ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়ছে: উদ্বিগ্ন বিএনপি


প্রকাশ: 05/10/2022


Thumbnail

বিএনপি সরকার পতনের লক্ষ্যে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করছে। তারা কোনো রাজপথের কর্মসূচি গ্রহণ করছে না। দুইটি রাজনৈতিক দলই সরকার বিরোধীতা করছে। কিন্তু দুটি রাজনৈতিক দলেরই লক্ষ্য ভিন্ন। দুটি রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিক থেকে সরকারের সমালোচনা করছে। কিন্তু দুটি রাজনৈতিক দলের কৌশলে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অন্যদিকে বিএনপি এখনও জনসম্পৃক্ততা অর্জন করতে পারেনি। আর এ কারণেই বিএনপি এখন উদ্বিগ্ন। কাগজে-কলমে দেশের প্রধান বিরোধী দল হল জাতীয় পার্টি। সংসদে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। বিরোধী দলের নেতা জাতীয় পার্টি থেকে। অনেকে মনে করেছিল যে, হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হবে। জাতীয় পার্টির ভাঙ্গনের মুখে পড়বে। কিন্তু হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের জাতীয় পার্টির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জাতীয় পার্টির ভাঙ্গেনি বরং সরকার বিরোধী অবস্থানে জন আকর্ষণ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। 

জাতীয় পার্টিকে অনেকে এখন গঠনমূলক বিরোধীদল হিসেবে মনে করছে। তাছাড়া হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের গায়ে যেমন স্বৈরাচারের তকমা ছিল। বর্তমান জাতীয় পার্টিতে সেই  স্বৈরাচারের তকমা নেই। হোসেন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টির নীতি কৌশল ছিল পরস্পর বিরোধী। এই জাতীয় পার্টির সরকার বিরোধিতা করছে। পরক্ষণেই জাতীয় পার্টির আবার সরকারের গুনগান করছে। এই পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণে জাতীয় পার্টির প্রতি জনগণের আস্থা ছিল না। আর এখন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে জনগণ ক্রমশ আগ্রহী হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো মনে করছে। এরশাদের একটি বাস্তব সমস্যা ছিল তা হলো বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত ছিলেন এরশাদ। বিশেষ করে মঞ্জুর হত্যা মামলা নিয়ে তিনি সব সময়ই সুতোর ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। মঞ্জুর হত্যা মামলা ছিল সরকারের কাছে ট্রামকার্ড। যখনই এরশাদকে বশীভূত করার প্রয়োজন ছিল তখনই এরশাদের এই মামলার কার্যক্রম সচল করা হত এবং এরশাদ ঘাবড়ে যেতেন। জিএম কাদের সেদিক দিয়ে নিরুপদ্রব এবং নিশ্চিন্ত। কারণ জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই, নেই কোনো অনিয়মের অভিযোগও।

২০০৯ সালের ৫ বছর মন্ত্রিত্বে ছিলেন। সেই সময় মন্ত্রী হিসেবে তিনি নিজেকে একজন সফল মন্ত্রী হিসেবে দাবী করতেই পারেন। তাছাড়া তিনি যেভাবে সরকারের সমালোচনা করছেন তার গঠনমূলক এবং জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। জিএম কাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি ইতিবাচক দিক হল যে, সুশীল সমাজ একসময় জাতীয় পার্টিকে অসত্য মনে করত এবং সুশীল সমাজের কাছে জাতীয় পার্টির কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। সেই সুশীল সমাজের প্রিয়ভাজনে পরিণত হয়েছেন জিএম কাদের। আর একারণেই জাতীয় পার্টি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে বিএনপির জন্য সংকট অপেক্ষা করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির ভোট ব্যাংক একই। আওয়ামী লীগ বিরোধীতাকারীরা কেউ জাতীয় পার্টিতে অথবা কেউ বিএনপিতে যোগদান করেছে। জাতীয় পার্টি যত শক্তিশালী হবে তাতে বিএনপি-আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাবে। এটা শাসক দলের জন্য সুবিধাজনক। তাছাড়া যদি শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি শক্তিশালী অবস্থানে থেকে নির্বাচনে যায় এবং বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জনও করে তারপরও নির্বাচন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অংশগ্রহণমূলক হবে বলে অনেকেই মনে করেন। বিশেষ করে কূটনৈতিক মহলে এখন জাতীয় পার্টির বেশ প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। তারা বলছে জাতীয় পার্টির যে রাজনৈতিক ধারার সূচনা করেছে সেই ধারাটি সঠিক।

জাতীয় পার্টির কতগুলো অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলোর বেশ সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। যেমন জাতীয় পার্টি রাজপথে ভাংচুরের আন্দোলনে বিশ্বাস করে না, হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের সায় নেই। জাতীয় পার্টির নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারেও বিশ্বাস করে না । তারা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। এই সমস্ত নিয়ে এরশাদের পরে যে জাতীয় পার্টি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল সেই জাতীয় পার্টি এখন সরকার নয় বিএনপির জন্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা  আওয়ামী লীগের কৌশল কিনা সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছেন। কারণ শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি যদি শক্তিশালী হয় তাহলে পারে ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি বিএনপির। আর এ কারণেই বিএনপিতে উদ্বেগ বাড়ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭