ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

কার টাকায় ইউনূস সেন্টার?


প্রকাশ: 23/09/2022


Thumbnail

গ্রামীণ টেলিকমের আর্থিক অনিয়ম এবং তিন হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে ড. ইউনূসের প্রচারণার জন্য গঠিত প্রতিষ্ঠান ইউনূস সেন্টার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় অবস্থিত ইউনূস সেন্টারের অর্থ কোত্থেকে থেকে এলো, এনিয়ে এখন তদন্ত চলছে এবং তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য যে, গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে ইউনূস সেন্টারের অফিস। বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবসা সম্পর্কিত বিষয়গুলো তদারকির জন্য এটি একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক। এটি দরিদ্র বিমোচন ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে কাজ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ইউনূস সেন্টার গঠনের প্রথম লক্ষ্য ছিল ড. ইউনূসের দর্শনের প্রচার এবং প্রসারের লক্ষ্যে সামাজিক ব্যবসার উপর বিশেষ মনোযোগ দেয়া। ইউনূস সেন্টারের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আছেন লামিয়া মোর্শেদ।

২০০৬ সালে অক্টোবরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। এর পরপরই ড. ইউনূসের অধীনে ইউনূস সচিবালয় গঠিত হয়। সচিবালয়ের উদ্দেশ্য ছিল ড. ইউনূসের ইমেজ বৃদ্ধি, তাঁর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচারণা এবং বিশ্ব তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগসূত্র করিয়ে দেওয়া। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে ইউনূস সচিবালয় নাম পাল্টে একে ইউনূস সেন্টার করা হয়। নতুন সামাজিক ব্যবসার বিকাশ করা, সামাজিক ব্যবসা স্টার্টআপ গুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে এবং এই বিষয়ে আগ্রহীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখাই এই প্রতিষ্ঠান উদ্দেশ্য বলে বক্তব্য রাখা হয়। কিন্তু ইউনূস সেন্টার যেভাবে গড়ে উঠেছে তাতে এর অর্থায়ন কে করলো, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমে ইউনূস সেন্টার একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত করা হলেও এর বিপুল বিত্ত রয়েছে। সরকারের অনুমতি ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিশ্বের অন্তত ১২টি দেশে ইউনূস সেন্টারের শাখা খোলা হয়েছে। এই টাকা কোত্থেকে এলো সে সম্পর্কে ইউনূস সেন্টারের কোনো ব্যাখ্যা নেই। বিভিন্ন দেশে ইউনূস সেন্টার সম্মেলনের আয়োজন করে এবং এই সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ে বিভিন্ন প্রচারণায় নেতৃত্ব দেন। এই সমস্ত সম্মেলন আয়োজনের খরচগুলো কোত্থেকে আসলো, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন। ইউনূস সেন্টার এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। সে অর্থায়নের টাকা কোত্থেকে আসলো, সে সম্পর্কেও ইউনূস সেন্টারের সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই।

এই বিষয়গুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন রকম প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যেটির মালিকানা ড. ইউনূসের একার। অথচ তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এই টাকাগুলো গ্রহণ করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ ট্রাস্ট, গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্ট, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ কমিউনিকেশনস, গ্রামীণ শক্তি, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশ, গ্রামীণ সফটওয়্যার লিমিটেড, গ্রামীণ সাইবারনেট লিমিটেডসহ আরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠেছিল গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায়। একজন চাকরিজীবী ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ দিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান কিভাবে গড়লেন, সে নিয়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন উঠেছে। এর পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর ইউনূস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ নিয়ে।

গ্রামীণ টেলিকমের কাগজপত্রে দেখা যায় যে, গ্রামীণ টেলিকম থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ইউনূস সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে। গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস, যেটি গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ঋণগ্রহীতাদের। কিন্তু বাস্তবে এই গ্রামীণ ব্যাংকের যাবতীয় লভ্যাংশের টাকা ড. ইউনূস বিভিন্ন খাতে ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে এবং সেই সমস্ত ব্যবহারের কোনো খতিয়ান নেই। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান থেকে ইউনূস সেন্টারে অন্তত আট হাজার কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত। আর এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই টাকা কতটা বৈধ পথে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত অনুসন্ধানে এ সম্পর্কে আরও জানা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭