ইনসাইড পলিটিক্স

চার মন্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগে ক্ষোভ-হতাশা


প্রকাশ: 22/11/2022


Thumbnail

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলের একমাস আগে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনগুলোতে নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো। নতুন নেতৃত্বের পাশাপাশি দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ওই সব সম্মেলনে তৃণমূলের কর্মীরা তাদের খোলামেলা মতামত ব্যক্ত করছে। যদিও এসব সম্মেলনে গোপন কাউন্সিল বা আত্মসমালোচনার সুযোগ খুব কম। কিন্তু এসব কাউন্সিলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্বেগ এবং হতাশা প্রকাশ করছেন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই বলছেন যে, শেখ হাসিনা একাই লড়াই করছেন। তিনি দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার সঙ্গে যে সহযোদ্ধা থাকা দরকার সেই সহযোদ্ধাদের অনেকেরই দায়িত্বশীলতা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সন্তোষ নয়। বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে অংশগ্রহণকারী তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে যে, দেশের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা গুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করছেন না। কোন কোন মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে এমন কথা নেতাদেরকে এখন প্রকাশ্যে বলছেন তৃণমূলের কর্মীরা। বিশেষ করে চারজন মন্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ সমস্ত মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছে-

অর্থমন্ত্রী: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দীর্ঘদিন ধরেই নীরব। তাকে হঠাৎ হঠাৎ করে দেখা যায়। অনেকের মতে একজন অর্থমন্ত্রী দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অথচ তিনি সবসময় আড়ালে থাকছেন। দেশে যখন ডলার সংকট, ব্যাংকের তারল্য নিয়ে নানারকম গুজব, অপপ্রচার ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে নানারকম আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে সেই মুহূর্তে অর্থমন্ত্রীর নীরবতা আওয়ামী লীগের কর্মীদেরকে ক্ষুব্ধ  করে তুলেছে। কুমিল্লাতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে একাধিক কর্মী অর্থমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একই অবস্থা দেখা গেছে গাজীপুরে। সেখানেও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা পালনে  অর্থমন্ত্রী কি ভূমিকা রাখছেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী: সাম্প্রতিক সময়ে আবার পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় আবার বিদ্যুতের দাম বাড়বে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। এই ঘটনায় তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। তারা মনে করছে সদ্য লোডশেডিং থেকে মুক্ত হয়েছে দেশ। এখন যদি আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তাহলে সেটি একটি ভুল বার্তা দেবে। আওয়ামী লীগের একাধিক তৃণমূলের কর্মী বলছেন যে, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির নিয়ে মানুষের নাজুক অবস্থা। এরকম পরিস্থিতিতে আবার যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে মানুষের জন্য সেটি মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে অনেকেই মনে করছেন যে, তিনি সরকারকে অজনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের সমালোচনা এখন প্রকাশ্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী: পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শেষ নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভিন্ন বক্তব্য, কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষোভেরও সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বলছেন তিনি বিভিন্ন সময় যে সমস্ত বক্তব্যগুলো দিয়েছেন সেই বক্তব্যগুলো দলের জন্য বিব্রতকর। তার মুখ বন্ধ করে বন্ধ করা উচিত বলেও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন ভাবে কথাবার্তা বলছেন   যাতে আমরা দীর্ঘদিনের কূটনীতিক আদর্শ এবং অবস্থান থেকে বিচ্যুত হচ্ছি বলেও আওয়ামী লীগের কোন নেতা মনে করেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী: বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম ক্ষোভ এবং হতাশা। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজার থেকে পণ্য উধাও হয়ে যাওয়া এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর অসহায়ত্ব সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসহায়ত্ব বাড়ছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছেন যে, নির্বাচনের আগে যদি দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা না যায় তাহলে পরে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭