ইনসাইড বাংলাদেশ

সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুড়িগ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা


প্রকাশ: 25/10/2022


Thumbnail

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে রাতভর বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায়, দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে চলতি মৌসুমের আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষক। 

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম জাতের কিছু ধান পাকতে শুরু করেছে, বাকি ধানের সবে মাত্র শীষ বেড় হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে গত ২৪ ঘন্টার বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া অব্যাহত থাকায়, কৃষকের অতি কষ্টের ফসল বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় মাটির সাথে নুয়ে পড়েছে। 

উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামের রাহিজুল ইসলাম গনি জানান, বৃষ্টি আর বাতাসে তার দেড় বিঘা জমির ধান মাটির সাথে শুয়ে পড়েছে। ধানের সবে মাত্র শীষ বের হয়েছে। জানিনা ফসল ঘরে তুলতে পারবো কিনা! 

পাইকেরছড়া ইউনিয়নের আব্দুল হালিম জানান, প্রায় সোয়া বিঘা জমির ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। ধানের শীষ পচনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কয়েক গোছা একত্র করে বেঁধে সোজা করে দিচ্ছি। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে কৃষক ১৬ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ জানান, বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত ২২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষতি কমাতে ক্ষেতের আইল কেটে পানি বের করে দেয়া ও গোছা করে ধান বেঁধে দেয়াসহ
কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

অপরদিকে, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় গত ২ দিনের টানা বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি খেতের। শতশত কৃষকের স্বপ্নের আমন খেতের ফসল বর্তমানে কাদাপানিতে লেপ্টে আছে। চলতি রোপা আমন চাষের শুরু থেকে প্রকৃতির সাথে লড়াই চলছে ফুলবাড়ীর কৃষকদের। আমনের চারা রোপণের পরে খরার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই অনেক ক্ষেতে দেখা দেয় পোকার আক্রমণ। 

ফুলবাড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৎপরতা আর কৃষকদের হার না মানা লড়াইয়ে জয় কৃষকের। দিগন্তজুড়ে খেলা করে সবুজের ঢেউ। কৃষাণ-কৃষাণীরা আশায় বুক বাঁধেন। স্বপ্ন দেখেন ফসল ঘরে তুলে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠার। তবে তাদের আশার পাতে ছাঁই। তাদের স্বপ্নের আমন খেতের ধান গাছ এখন মাটির সাথে লেপ্টে আছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত কৃষকের পাকা, আধাপাকা, কাঁচা ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি আর বাতাসের তোড়ে নষ্ট হয়ে গেছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ক্ষেত। 

বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, তার সাড়ে তিন বিঘা জমির সদ্য শীষ বের হওয়া স্বর্ণ জাতের ধানের গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। 

সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক বাদল সরকার জানান, তার নিজের তিন বিঘাসহ তার ভাই ও চাচির পাঁচ বিঘা জমির ধান গাছ এলোমেলো ভাবে জমির কাদাপানিতে লেপ্টে আছে। এতে জমির ধান পঁচে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। 

ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের খোঁচাবাড়ী গ্রামের শামসুল হক জানান, তিনি এবারে দশ বিঘা জমিতে আমন চারা রোপন করেছেন। তার মধ্য প্রায় আড়াই  বিঘা জমির ধান গাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এতে ফলন হানির পাশাপাশি গো-খাদ্যে সংকটের সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি। একই পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক।

আউশ ও রোপা আমন ধান চাষাবাদের বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবারে ১১ হাজার ৩৫২ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আউশ চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বন্যায় ৫১০ হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সবশেষ বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ৩৬৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, বৃষ্টি ও বাতাসের তোড়ে যেসকল খেতের ধান গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে সেসব ধান খেতের পানি দ্রুত নিস্কাসনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি জমিতে লুটিয়ে পড়া ধান গাছগুলিকে মুটো করে বেঁধে দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যেসব খেতের ধান আশি ভাগ পেকেছে তা কেটে নেয়ার জন্যও কৃষকদের বলা হচ্ছে। জমিতে ধানগাছ লুটিয়ে পড়ায় ফলনহানির কোন সম্ভাবনা আপাতত দেখছি না।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭