ইনসাইড পলিটিক্স

পর্দার আড়ালে চলছে নির্বাচনী সমঝোতা


প্রকাশ: 27/01/2023


Thumbnail

প্রকাশ্যে রাজনৈতিক আন্দোলন হচ্ছে, বিএনপির বিভিন্ন রকম কর্মসূচি পালন করছে। তার পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু পর্দার আড়ালে চলছে নির্বাচনী সমঝোতা। আর এই নির্বাচনী সমঝোতার একটি প্রকাশ্য রূপ পাওয়া গেল ইভিএমের প্রকল্প বাতিলের মধ্য দিয়ে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ইভিএম সংক্রান্ত প্রকল্পটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে, আসলে অর্থনৈতিক সংকট নয়, বরং ইভিএম নিয়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা থেকেই সরকার সরে এসেছে। এর একটি অন্যতম কারণ হলো বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচন নিয়ে আসা। উল্লেখ্য যে, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সমস্ত দাবি-দাওয়া উচ্চারণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো; ইভিএমে ভোট বাতিল করা। 


বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন দূতাবাস সহ কয়েকটি দূতাবাস সরকারের কাছে এরকম অনুরোধ করেছে যে ইভিএমে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান না করা। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল, অর্ধেক আসনে অর্থাৎ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সে লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। আর এটি ভোট কারচুপির একটি প্রধান হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। তারা বলেছিল, ইভিএমে ভোটগ্রহণ তারা মেনে নেবে না। এর ফলে  নির্বাচন একটি নতুন ধরনের সংশয় এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এ রকম বাস্তবতাতেই সরকারের পক্ষ থেকে ইভিএমে  ভোট গ্রহণ করা থেকে সরে আসা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে। এদের মধ্য দিয়ে বিরোধীদলের একটি দাবী মানা হলো।

বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আরেকটি দাবি ছিলো যে, নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি। যদিও বিভিন্ন মহল বলছে, এটি বিরোধী দলের দাবী ছিল না। বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশনের কথা বলেছিলো। আর অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন দাবি করেছিল, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদেরকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করা। সেই দাবি মেনে নিয়েই নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন বিষয়ে একক ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশন এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। 


রাজনৈতিক সমঝোতার আরেকটি বিষয় ছিল যে বিতর্কমূলক খসড়া ভোটার তালিকা। যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দাবির মধ্যে অন্যতম ছিলো। সেই দাবিও পূরণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে না গিয়ে বর্তমান কাঠামোর মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফর্মুলা বের করার জন্য কূটনৈতিক মহল কাজ করছে। সেই কাজ করতে গিয়ে তারা বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার বেশ কিছু ত্রুটি এবং ক্ষত চিহ্নিত করেছে। যে ক্ষতগুলো সারলেই আগামী নির্বাচনকে অর্থবহ এবং বিতর্ক মুক্ত হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। আর এই প্রেক্ষিতে তারা সরকারের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এবং পরামর্শ দিয়েছিলো। সরকার এখন পরামর্শগুলো মানতে শুরু করেছে। 

বিভিন্ন মহল মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটি সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এই সমঝোতার শর্তগুলো সরকার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ভাবে পালন করছেন। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, একজন মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব ছিল কূটনৈতিক মহল থেকে। আর সেই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে ড. মসিউর রহমানের মতো কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করার কথা ভাবা হচ্ছে। সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করার চিন্তাভাবনা থেকে সরকার সরে এসেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাচন করার জন্য প্রশাসনের একটি নিরপেক্ষ অবয়ব দেওয়ার কথা ছিলো। এজন্যই মাহবুব হোসেনকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে। প্রকাশ্যে আন্দোলন হলেও পর্দার আড়ালে চলছে নির্বাচনী সমঝোতা। একাধিক সূত্র বলছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নির্বাচনী সমঝোতার একটি দৃশ্যমান রূপ দেখা যাবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭