছে, চলবে।

শাহানা পারভীন আরও বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ প্রদান করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা প্রদানের ফলে মা ও শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে, বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু ও জীবনযাত্রার মান। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আজ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রশংসিত। আওয়ামীলীগ সরকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন। বিদ্যুৎ থাকে সারাক্ষণ, পদ্মা সেতু, মহাকাশ বিজয় এসব দৃশ্যমান। যা অদৃশ্যমান সেগুলোও সরকার প্রধান শেখ হাসিনার অবদান। মানুষের গড় আয়ু এখন প্রায় ৭৩ বছর। বিপুল এক জনগোষ্ঠি, ক্ষুদ্র একভূমি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বড় বড় অর্জন স্বাস্থ্যখাত বয়ে এনেছে। পেয়েছে ৩টি জাতিসংঘ পুরষ্কার সহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার এরমধ্যে - এমডিজি, সাউথ সাউথ, ভ্যাকসিন হিরো উল্লেখযোগ্য। ঔষধ শিল্পের উন্নয়ন গর্ব করার মতো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র সহ ১৪৫ টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে বাংলাদেশে তৈরী বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ।

তিনি বলেন, এই সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি জনগণ, আর কমিউনিটি ক্লিনিক হচ্ছে জনগণ ও সরকারের যৌথ অংশীদারিত্বের উৎকৃষ্ট উদাহরণ যেখানে জনগনের ভূমিকাই মূখ্য। কমিউনিটি ক্লিনিকের জমি দিয়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, পরিচালনা করছে কমিউনিটি গ্রুপ, সাপোর্ট গ্রুপ, পৃষ্ঠপোষকতা করছেন জনপ্রতিনিধিগণ। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক এর একটি করে কমিউনিটি গ্রুপ আছে এবং তার আওতায় আরও ৩টি করে কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ আছে এই সাপোর্ট গ্রুপগুলো অনেক বেশী গুরুত্ব বহন করে, প্রতি মাসে ট্রেনিং এর মাধ্যমে সাপোর্ট গ্রুপগুলোকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করার জন্য আমরা তৎপর। তাদেরই সহযোগিতায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথে ঐ অঞ্চলের মানুষের সম্পৃক্তা ও দায়িত্বের পরিধি প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। তারা সেবা গ্রহীতাদের বুঝাতে ও শিখাতে চেষ্টা করছে, ভূমিখানি তাদের, তারাই পাহারা দিবে, শরীরখানি নিজের, যতœটুকু নিজেই করবে। মানুষ যখন নিজের করে কিছু ভাবতে পারে তখনই কাজটি শতভাগ সাফল্য বয়ে আনে, তাদের মাধ্যমেই সোশ্যাল ম্যাপ, রিসোর্স ম্যাপ ও বাৎসরিক কাজের যে প্ল্যান সে সব গঠন করা হয়। 

শাহানা পারভীন বলেন, বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে (যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ক্যান্সার ইত্যাদি) এ সব স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সঠিক ও বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপকে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। সচেতনতাই মানুষের মাঝে এক প্রকার ঔষধের মতো কাজ করে, তাই সচেতনতা বৃদ্ধি করা সাপোর্ট গ্রুপের মূল চাবিকাঠি এবং কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ এর নিয়মিত সভার মাধ্যমে বিভিন্ন অসামাজিক অস্বাস্থ্যকর কার্য যেমন ধুমপান, নেশা, মাদক, বাল্য বিবাহ, যৌতুক, শিশু ও মহিলা পাচার, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। গ্রামীন সব স্তরের মানুষ যেমন ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য, মুক্তিযাদ্ধা, প্রবীণ গুনিজন, অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবী, কিশোর-কিশোরী, প্রতিবন্ধী, নিঃস্ব, হতদরিদ্র, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠি, ধর্মীয় নেতা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাপোর্ট গ্রুপগুলোর কাজ প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, জনগণ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ‘আমাদের স্বাস্থ্য, আমরাই নিশ্চিত করবো’ -এ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে উন্নত ও মানসম্মত টেকসই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। সারাদেশে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি যারা প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত থাকছেন, তাদেরকে প্রশিক্ষণ সহায়িকা নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে, তাতে পারস্পরিক সহযোগিতাও বাড়ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ কোটি গ্রামীন জনগণকে একযোগে মোবাইল ভয়েস কলে আহ্বান করে বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিকে আসুন, সেবা নিন, সুস্থ থাকুন”। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান শুধু ৪ কোটি নয় দেশের ১০ কোটি গ্রামীণ জনগণের হৃদয়ে অনুরণিত হচ্ছে। সবার সাথে সুর মিলিয়ে দৃপ্তকন্ঠে গাইতে চাই “আমরা করবো জয় নিশ্চয়”। আমাদের ভয় নেই, আমরা একা নই, আমাদের পথ প্রদর্শক বিশ্বনন্দিত, দূরদর্শিনী, সাহসী নেত্রী শেখ হাসিনা আছেন। সমগ্র জনগণ আমাদের সাথী, এই সাথীদের নিয়ে রোগ ব্যাধি জয় করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। 

কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এর সভাপতি অধ্যাপক ডা: সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচকদের মধ্যে উপস্থিত আছেন, তুলশী রঞ্জন সাহা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট, সৈয়দ বােরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত, অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, অধ্যাপক ডা: শরফুদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, সেলিনা হােসেন, সভাপতি, বাংলা একাডেমি, ড: এ.বি.এম আবদুল্লাহ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইমেরিটাস অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭