ইনসাইড গ্রাউন্ড

চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাসের দায় শোধ করলো ইংল্যান্ড


প্রকাশ: 13/11/2022


Thumbnail

বিশ্বকাপের ফাইনাল। মঞ্চও ছিলো প্রস্তুত। ফাইনালকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিলো ক্রিকেটর অন্যতম তীর্থভূমি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রায় ৮১ হাজার দর্শক। সেখানে আধিপত্য ছিলো পাকিস্তান সমর্থকদের। কিছু ইংলিশ সমর্থক থাকলেও, সবুজ-সাদার আড়ালে তা প্রায় ঢাকাই পড়ে ছিলেন পুরোটা সময়।

তবে ম্যাচ শেষ হতেই দেখা গোলো ভিন্ন চিত্র। সংখ্যায় নগণ্য এই ইংলিশ সমর্থকদের উল্লাসে ভারী হয়ে উঠলো মেলবোর্নের আকাশ। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো ইংল্যান্ড। সেই সাথে ৩০ বছর আগে মেলবোর্নেই ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারের মধুর প্রতিশোধ নিলো ইংলিশরা। চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাসের দায় শোধ করলো জশ বাটলারের দল। আর ১৩ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও শিরোপার জন্য অপেক্ষা বাড়লো পাকিস্তানের।

লড়াইটা চলছিলো সমানে সমানে। কখনো পাকিস্তান, কখনো ইংল্যান্ড- ম্যাচের পাল্লা দুলছিলো দুই দলের দিকেই। তবে শাহিন শাহ আফ্রিদির চোটে মুহুর্তেই বদলে গেলো ম্যাচের চিত্র। নিজের স্পেলের ১.৫ ওভার বাকি রেখেই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় শাহিনকে। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথ পরিষ্কার করে নেয় ইংল্যান্ড। ৭ বল হাতে রেখেই নোঙর করে জয়ের বন্দরে।

পাকিস্তানের দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভাল হয়নি ইংল্যান্ডের। প্রথম ওভারেই অ্যালেক্স হেলসের উইকেট হারায় দলটি। চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়ে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন হারিস রউফ। তুলে নেন ফিল সল্টের উইকেট। পাওয়ার প্লে'র শেষ ওভারে পাকিস্তানকে ম্যাচের চালকের আসনে নিয়ে আসেন রউফ। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকা ইংলিশ অধিনায়ক বাটলারকে রিজওয়ানের গ্লাভসবন্দী করেন তিনি। ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ইংল্যান্ড।

টুর্নামেন্টজুড়ে ইংল্যান্ডের মিডলঅর্ডার বলার মতো কোন রান পায়নি। আজ ফাইনালে দলকে শিরোপা জেতানোর গুরুদ্বায়িত্ব পড়ে মিডলঅর্ডারের কাঁধে। হ্যারি ব্রুকসকে সাথে নিয়ে সে পথ পাড়ি দিতেন থাকেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। তবে দারুণ লড়াই করেছেন পাকিস্তানের বোলাররা। রানের চাকার লাগাম টেনে ধরে আস্তে আস্তে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা চালায় দলটি। সেই চাপে খেই হারায় ইংলিশরাও। ১৩তম ওভারে হ্যারি ব্রুককে নিজের শিকারে পরিণত করেন শাদাব খান। কাভারের উপর দিয়ে তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ব্রুক। চতুর্থ উইকেট জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৩৯ রান যোগ করেন দুজনে। সে ক্যাচটি নিতে গিয়েই পায়ের গোড়ালিতে ব্যাথা পান শাহিন আফ্রিদি। তখনই ফিজিও'র সাথে মাঠের বাইরে চলে যান শাহিন।

নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইংল্যান্ডকে হাত খুলে রান তুলতে দেয়নি পাকিস্তানের বোলাররা। এতে ম্যাচের ভাগ্য দুলতে থাকে পেন্ডলামের মতো। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আবারো মাঠে ফেরেন শাহিন। চিৎকার করে তাকে স্বাগত জানায় গ্যালারি ভর্তি পাকিস্তান সমর্থকরা। কারণ তখনো দুটি ওভার বাকি পাকিস্তানের বোলিং বিভাগের অন্যতম কান্ডারি আফ্রিদির। তবে ১৬তম ওভারে বোলিং এসে একটি বল করেই মাঠ ছেড়ে উঠে যান আফ্রিদি।

ম্যাচে আসে নাটকীয় মোড়। সে ওভার শেষ করতে ইফতিখার আহমেদের হাতে বল তুলে দেন বাবর আজম। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগান বেন স্টোকস। ৫ বল থেকে তুলে নেন ১৩ রান। এতে চাপ কাটিয়ে খোলস থেকে বেরিয়ে আসে ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।

মোহাম্মাদ ওয়াসিমের করা পরের ওভারে তিন বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডকে ম্যাচের চালকের আসনে নিয়ে আসেন মঈন আলী। ষষ্ঠ বোলারের অভাবে শিরোপা স্বপ্ন ফিকে হতে থাকে পাকিস্তানের। দলকে জয়ের কাছাকাছি এনে মঈন আউট হলেও, স্টোকস ছিলেন ক্রিজ আঁকড়ে। তুলে নেন আসরে নিজের প্রথম অর্ধশতক। ৫২ রানে অপরাজিত থেকে ইংল্যান্ডকে এক যুগ পর এনে দেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা।

২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক ইংলিশদের এনে দিলেন আরো একটি বিশ্বকাপ।

এর আগে, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস হেরে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। নো-বল দিয়ে ফাইনালে বোলিংয়ের সূচনা করেন বেন স্টোকস। যা এবারের আসের কোন ইংলিশ বোলারের প্রথম নো বল। দুই ওপেনারের ব্যাটে শুরুটা আশা জাগানিয়া হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পঞ্চম ওভারে মোহাম্মাদ রিজওয়ানকে ফিরিয়ে ইংলিশদের প্রথম সাফল্য এনে দেন স্যাম ক্যারেন। ১৪ বলে ১৫ রান করেন রিজওয়ান। রিজওয়ানের বিদায়ে ক্রিজে আসেন বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে চমক দেখানে মোহাম্মাদ হারিস। তবে এদিন খোলস ছেড়ে বের হতে পারেন নি তিনি। ব্যক্তিগত প্রথম ওভারের প্রথম বলেই তাকে সাজঘরে ফেরান আদিল রশিদ। ১২ বল খেলে হারিসের ব্যাট থেকে আসে ৮ রান।

দলকে টেনে নিচ্ছিলেন বাবর ও শান মাসুদ। তবে আবারো ইংল্যান্ডকে স্বস্তি এনে দেন রশিদ। ১২তম ওভারে তার গুগলিতে পরাস্ত হয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন পাকিস্তান অধিনায়ক। গুরুত্বপূর্ণ  উইকেটের পাশাপাশি তুলে নেন মেডেন। পরের ওভারে আঘাত হানেন বেন স্টোকস। আউট সুইংয়ে পরাস্ত করেন ইফতিখার আহমেদকে। ৮৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান।

শাদাব খানকে নিয়ে শান মাসুদ প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তবে নিজের ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারে এসে মাসুদের উইকেট তুলে নেন স্যাম ক্যারেন। আরেকপ্রান্তে থাকা শাদাব খানকে পরের ওভারে সাজঘরে পাঠিয়ে ইংল্যান্ডকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন ক্রিস জর্ডান।

১৯তম ওভারে একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নওয়াজ ক্যারেনের তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বড় স্কোরের স্বপ্নভঙ্গ হয় পাকিস্তানের। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাড়ায় ১৩৭ রান।

ইংলিশদের হয়ে ম্যাচটিতে বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন স্যাম ক্যারেন। ৪ ওভারে ১২ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। ফাইনালের ম্যাচ সেরার পুরষ্কারও উঠে তার হাতে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭