ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইতালি প্রধানমন্ত্রী: কে এই জর্জিয়া মেলোনি?


প্রকাশ: 27/09/2022


Thumbnail

ইতালিতে নতুন এক ইতিহাস উপহার দিতে যাচ্ছে দেশটির সাধারণ নির্বাচন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইতালিতে গঠিত হতে যাচ্ছে কট্টরপন্থী সরকার। যার নেতৃত্বে থাকছেন জর্জিয়া মেলোনি। বুথ ফেরত জরিপে এরিমধ্যে ডানপন্থী এই নেতার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত। 

ফলে ইতালির প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ‘ব্রাদার্স অব ইতালি’ দলের নেতা জর্জিয়া মেলোনি। বেনিতো মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী যুগের পর এই প্রথম সে দেশে দক্ষিণপন্থী সরকার তৈরি হতে চলেছে। এই নির্বাচনের ফলের দিকে নজর রাখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এই কিছুদিন আগেই ইতালির রাজনীতিতে প্রায় অপরিচিত ছিলেন মেলোনি। অনেকেই প্রশ্ন করতেন এই জর্জিয়া মেলোনি? কিন্তু দেশটির নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্বাচন কাছাকাছি আসার সাথে সাথে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন জর্জিয়া মেলোনি।

১৯৯২ সালে মাত্র ১৫ বছরের মেলোনি অধুনালুপ্ত মুভিমেন্টো সোশ্যাল ইতালিয়ানো’তে যোগ দেন। আবেগপ্রবণ ভাষণের জন্য খুব অল্প সময়ে রাজনীতিতে নিজের জায়গা করে নেন তিনি। ২০১৩ সালে এমএসআই ভেঙ্গে তৈরি হয় ‘ব্রাদার্স অব ইতালি’। 
খুব অল্প সময়ের মেলোনি দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই সঙ্গে ইতালির ডানপন্থী ব্লকের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর মেলোনি একের পর চরম ব্যবস্থার কথা বলে ইউরোপে আলোচনায় আসেন। 

মেলোনি এবং তার জোট সহকর্মী নর্দার্ন লিগের সালভিনিকে প্রায়ই ইউরোপের বিদ্রোহী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তারা ইউরোর সমালোচনা করেছেন, ব্রিটেনের প্রো-ব্রেক্সিট টোরির সমর্থক। সে সঙ্গে কয়েকটি নীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ব্লকটি।

দৃঢ় সংকল্প এবং ভারী রোমান উচ্চারণের জন্য পরিচিত মেলোনির আপোষহীন মনোভাব দ্রুত ইতালির হতাশাগ্রস্ত মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার মধ্যেই নতুন দিনের আভাস খুঁজে পেতে চাচ্ছেন। তাছাড়া অন্যান্য ডানপন্থী দলের সমর্থন মেলোনির জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়েছে।

সমলিঙ্গের অধিকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অভিবাসীদের ইউরোপ যাত্রা বন্ধে আফ্রিকার বিরুদ্ধে অবরোধে ডাক দিয়ে ইতালির জনগণের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেন জর্জিয়া মেলোনি। সে সঙ্গে বামপন্থীদের তুলোধুনো করার জন্যও তাঁর অনেক খ্যাতি রয়েছে। 

ইতালির সাবেক কট্টরপন্থী শাসক মুসোলিনির ঘোর সমর্থক মেলোনি। ফরাসি এক টেলিভিশনের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মুসোলিনি যা কিছু করেছেন, ইতালির জন্যই করেছেন এবং ৫০ বছর ধরে তার মতো কোনও রাজনীতিবিদ নেই।

জন্মগতভাবে রোমান ক্যাথলিক মেলোনি বেড়ে উঠেছেন মায়ের সঙ্গে। তারুণ্যের সময় থেকেই তিনি গভীরভাবে, এমনকি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন জাতীয় রক্ষণশীল। বেড়ে উঠেছেন রোমের বামপন্থী ঐতিহ্যের শ্রমজীবী পাড়া হিসাবে খ্যাত গারবাটেল্লায়।

১৯৭৭ সালে রোমে জন্ম নেয়া মেলোনি ১৯৯২ সালে ইতালিয়ান সোশ্যাল মুভমেন্টের যুব শাখা ইয়ুথ ফ্রন্টে যোগ দেন। পরে তিনি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের  ছাত্র আন্দোলন স্টুডেন্ট অ্যাকশনের জাতীয় নেতা মনোনীত হন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০২ রোম প্রদেশের কাউন্সিলর ছিলেন।

তারপরে মেলোনি ন্যাশনাল এলায়েন্সের যুব শাখা ইয়ুথ অ্যাকশনের সভাপতি হন। ২০০৮ সালে, তিনি বার্লুসকোনির মন্ত্রিসভায় যুবমন্ত্রী হন। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। পরের বছরই তিনি ফ্রেন্ডস অব ইতালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে আবির্ভূত হন। 

আর ২০১৪ সালে তিনি দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছরে তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন এবং ২০১৬ সালে রোমের মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। ২০১৮ সালে ইতালির সাধারণ নির্বাচনে মেলোনির দল সবচেয়ে বড় বিরোধীদল হিসাবে আবির্ভূত হয়। 

মেলোনির বাবা ছিলেন সার্ডিনিয়া ও এবং তার মা এসেছিলেন সিসিলি থেকে। বাবা একজন কর উপদেষ্টা ছিলেন। মেলোনির বয়স যখন এগারো বছর তখন তিনি পরিবার ছেড়ে ক্যানারি দ্বীপে চলে যান। মেলোনি ইতালির গারবাটেল্লা জেলায় বড় হয়েছেন। 

মেলোনি ইতালির আমেরিগো ভেসপুচি ইন্সটিটিউট থেকে ভাষার ওপর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তিনি দাবি করেন, শতভাগ নম্বর পেয়ে তিনি ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন। কিন্তু দেখা গেলো, স্কুলটি একটি বিদেশী ভাষার স্কুল নয়, বরং পর্যটন শিল্পে বিশেষায়িত একটি উচ্চ বিদ্যালয়। 

জর্জিয়া মেলোনি ও তার সঙ্গী আন্দ্রে গিয়ামব্রুনোর একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। আন্দ্রে পেশায় একজন টিভি সাংবাদিক এবং সিলভিও বার্লুসকোনির মিডিয়াসেট টিভি চ্যানেলের হয়ে কাজ করেন। ফ্যান্টাসি নিয়ে তৈরি সিনেমার একজন তুমুল ভক্ত জর্জিয়া মেলোনি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭