ইনসাইড গ্রাউন্ড

টোটাল ফুটবলের কাছে আটকে গেলো যুক্তরাষ্ট্র


প্রকাশ: 03/12/2022


Thumbnail

নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠে রাউন্ড অব সিক্সটিনের। যেখানে দুই দলের সামনেই একই সমীকরণ। জিতলে চলে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে আর হারলে নিতে হবে বিদায়। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে নকআউট পর্বের প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করলো নেদারল্যান্ডস।

নকআউটের যুদ্ধের আবহ নিয়ে ম্যাচ শুরু করে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচের ৩ মিনিটেই ডাচ গোলরক্ষকের ভাল পরীক্ষা নেন যুক্তরাষ্ট্রের ফরোয়ার্ড ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ। গোলপোষ্টে ১২ গজ সামনে থেকে জোরালো এক শট নেন তিনি। তবে সে শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে পরীক্ষা উতরে যান নোপার্ট। ৭ মিনিটে ম্যাচের প্রথম কর্নার পায় যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে বল পেয়ে ডাচদের ডি-বক্সে জটলা পাকলেও, তা জালে জড়াতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।

উল্টো  ম্যাচের ১০ মিনিটেই জাল খুঁজে নেন ডাচ তারকা মেমফিস ডিপাই। ডান দিকে দিয়ে আক্রমণে উঠে নেদারল্যান্ডস। সেখান থেকে ডেনজেল ডামফ্রিসের দারুণ এক ক্রসে ডি-বক্সের ভেতর বল পান ডিপাই। ঠান্ডা মাথার শটে যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষকে পরাস্ত করে বল জড়ান জালে। এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। ১৮ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিলো ব্লিন্ডের সামনে। এলোমেলো শটে হতাশ করেন দলকে। ২১ মিনিটে ভাল সুযোগ পেয়েও পোষ্টের বাইরে দিয়ে পাঠান ডিপাই।

২৮ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে যান ডিপাই। তার নেয়া শট ডিফ্লেক্টেড হয়। খেলায় ফিরতে চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কয়েকবার ডাচদের রক্ষণে ঢোকার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি দলটি। তবে ৪৩ মিনিটে ম্যাচে ফিরতে পারতো মার্কিনিরা। ডাচ ডিফেন্ডারের ভুল পাস থেকে বল পান টিমোধি উইয়াহ। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট নেন তিনি। তবে বামে ঝাপিয়ে সে শট ঠেকিয়ে দেন নোপার্ট। আবারো ত্রাতা হন ডাচদের। পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণ চালায় নেদারল্যান্ডস। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে একাই যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণভাগে ডুকে পড়েন গাকপো। তবে সতীর্থের অভাবে তার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

তবে প্রথমার্ধের শেষ মুহুর্তে আবারো ডাচদের চমক। যোগ করা সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্ডারদের ভুলের সুযোগ নেন দালি ব্লিন্ড। ফাঁকা জায়গা থেকে জোরালো শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। এবারো গোলে সহায়তাকারী ড্যানজেল ডামফ্রিস। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় নেদারল্যান্ডস।

বিরতির পর দুই দলের খেলার ধারই বাড়ে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়াতে থাকেন দুই দলের ফুটবলাররা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দলে পরিবর্তন আনেন ডাচ কোচ লুইস ফন গাল। ক্লাসেন-ডি রনকে উঠিয়ে তাদের বদলি হিসেবে নামান টিওন কোপমেইনার্স ও স্টিভেন বার্গউইনকে। 

৪৯ মিনিটে রিয়াম ও ম্যাককিনি গোলের সুযোগ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। তবে পরের মিনিটেই আক্রমণ প্রতিহত করতে পা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন টিম রিয়াম। তার পায়ে লেগে বল ঢুকে যাচ্ছিলো নিজেদের জালেই। তবে টার্নার কোন বিপদ ঘটতে দেননি। ৫১ মিনিটে ডাচদের ডি-বক্সের বাইরে থেকে এলোমেলো শট নেন ডেস্ট। ৫৩ মিনিটে পুলিসিচের শট সরাসরি গ্লাভসে জমা করেন নোপার্ট। ৫৪ মিনিটে ম্যাককিনির শট পোষ্টের খানিক উপর দিয়ে চলে যায়। হতাশা বাড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের।

৬০ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন কোডি গাকপো। তবে তার শট ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে ফিরে আসে। সেখান থেকে ডিপাইকে পাস দেন গাকপো। পোষ্ট লক্ষ্য করে বুলেট গতির শট নেন ডিপাই। তবে লাফিয়ে উঠে বলের গতিমুখ বদলে দেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক টার্নার। বাজে ট্যাকল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন নেদারল্যান্ডসের কোপমেইনার্স।

৬৩ মিনিটে রাইট উইং দিয়ে আক্রমণে যান টিমোথি উইয়াহ। তার নেয়া প্রথম শট ডিফেন্ডাররা প্রতিহত হয়। তার পায়েই যায় ফিরতি বল। সেখান থেকে সতীর্থ কাউকে দিতে পারেন নি তিনি। ৬৭ মিনিটে উইয়াহ-ম্যাককিনিকে উঠিয়ে নেন যুক্তরাষ্ট্রের কোচ। বদলি হিসেবে মাঠে নামেন অ্যারনসন ও হাজি রাইট। ৭১ মিনিটে দুর্দান্ত দুটি সেভ করেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক টার্নার। ডামফ্রিসের শট পুশ করে ফিরিয়ে দেয়ার পর সেখান থেকে বল যায় ডিপাইয়ের কাছে। শূন্যে ভেসে সে বলে হেড করেন ডিপাই। তবে টানারর্কে পরাস্ত করতে পারেন নি তিনি। 

৭৫ মিনিটে সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি হাজি রাইট। তবে পরের মিনিটেই বধান কমান তিনি। পুলিসিচের ডিফেন্স চেরা পাসে পা ছুঁইয়ে গোলমুখে বল পাঠান তিনি। নোপার্ট ও ডামফ্রিস চেষ্টা করলেও বল জালে জড়িয়ে যায়। ৭৯ মিনিটে পুলিসিচের শট ফিরিয়ে দেন ডাচ কিপার। তবে ৮১ মিনিটে আবার ডাচদের এগিয়ে প্রথম দুই গোলে অ্যাসিস্ট করা ডেনজেল ডামফ্রিস। বাম প্রান্ত থেকে ব্লিন্ডের ক্রসে দারুণ এক ভলিতে ব্যবধান ৩-১ করেন এই রাইটব্যাক।

৮৬ মিনিটে পুলিসিচের শট কর্নার বিনিময়ে ক্লিয়ার করে দেন ভার্জিল ফর ডাইক। ৮৭ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন ডাচ মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং। শেষদিকে দুই দলই মরিয়া হয়ে গোলের চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি। নির্ধারিত সময় শেষে আর কোন গোল না হলে জয়ের উল্লাসে মাতে ডাচরা। 

এ জয়ে প্রথম দল হিসেবে পায় কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। গ্যালারিতে ঝড় উঠে কমলা রং এর। আর স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় পুড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। রাউন্ড অব সিক্সটিন থেকে বিদায় নিতে হলো পরের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটিকে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭