ইনসাইড বাংলাদেশ

উত্তপ্ত বিশ্ব: সাবধানী বাংলাদেশ


প্রকাশ: 03/08/2022


Thumbnail

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ব্যতিক্রমী এবং প্রশংসিত। বাংলাদেশ সরাসরি কারো পক্ষাবলম্বন করেনি। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধেও অবস্থান গ্রহণ করেননি। এনিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে ঝুঁকি ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ তার স্বতন্ত্র কূটনীতি বজায়ে রেখেছে, এ জন্য প্রশংসিত হয়েছে। এখন নতুন করে বিশ্বে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই বিশ্ব আবার বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের মধ্য দিয়ে বিশ্ব আবার বিভক্ত হয়ে উঠেছে। চীন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিল যে, আগুন নিয়ে খেলবেন না। জো বাইডেনের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের বৈঠক ছিল উত্তপ্ত, ঝঞ্ঝাময়। কিন্তু এই বৈঠকের পরও ন্যান্সি পেলোসি তাইপেতে গেলেন এবং তিনি প্রমাণ করলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা খুশি তাই করতে পারে। এটির ফলে চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইতোমধ্যে চীন তাইওয়ানের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। কিন্তু এই সমস্ত কিছু ছাড়িয়ে এখন বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়ছে। চীনকে সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া। ফলে রাশিয়া-চীনের ঐক্য বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। এই মেরুকরণে বাংলাদেশের অবস্থান কি?

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পার্টনার। বাংলাদেশে বর্তমানে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে তার প্রত্যেকটির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে চীনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটলে বাংলাদেশ কি করবে এটি একটি বড় প্রশ্ন। আবার অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশ নানাভাবে নির্ভরশীল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংক, আইএমএফকে নিয়ন্ত্রণ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশে আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে। নানাভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের বড় বাজার রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সে কারণেই বাংলাদেশ চাইলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু টানাপোড়েন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতেই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু সাহসী এবং তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন যে, এ ধরনের যুদ্ধে কেবল অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভবান করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, একটি দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলে কষ্ট পায় সারা বিশ্বের গরিব মানুষ। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে তিনি মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। এখন তাইওয়ান নিয়ে চীন-মার্কিন বিরোধে বাংলাদেশের ভূমিকা কী হবে, বাংলাদেশ কি একই কৌশল অবলম্বন করবে? কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের এই ভারসাম্যের কূটনীতি নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশ রীতিমতো চাপের মধ্যে রয়েছে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কোয়াডে যোগদানের জন্য বাংলাদেশকে সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছে, অন্যদিকে চীন কোয়াডে যোগদানের বিরোধিতা করছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ভারতও খুব একটা ভালোভাবে নিচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে বৈশ্বিক রাজনৈতির যে মেরুকরণ সেই মেরুকরণে বাংলাদেশের জন্য পথ চলাটা কঠিন এবং দুর্গম হয়ে উঠেছে। এই দুর্গম পথে কূটনীতির নিরপেক্ষতার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বাংলাদেশকে দিতে হবে। সামান্য ভুল বাংলাদেশকে বড় ধরনের সংকটে ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭