ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিহারের রাজনীতিতে বইছে দমকা বাতাস


প্রকাশ: 11/08/2022


Thumbnail

বিহারের রাজনীতিতে যেনো দমকা বাতাস বইতে শুরু করেছে। অষ্টমবারের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ) নেতা নিতীশ কুমার। যদিও বিজেপির হাত ছেড়ে আরজেডি, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে বিহারে মহাজোটের সরকার গড়েছেন নিতীশ। নিতীশের পাশাপাশি উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব। নিতীশ কুমার বিজেপির হাত ছাড়ার ফলে বিহারে ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মধ্যেই, ক্ষমতা হারায় জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ)। ফলে পাঁচ বছর পর আবার বিহারের শাসনভার মহাজোটের হাতে এলো। তেজস্বী ও কংগ্রেসকে পাশে রেখেই নতুন মহাজোটের নেতা নির্বাচিত হলেন নিতীশ কুমার । 

বুধবার রাজভবনে শপথ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নিতীশ কুমার বলেন, ‘আমার কাজ হবে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার আমি নই। তবে প্রশ্ন হলো, ২০১৪ সালে যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি কি ২০২৪ সালে তা হতে পারবেন?’ ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের পর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা শপথ নেবেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, নতুন মন্ত্রিসভায় আরজেডির ২০, জেডিইউর ১৩ থেকে ১৫ জন, কংগ্রেস ৪ ও হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চারও (হাম) একজন সদস্য থাকবেন।

এদিকে নিতীশ কুমারের বিজেপির ছাড়ার বিষয়ে বিহার বিজেপির প্রধান সঞ্জয় জয়সওয়াল বলছেন, এনডিএর ব্যানারে আমরা ২০২০ সালে একসঙ্গে লড়াই করেছিলাম। জনগণের ঢল ছিল জেডিইউ ও বিজেপির দিকে। আমরা বেশি আসনে জিতেছিলাম। তা সত্ত্বেও, নীতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। কিন্তু, যা ঘটলো তা বিহারের মানুষ ও বিজেপির সঙ্গে প্রতারণা। এই পরিস্থিতিতে নিতীশ কুমারকে নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। 

বিহারের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে আচমকা ক্ষমতা হারানোর ধাক্কা সামলে বিজেপি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিপর্যয় নিয়ে মুখ না খুললেও তাঁদের নির্দেশে বিজেপির রাজ্য নেতারা নিতীশকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্যের নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, নিতীশ তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। সবাই তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখবে। এদিকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিতীশ বলেন, ‘আমি টিকব কি না, রাজ্যের মানুষই সেই উত্তর দেবেন।’

নিতীশকে আক্রমণ করেছেন রাজ্যের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতা সুশীল মোদিও। তিনি বলেন, ‘উনি দেশের উপরাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে জেডিইউর কেউ কেউ তাঁর কাছে দরবারও করেছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল, নিতীশকে উপরাষ্ট্রপতি করে দিয়ে বিজেপি বিহার চালাক। সুশীল বলেন, ‘নিতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিহারি জনগণের রায়ের অবমাননা করেছেন। মানুষ এনডিএকে ভোট দিয়েছিল। সেই মর্যাদা নিতীশ রাখলেন না। এখন আমরাও দেখব, তেজস্বীকে সঙ্গে করে কীভাবে তিনি রাজ্য চালান। এই সরকারের মেয়াদ বেশি দিন নয়। লালু প্রসাদের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে নিতীশ আরজেডি ভাঙবেন।’

রাজনৈতিক মহল বলছেন, নিতীশ কুমার এমন একজন নেতা যার রাজনীতিতে স্থায়ী কোনও বন্ধু বা শত্রু নেই। অতীতে ক্ষমতার জন্য নাটকীয়ভাবে শরিক বদল করেছেন। বিজেপির সঙ্গে মিলে বিহারে শাসন করাকালীনই তিনি এনডিএর সঙ্গ ছেড়েছিলেন। আরজেডির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। পরে আবার আরজেডিকে ছেড়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেন। সেই সময় বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে এবং আরজেডির সঙ্গে জোট বেঁধে বিহারে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলেন নিতীশ। জেডিইউ 'জুনিয়র পার্টনার' হওয়া সত্ত্বেও নিতীশ কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিল বিজেপি। তবে, ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, ঘন ঘন ইউটার্নের জন্য জনপ্রিয়তা কমেছে নিতীশের। ২০১৩ সালে বিহারে যে দাপট ছিল তাঁর, আজ ২০২২-এ এসে দাঁড়িয়ে সেই জায়গায় তিনি নেই। 

যদিও সংখ্যার বিচারে নতুন জোট সরকারের পতনের কোনো আশঙ্কা অবশ্য নেই। কারণ, ২৪৩ সদস্যের বিধানসভায় আরজেডির ৭৯, জেডিইউর ৪৫, কংগ্রেসের ১৯, হাম-এর ৪ জন ছাড়াও এই মন্ত্রিসভাকে সমর্থনের চিঠি দিয়েছে তিন বামপন্থী দলের ১৬ জন বিধায়ক। একমাত্র স্বতন্ত্র বিধায়কও সরকারের পক্ষে। এই সরকার সেই অর্থে প্রকৃত মহাজোট সরকার। বিজেপির আশঙ্কাও এখানেই। জাতভিত্তিক এই রাজ্যে যাদব, কুর্মী, অনগ্রসরদের পাশাপাশি মুসলমান সমর্থন এক জোট হলে ভোটের বাক্সে তার বিপুল প্রতিফলন ঘটবে। বিহারে বিজেপি এখনো বর্ণহিন্দুদের দল বলে পরিচিত। বিরোধী ভোট ভাগাভাগি না হলে তাদের পক্ষে ভালো ফল করা কঠিন।

এদিকে, নিতীশের এই ইউটার্নে বিজেপির বেশি চিন্তা ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট নিয়ে। এটা ঠিক যে সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদির সমকক্ষ এখনো কেউ নেই। কিন্তু বিজেপির একাংশ নিভৃত আলোচনায় এ কথাও স্বীকার করছেন, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির যে ভাবমূর্তি ছিল, এখন তা কিছুটা নিষ্প্রভ। বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দীর্ঘদিনের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। নিতীশ নতুন করে সে প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭