ইনসাইড গ্রাউন্ড

সাম্বা তালে ব্রাজিলের প্রথম শিরোপা


প্রকাশ: 20/11/2022


Thumbnail

ফুটবল ইতিহাসের ১৯৫৮ বিশ্বকাপ হয়ে আসে বাঁক বদলের বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে ক্রমে পাল্টে যাওয়া আধুনিক ফুটবল। যেখানে বীজ রোপণ করা হয়েছিল ভবিষৎ ফুটবলের।

বিশ্বযুদ্ধের রেশ কাটিয়ে ততদিনে অনেক দেশই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। যার প্রমাণ এই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য আগ্রহ দেখায় চারটি দেশ। যেখানে ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিল ছাড়া আগ্রহ দেখায় নি কেউই। পরে ফিফা কংগ্রেসের ভোটে জয়ী হয়ে স্বাগতিক দেশ হয় সুইডেন।

এই বিশ্বকাপেও মূলে পর্বে অংশ নেয় ১৬টি দেশ। স্বাগতিক হিসেবে সুইডেন ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পশ্চিম জার্মানি সরাসরি খেলার সুযোগ পায়। বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসে ১৪টি দেশ। ৮ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ১২টি ভেন্যুতে ১৬ দলের অংশগ্রহণে ৩৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় সে বিশ্বকাপে।

এ আসরে ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব করে সুইডেন, অস্ট্রিয়া, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, যুগোস্লাভিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, হাঙ্গেরি, পশ্চিম জার্মানি, ফ্রান্স ও চেকোস্লোভাকিয়া। লাতিন আমেরিকা থেকে অংশ নেয় ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ে। আর উত্তর আমেরিকা থেকে একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ খেলে মেক্সিকো। প্রথমবার ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে খেলার সুযোগ পায় নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।

চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয় অংশগ্রহণকারি দলগুলোকে। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রতিটি গ্রুপের দলগুলো খেলে ৩টি করে ম্যাচ।

গ্রুপ-১ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে পশ্চিম জার্মানি। তবে দ্বিতীয় স্থানের জন্য লড়াই চলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও চেকোস্লোভাকিয়ার মধ্যে। প্লে-অফ ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচটি ২-১ গোলে জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি। বাদ পড়ে চেকোস্লোভাকিয়া ও আর্জেন্টিনা।

গ্রুপ-২ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে ফ্রান্স ও যুগোস্লাভিয়া। সমান ৪ পয়েন্ট ছিল দুই দলেরই। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় গ্রুপ সেরা হয় ফরাসিরা। এই গ্রুপের খেলাতেই ৫৮ বিশ্বকাপ আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক আসে ফ্রান্স-প্যারগুয়ে ম্যাচে। আর ফুটবল বিশ্বের পরিচয় হয় জুস্ত ফন্টেইন নামের এক জাদুকরের সাথে।

গ্রুপ-৩ থেকে শেষ আটে যায় সুইডেন ও ওয়েলস। ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় সুইডেন। ওয়েলস ও হাঙ্গেরির পয়েন্ট সমান ৩ হওয়ায় তাদের খেলা গড়ায় রি-প্লে ম্যাচে। সেখানে ২-১ গোলে আগের আসরের রানার্সআপদের হারিয়ে দেয় ওয়েলস।

আর গ্রুপ-৪ থেকে কোয়ার্টার-ফাইনালের টিকিট পায় ব্রাজিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয় ব্রাজিল। এই গ্রুপেও শেষ ষোলর দ্বিতীয় দল বাছাইয়ে খেলতে হয় প্লে-অফ ম্যাচ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতে পরের ধাপে যায় সোভিয়েতরা। তবে এই গ্রুপের খেলাতে বিস্ময় উপহার দেয় ব্রাজিল। পেলে-দিদি-গারিঞ্চাদের ফুটবল শৈলীতে নিজেদের ইতিহাসের সেরা ফুটবল উপহার দেয় লাতিন আমেরিকার দেশটি।

শেষ আটের ম্যাচে অবশ্য ব্রাজিলের কঠিন পরীক্ষা নেয় ওয়েলস। ১-০ গোলে জেতে ব্রাজিল। তবে এক গোলের কষ্টার্জিত জয় হলেও, সকলের নজর কেড়ে নেন পরবর্তীতে কিংবদন্তি হয়ে উঠা লিকলিকে শরীরের পেলে। জয়সূচক গোলটিও এসেছিল তার পা থেকেই।

তবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে হারাতে বেগ পেতে হয়নি ফ্রান্সকে। ৪-০ গোলে ফরাসিদের জয়ের ম্যাচে জোড়া গোল করেন জুস্ত ফন্টেইন। ফঁতেইনের জোড়া গোলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে ৪-০ গোলে হারায় ফ্রান্স। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় পায় সুইডেন। আর যুগোস্লোভাকিয়াকে ১-০ গোলে হারায় পশ্চিম জার্মানি।

কোয়ার্টার ফাইনালে শৈল্পিক ফুটবলে মুগ্ধ করা পেলের আগমনী বার্তার মূল চেহারা দেখা যায় ফ্রান্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে। তার হ্যাটট্রিকে ফ্রান্সকে ৫-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে ব্রাজিল। ১৯৫০ সালের মারাকানার স্বপ্নভঙ্গের পর আবারো ফাইনালে উঠে সেলেসাওরা। আর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠার কৃতিত্ব দেখায় সুইডেন।

২৯ জুন সুইডেনের রাসুন্দা স্টেডিয়ামে ফাইনাল দেখতে উপস্থিত হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার দর্শক। ম্যাচের শুরুতেই নিলস এরিক লিদহোমের গোলে লিড নেয় স্বাগতিকরা। তবে ভাভা জোড়া গোল করে প্রথমার্ধেই লিড নেয় ব্রাজিল। বিরতির পর স্বাগতিকদের জালে আরো তিনবার বল পাঠায় ব্রাজিল। ৫৫ ও ৯০ মিনিটে জোড়া গোল করেন পেলে। দলের হয়ে বাকি গোলটি আসে অধিনায়ক মারিও জাগালোর কাছ থেকে। ৮০ মিনিটে স্বাগতিকদের হয়ে এক গোল শোধ করেন আগনা সিমন্সন।

আর বিশ্বকাপ পেয়ে যায় নতুন চ্যাম্পিয়নকে। আর পেলে-গারিঞ্চা-ভাভাদের হাত ধরে ব্রাজিল ফুটবলে নতুন যাত্রার শুরু হয়। সাম্বার ছন্দ ও শৈল্পকতার সে মেলবন্ধন আজো মোহিত করে রেখেছে বিশ্বজুড়ে অগণিত ভক্ত-সমর্থকদের।

সেমিফাইনালে ফ্রান্স বাদ পড়লেও অনন্য এক কীর্তি গড়েন জুস্ত ফন্টেইন। ৬ ম্যাচ খেলে করেন ১৩ গোল। যা এখনও জ্বলজ্বল করছে এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড হয়ে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭