প্রেস ইনসাইড

প্রথম আলো: প্রতারণায় জন্ম, বিভ্রান্তিতে বিকাশ


প্রকাশ: 04/11/2022


Thumbnail

আজ ৪ নভেম্বর, দেশের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২৪ বছরে পা রাখলো দেশের এই অন্যতম জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকাটি। প্রথম আলোর ২৪ বছরের ইতিহাস প্রতারণা ও বিভ্রান্তির ইতিহাস। প্রথম আলোর ইতিহাস জানতে গেলে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের ইতিহাস জানাটা অত্যন্ত জরুরি। সাপ্তাহিক একতার মাধ্যমে মতিউর রহমানের সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। তিনি আসলে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক একজন নেতা এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। কমিউনিস্ট পার্টি থেকেই তাকে সাপ্তাহিক একতার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো এবং এ কথা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই মতিউর রহমানের নেতৃত্বে সাপ্তাহিক একতা একটি প্রভাবশালী সাপ্তাহিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকার ঢেউ বাংলাদেশেও আছড়ে পড়ে। আর সেই ধাক্কায় কমিউনিস্ট পার্টি বিভ্রান্ত হয়, ম্রিয়মাণ হয় ও ভেঙ্গে পড়ে। একসময় সাপ্তাহিক একতাও বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে যান মতিউর রহমান। বেকার মতিউর রহমান তখন দৈনিক সংবাদসহ বিভিন্ন কাগজে লেখালেখি করছিলেন। এসময় একঝাঁক তরুণের উদ্দীপনায় প্রকাশিত হয় আজকের কাগজ। সবে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। আর স্বৈরাচারের পতনের পর গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নতুন বিস্ফোরণ ঘটায় আজকের কাগজ। প্রকাশের পর থেকেই ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হতে থাকে। নাঈমুল ইসলাম খানের সম্পাদনায় পত্রিকাটি বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এক নতুন ধারার সূচনা করে।

মতিউর রহমান বুদ্ধিমান, বুঝতে দেরি করেননি। একঝাঁক তরুণের কাগজে বিভ্রান্ত বাম এসে যুক্ত হন। নাঈমুল ইসলাম খানকে রাজি করাতে সক্ষম হন এবং আজকের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে চাকরী নেন। এসময় আজকের কাগজে তরুণদেরকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করা, বিভ্রান্ত করা, তাদের সাথে প্রতারণার এক নবযাত্রা শুরু করেন। আজকের কাগজ তখন তারুণ্যের টগবগে এক সাংবাদিকতার নাম। এই তরুণদেরকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খাওয়ানো, তাদের সাথে নানারকম গোপন শলা-পরামর্শ করে আজকের কাগজে ভাঙ্গন ধরান মতিউর রহমান। কাজী শাহেদ আহমেদের বিরুদ্ধে নাঈমুল ইসলাম খানকে মুখোমুখি দাড় করান। এক পর্যায়ে আজকের কাগজ থেকে ১৪০ জন কর্মী বেরিয়ে যায়। যে ষড়যন্ত্রের মূল খলনায়ক ছিলেন মতিউর রহমান। আজকের কাগজ থেকে বের হবার আগেই মতিউর রহমান শাহবাগে একটি নতুন পত্রিকার জন্য অফিস ভাড়া নেন। তাকে অর্থ যোগান বাংলাদেশের একজন বিত্তবান শিল্পপতি। তিনি হলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। সাবের হোসেন চৌধুরীকে মতিউর রহমান আশ্বস্ত করেন যে আজকের কাগজের সব তরুণদেরকে নিয়ে আসতে তিনি সক্ষম হবেন। আজকের কাগজের প্রকাশক কাজী শাহেদ আহমেদ বিষয়টি জানতেন। এক রাতে আজকের কাগজের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন কাজী শাহেদ। ফলে আজকের কাগজের সমস্ত কর্মীরা পদত্যাগ করেন এবং সেই সময়ে আজকের কাগজের অন্যতম মালিক ইমপ্রেস গ্রুপের শান্তিনগরের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। এই অচলাবস্থায় মতিউর রহমান নিয়ে আসেন বিনিয়োগকারী এবং নতুন কাগজের জন্য আবেদন করেন। সেই কাগজের প্রকাশক হন মতিউর রহমান। ভোরের কাগজ নামের পত্রিকাটির প্রকাশক মতিউর রহমান হয়েছিলেন নাঈমুল ইসলাম খানের আবেগ এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। কারণ, তিনি বুঝতেই পারেননি যে কত বড় প্রতারণার শিকার তিনি হতে যাচ্ছেন। যাইহোক, যেহেতু আজকের কাগজ থেকেই সব তরুণরা ভোরের কাগজে এসে যোগ দিয়েছিলো তাই ভোরের কাগজ প্রকাশিত হবার পর থেকেই পত্রিকাটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। এই সময়ে মতিউর রহমানের প্রতারণার আরেক খেলা শুরু হয়। তিনি ভোরের কাগজ থেকে নাঈমুল ইসলাম খানকে বের করে দেয়ার এক নীরব খেলায় মেতে উঠেন। এই সময়ে আজকের কাগজের যারা কর্মী ছিলেন, যারা সবচেয়ে বেশী কাজ করতেন এবং যারা অন্যতম নীতিনির্ধারক ছিলেন তাদের মালিকানার লোভ দেখান। সবাইকে মালিক করা হবে তরুণদের এমন এক প্রতারণার ফাঁদে বিভ্রান্ত করেন মতিউর রহমান। এরপর নাঈমুল ইসলাম খানকে পদত্যাগে বাধ্য করেন তার সহকর্মীরাই যারা নাঈমুল ইসলাম খানের হাতে গড়া।

নাঈমুল ইসলাম খানের বিদায়ের পর মতিউর রহমান আস্তে আস্তে ভোরের কাগজের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেন। তিনি তার নিজস্ব লোকজনকে ভোরের কাগজে ঢুকাতে থাকেন এবং তরুণ মেধাবীদেরকে আস্তে আস্তে বিদায় করে দেন।  একসময় ভোরের কাগজের নতুন মালিক প্রকাশ্যে আসেন। সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানায় ভোরের কাগজের পূর্ণ কর্তৃত্ব চলে যায় মতিউর রহমানের হাতে। চাকরী ছেড়ে দেন সেখানকার মেধাবী নিরলস পরিশ্রম করে যারা পত্রিকাটি দাড় করেছেন সেই সমস্ত সাংবাদিকরা। একসময় ভোরের কাগজের বিরুদ্ধে প্রতারণা শুরু করেন। সাবের হোসেন চৌধুরী যখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সেই সময় থেকেই মতিউর রহমান ভিন্নরূপে আত্মপ্রকাশ করতে থাকেন। এসময় তিনি গোপনে যোগাযোগ করতে থাকেন আরেক শিল্পপতি লতিফুর রহমানের ট্রান্সকম গ্রুপের সঙ্গে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম আলো প্রকাশ করেন। যেখানে ভোরের কাগজের প্রায় সমস্ত মেধাবী তরুণদের নিয়ে যাওয়া হয়। এক রাতেই প্রায় ভোরের কাগজকে মেধাশূন্য করে ফেলেন মতিউর রহমান। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা যেমন বুদ্ধিজীবী নিধন করেছিলো ঠিক তেমনি ভোরের কাগজকে হত্যা করেন মতিউর রহমান। ভোরের কাগজ থেকে সমস্ত সংবাদকর্মীদের নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের প্রথম আলো। প্রথম আলোর ইতিহাস তাই প্রতারণার। আর ১৯৯৮ সাল থেকেই পত্রিকাটির প্রধান লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভ্রান্তি ছড়ানো, বিরাজনীতিকরণ, রাজনীতিবিদদের চরিত্রহনন করা এবং একটি সুশীলনীতি বাস্তবায়ন করা। ২০০৭ সালে প্রথম আলো সেই উদ্যোগে সফল হয়েছিলো। মতিউর রহমান চেয়েছিলেন মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের বাঁধায় মাইনাস ফর্মুলা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু এখনো প্রথম আলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিভ্রান্তির নাম। আর এ কারণেই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, প্রথম আলো তিনি পড়েন না। কারণ, প্রথম আলোর লক্ষ্যই হলো বিভ্রান্তি ছড়ানো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭