বারবার বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী নেপাল

আবারও নেপালে বিধ্বস্ত বিমান ৷ যদিও, নেপালে এই ধরনের দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয় ৷ ইতিহাস বলছে, শুধুমাত্র ঘরোয়া বিমান নয়, নেপালে একাধিকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বহু বিদেশি ও আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ৷ পরিসংখ্যান ধরলে দেখা যাবে, গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেপালে অন্তত ২৭টি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে ৷ যার মধ্যে ২০টিকে সাম্প্রতিক সময়ের সবথেকে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা বলে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মতো আন্তর্জাতিক বিমান যেমন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, তেমনই ঘরোয়া বিমান পরিষেবার আওতাভুক্ত তারা এয়ারের বিমানও বিধ্বস্ত হয়েছে নেপালে ৷ নেপালে ঘটে যাওয়া ইদানীংকালের সবথেকে ভয়াবহ ১০টি বিমান দুর্ঘটনা হল-

১) রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্স বিমান দুর্ঘটনা

১৯৬২ সালের ১ অগাস্ট এই দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ ভারতের তিরুবনন্তপুরম (তৎকালীন গাউচার বিমানবন্দর) থেকে যাত্রা শুরু করা বিমানটির সর্বশেষ গন্তব্য ছিল দিল্লির পালাম বিমানবন্দর (বর্তমানে ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) ৷ নেপালের তুলাচান ধুরি এলাকায় ভূপাতিত হয় রয়্য়াল নেপাল এয়ারলাইন্স পরিচালিত ডগলাস ডিসি-৩ নামের বিমানটি ৷ প্রাণ যায় বিমানে থাকা ১০ জন যাত্রী এবং চারজন বিমানকর্মীর মধ্যে সকলেরই ৷ মৃতদের তালিকায় ছিলেন নেপালে নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রদূতও ৷

২) থাই এয়ারওয়েজ বিমান দুর্ঘটনা

১৯৯২ সালের ৩১শে জুলাই থাইল্যান্ড থেকে কাঠমাণ্ডু আসছিল থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ৩১১৷ কিন্তু, অবতরণের আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেটি ৷ পরে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে যে কর্মী ওই বিমানের চালকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন, তিনি ভালো ইংরেজি জানতেন না ! ফলে বিমানচালক তাঁর সমস্যার কথা জানালেও কোনও উত্তর দেননি এটিসির ওই কর্মী ! তার জেরেই ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ৷ এই দুর্ঘটনার পর কর্মীদের ভাষা শিক্ষার উপর আরও জোর দেয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ৷

৩) পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স বিমান দুর্ঘটনা

১৯৯২সালেরই ২৮ সেপ্টেম্বর নেপালে আরও একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে ৷ কাঠমাণ্ডুতে অবতরণের আগেই বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ২৬৮ ৷ প্রাণ যায় বিমানে সওয়ার মোট ১৬৭ জনের মধ্যে সকলের ৷ এখনও পর্যন্ত এই দুর্ঘটনা পাকিস্তান এবং নেপালের ইতিহাসে সবথেকে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে ৷

৪) রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্স টুইন অটার দুর্ঘটনা

আকারে ছোট এবং হালকা ওজনের টুইন অটার বিমানে দু'টি ইঞ্জিন থাকে ৷ কানাডার একটি বিমান সংস্থার তৈরি এমনই একটি বিমান ঘরোয়া উড়ান হিসাবে চালাত রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্স ৷ ২০০০ সালের ২৭ জুলাই সেই বিমানটি নেপালের বাঝাং বিমানবন্দর থেকে আকাশে উড়াল দেয় নেপালেরই ধনগাধি বিমানবন্দরের উদ্দেশে ৷ কিন্তু, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেটি ৷ বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয় দাদেলধুরা জেলার জগবুধায় ৷ মৃত্যু হয় বিমানে সওয়ার ২৫ জনের ৷

৫) ইয়েতি এয়ারলাইন্স বিমান দুর্ঘটনা

ইয়েতি এয়ারলাইন্স এয়ারলাইনার ১০৩ বিমানটিও ছিল নেপালের ঘরোয়া বিমান পরিষেবার অন্তর্ভুক্ত ৷ ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর পূর্ব নেপালের লুকলার তেনজিং-হিলারি বিমানবন্দরে অবতরণের আগেই বিধ্বস্ত হয় সেটি ৷ সেসময় মৃত্যু হয় ১৪ জনের ৷ প্রাণ বাঁচেন মাত্র একজন ৷ তাঁর নাম সুরেন্দ্র কুনওয়ার ৷

৬) অগ্নি এয়ার বিমান দুর্ঘটনা

অগ্নি এয়ারের এয়ারক্রাফ্ট ১০১ বিমানটিও ছিলো ঘরোয়া ৷ নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল বিমানটির ৷ গন্তব্য ছিল লুকলা ৷ তার আগেই ১৪ জন যাত্রী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে বিমানটি ৷ মৃত্যু হয় সকলের ৷ দিনটি ছিল ২০১০ সালের ২৪ অগাস্ট ৷

৭) বুদ্ধা এয়ার বিমান দুর্ঘটনা

বুদ্ধা এয়ারের ফ্লাইট ১০৩ বিধ্বস্ত হয় ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৷ দুর্ঘটনাটি ঘটে নেপালের ললিতপুরে ৷ আবহাওয়া খারাপ থাকায় কাঠমাণ্ডু বিমানবন্দরের কাছে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করছিলেন বিমানচালক ৷ তখনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা ৷ বিমানে সওয়ার ১৯ জনের সকলেরই মৃত্যু হয় ৷

৮) সীতা এয়ার বিমান দুর্ঘটনা

২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সীতা এয়ারের ফ্লাইট ৬০১ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ৷ বিমানটি কাঠমাণ্ডু থেকে লুকলা যাচ্ছিল ৷ এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৯ জনের ৷

৯) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বিমান দুর্ঘটনা

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ২১১ ঢাকা থেকে কাঠমাণ্ডু আসছিল ৷ দিনটি ছিল ২০১৮ সালের ১২ মার্চ ৷ বিমানে যাত্রী ছিলেন মোট ৭১ জন ৷ তাঁদের মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যু হয় ৷ বাকিরা কোনও মতে বেঁচে যান ৷

১০) তারা এয়ার বিমান দুর্ঘটনা

তারা এয়ারের জেট বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২০২২ সালের ৩০ মে ৷ গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই বিমানটি হঠাৎ উধাও হয়ে যায় ৷ পরে সেটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয় ৷ উদ্ধার হয় বিমানের ২২ যাত্রীর মরদেহ ৷