প্রকাশ: 02/12/2022
মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে
লড়াইয়ে গণতন্ত্রপন্থি বাহিনীর অন্তত দুই হাজার যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে দাবি করে মিত্র
দেশগুলোর কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেতা ডুয়া লাশি লা।
তিনি মিয়ানমারের ‘দ্য ন্যাশনাল ইউনিটি
গভারমেন্ট’ (এনইউজি) এর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।
গত বছর পহেলা ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের
মাধ্যমে অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দলের সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির
সেনাবাহিনী। সু চি সহ তার দলের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার বিরুদ্ধে মিয়ানমারের
সাধারণ মানুষ তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে।
উৎখাত হওয়া এনএলডি সরকারের যেসব নেতারা
গ্রেপ্তার এড়িয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন তারা একজোট হয়ে জান্তা সরকারের পাশাপাশি
ন্যাশনাল ইউনিটি সরকার গঠন করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছেন।
রয়টার্স জানায়, ডুয়া লাশি লা মিয়ানমারের
অজ্ঞাত স্থান থেকে রয়টার্স নেক্সট এর সম্মেলনে কথা বলেন। বৃহস্পতিবার তার ওই সাক্ষাৎকারটি
প্রচার করা হয়।
সাবেক শিক্ষক ও আইনজীবী লাশি লা বলেন,
‘‘আমরা (মৃত্যু) কে মূল্য হিসেবে বিবেচনা করি, যা আমাদের অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।”
লাশি লার বয়স সত্তরের কোটায়। তিনি তার
পরিবার নিয়ে কাচিন রাজ্যে তার বাড়িতে পালিয়ে গেছেন।
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী লাশি লা এবং
তার সতীর্থদের সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং নাগরিকদের তাদের সঙ্গে কোনো
ধরনের যোগাযোগ রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
লাশি লা সরকার বিশ্বের নানা প্রান্ত
থেকে সমর্থন পাচ্ছে। তাদের মিত্র সশস্ত্র বাহিনী পিপুলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) পুরো
দেশজুড়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ছবিতে
লাশি লা কে পিডিএফ বাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেখা গেছে। পিডিএফ বাহিনীর বেশিরভাগ
সদস্যই ছাত্র বা নানা পেশাজীবী মানুষ। যারা সামরিক অভিযানের সময় জঙ্গলে পালিয়ে যান
এবং পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে পিডিএফের হয়ে লড়াই করছেন।
লাশি লা বলেন, ‘‘আমি জানি না কখন আমার
মৃত্যু আসবে। এটা ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটবে। আমি দেশের জন্য আমার সবকিছু বিলিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা
করেছি।”
গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধারা ছাড়াও গত বছর
ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিতে
গিয়ে আড়াই হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন
ফর পলিটিক্যাল প্রিজোনার্স।
রয়টার্স জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী
রাশিয়া, চীন ও ভারতের কাছ থেকে সমরাস্ত্র পাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থি যোদ্ধারা শক্তিতে তাদের
সঙ্গে পেরে উঠছে না। সেনাবাহিনী যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বিমান
হামলা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেনা
অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে ১৩ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
যদিও জান্তা বাহিনী বলছে, তারা বেসামরিক
লোকদের উপর নয় বরং ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে।
লাশি লা বলেন, তাদের যোদ্ধারা জান্তা
বাহিনীর প্রায় ২০ হাজার সেনাকে হত্যা করেছে। কিন্তু স্বাধীনভাবে এ্ই সংখ্যা নিশ্চিত
করা অসম্ভব।
বলেন, ‘‘যদি আমাদের কাছে বিমান বিধ্বংসী
অস্ত্র থাকতো, নিশ্চিত হয়ে বলতে পারতাম, আমরা ছয় মাসের মধ্যে যুদ্ধে জিতে যাব।
‘‘ইউক্রেইন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং
ইউরোপের কাছ থেকে যে সহায়তা পাচ্ছে যদি শুধু সেটুকু সহায়তাও আমরা পেতাম তবে মরতে থাকা
এই সব মানুষদের দুর্ভোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত।”
পশ্চিমা দেশগুলো মুখে মুখে এনইউজি-র
প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে এবং জান্তা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা ও কোম্পানির বিরুদ্ধে
নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু তারা মিয়ানমারের বিরোধী দলকে কোনো ধরনের সামরিক সহায়তা
দিচ্ছে না। বলেছে, এটা ওই অঞ্চলের সংগঠন আসিয়ানের বিষয় এবং আসিয়ানের টেবিলে বসেই সংকটের
সমাধান খুঁজে বের করা উত্তম হবে।
এদিকে,আসিয়ানের কনভেনশন অনুযায়ী সদস্যভুক্ত
এক দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আসিয়ান থেকে মিয়ানমারের
সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে লাশি লা বলেন, ‘‘আলোচনার পথ
এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে আগে সেনাবাহিনীকে বেসামরিক মানুষদের হত্যা করা বন্ধ করতে
হবে, রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং সংবিধানের যে অংশ তাদের ক্ষমতাকে
সুরক্ষিত করেছে তা বিলুপ্ত করতে হবে।
‘‘তারপর.....সম্ভবত আমরা আলোচনায় বসব।”
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭