ইনসাইড টক

‘অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে’


প্রকাশ: 17/07/2022


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয়ে এক সময় বলা হতো যে, যারা বিশ্ব অর্থনীতিতে যত বেশি সম্পৃক্ত, তারা তত ভালো অবস্থানে আছে। এই কথাটা এখন একটু মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। কোভিডের পরে এটি মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। এটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, যেসব দেশ নিজের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পেরেছে, তাদের নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা বেশি। সেই দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ভালো অবস্থানে আছে।

সম্প্রতি কানাডাভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট পরিচালিত এক জরিপে জিডিপির আকার অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। অর্থনীতির এই শক্ত অবস্থানের পরও বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে বলে মন্তব্য করেন অনেকেই। এই বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আগে অর্থনীতি একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিলো। এখন আমরা অনেক বিষয়ে বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভরশীল। তারাও আমাদের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের রপ্তানির ওপর তারা নির্ভরশীল, তাদের রপ্তানির ওপর আমরা নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে অর্থনীতি আগের তুলনায় অনেক বেশি জটিল, অনেক বেশি সরলরৈখিক ঘটনা নয়। এই অ-সরলরৈখিক অর্থনীতির মধ্যে অনেককিছু আছে, যেগুলো নিয়ে পোস্টমর্টেম না করতে পারলে খুব ভালো কোনো উপসংহার টানা যায় না।

তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি বিষয়টি যথেষ্ট মাত্রায় অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে অনেক ঝুঁকি আছে। সেই ঝুঁকি গুলোর মধ্যে মাপঝোক করেই কথাবার্তা বলা দরকার। সেটা যদি আমরা বলি তাহলে বিশ্বের সব অর্থনীতিকে যেভাবে র‍্যাংক করা হয় (সব র‍্যাংকের সঙ্গে আমরা একমত হইও না) কোনটা শক্ত অর্থনীতি, কোনটা দুর্বল অর্থনীতি, মাঝারি অর্থনীতি। তবে এটা পরিষ্কার যে, ২০-৩০ বছর আগের বাংলাদেশে অর্থনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতির মধ্যে শক্ত অবস্থানের নিরিখে, ২০-৩০ আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় এখন বাংলাদেশ নেই। বাংলাদেশ তার থেকে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে।

অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আমরা অর্থনীতিতে কনসিসটেন্টলি গত ১০ বছর একধরনের একটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছি, যেটা খুব বেশি দেশ করেনি। সেটাও একটি দুর্বল অর্থনীতিতে নয়, মোটামুটি একটি সবল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি। দুর্বল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হলেও খুব বেশি আশে যায় না হয়তো। এটি সবল অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি এটা ওয়েলকামিং এবং এটা ভালো।

তিনি বলেন, আমরা বহু দেশ থেকে ঋণ নিয়েছি। যথেষ্ট ঋণ আমাদের আছে। দায়-দেনা ভালো জিনিষ না তবুও এই দায়-দেনা আমাদের আছে। এই দায়-দেনা শোধও করতে হয়। এই দায়-দেনা পরিশোধ করার বিষয়টি এখন আমার মনে হয়, আমাদের মাথায় বড় বিষয়। আমাদের মাথায় বড় বিষয় কয়েকটি। একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কথা যদি বলেন, তাহলে সত্য কথা যদি বলা হয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এগুলো বড় বিষয়। আর অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে কৃষি। কৃষির শক্তি এটা বড় বিষয়। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, অভ্যন্তরীণ দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যে উৎপাদন, সেটা শিল্প পণ্য হোক, কৃষি পণ্য হোক বা সেবা পণ্য হোক এই উৎপাদন বড় বিষয়।

তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে খুব বড় বিষয় হলো ইমপ্লোয়েমেন্ট। আনইমপ্লোয়েমেন্ট ফিগার কম বলা যেতে পারে, কিন্তু সেই আনইমপ্লোয়েমেন্ট ফিগারের মধ্যে যদি এমন ইমপ্লোয়েমেন্ট থাকে যেখানে মজুরি কম। কারণ অনেক খাতই আছে বাংলাদেশে যেগুলো হলো অনানুষ্ঠানিক খাত। অনানুষ্ঠানিক খাতে মজুরি আসলে অনেক কম। সেগুলো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়।

অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আমাদের অর্থনীতির একটি জিডিপি হয়। জিডিপির হারটা ৪০ লক্ষ কোটি টাকার আশেপাশে। এই জিডিপির সঙ্গে অনেক কিছুকে তুলনা করা হয় যে, সামনে কেমন হবে সেটা বোঝা যাবে। একটা তুলনা হয় যে, আমরা যেসব লোন পরিশোধ করি (দুইটি ঋণ পরিশোধ করি, একটি দেশের ভিতরে, একটি দেশের বাহিরে) এই ঋণ আমাদের কত পরিশোধ করতে হবে। প্রতি সালে কত পরিশোধ করতে হবে। এখন ঋণ পরিশোধ তো টাকায় করা হয় না, ডলারে করতে হয়। আমাদের এখন ফরেন কারেন্সির অবস্থা ৪০ বিলিয়ন ডলার বলা হয়। তার মধ্যে প্রশ্ন করা হয় যে, আমরা সরকারিভাবে যে ফিগারটা বলি সেটা ঠিক কিনা। সেখানে আইএমএফও বলে যে, তোমাদের ৭ বিলিয়ন ডলার তোমরা বেশি বলো। সেসব যদি বাদ দেই, তাহলে যেটা দাঁড়ায় সেটা আসে আমার দুটো জায়গা থেকে। একটি হলো আমরা যে রপ্তানি করি সেখান থেকে ফরেন কারেন্সি পাই। আরেকটা হলো আমাদের রেমিটেন্স। বিদেশে যারা কাজ করে তারা যে টাকাটা পাঠায়। এর বাহিরে কিছু নেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭