ইনসাইড বাংলাদেশ

দেশে একটি স্থিতিশীলতা আছে: প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশ: 01/02/2023


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই দেশটাকে গড়ে তোলা- এটা আমাদের দায়িত্ব। এখানে আমরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজের আখের গোচাতে আসিনি। বিশ্বব্যাপী অনেক জিনিসের দাম বেড়েছে। কোথায় আমরা ভর্তুকি দিব? আমরা ভর্তুকি দিব কৃষিতে এবং খাদ্যে। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে একটি স্থিতিশীলতা আছে। আমার মনে হয় যেন কিছু লোক আছে, তাদের দেশের স্থিতিশীলতা ভালো লাগে না।

বুধবার (১ ফ্রেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতির পিতার আরেক কন্যা শেখ রেহানা।

গণতান্ত্রিক ধারা এবং আন্দোলনের নামে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারাটি যেন অব্যাহত থাকে তার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। আজ গণতান্ত্রিক ধারাটি অব্যাহত আছে বলেই তো দেশটা উন্নত হতে পেরেছে। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী করেছিলাম বলেই কিন্তু আজকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আছে, গণতান্ত্রিক ধারাটি আছে, এর  মাঝে আমাদের অনেক দুর্যোগও সামাল দিতে হয়েছে, অগ্নি সন্ত্রাস, খুন, লুটপাট, গাছ কেটে ফেলা, হাজার হাজার মানুষকে সেই আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা, হাজার হাজার বাস- প্রায় তিন হাজার ৮শ’ বাস পুড়ানো হয়েছে, ৭০টি সরকারি ভবন-অফিস পুড়ানো হয়েছে, এই যে জ্বালাও-পোড়াও করে একটি মানুষের ক্ষতি করা, পোড়া শরীর নিয়ে যে মানুষগুলো বেঁচে আছে, একবার তাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন। তারা কি দুর্বিসহ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে জীবন চালাচ্ছে। প্রায় তিন হাজার জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, প্রায় পাঁচশ’ মানুষ মারা গেছে, আর বাকিরা আগুনে দগ্ধ অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। হ্যাঁ, আমি আমার সাধ্যমত তাদের পাশে দাড়াচ্ছি, সহযোগীতা করছি।’ 

বিএনপিসহ বিরোধীদের বিভিন্ন আন্দোলন এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটাতো কোনো আন্দোলন হলো না, জীবন্ত মানুষকে হত্যা করে। এইগুলো মেকাবেলা করেও- কখনও হেফাজতি আন্দোলন, কখনও সেই হলি আর্টিজানের ধাক্কা, কখনও সরকার গঠন করার সাথে সাথেই বিডিআর-এর ঘটনা- এমন একটার পর একটা ঘটনা এসেছে। এর সাথে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সবগুলো মোকাবেলা করেও কিন্তু আমাদের অর্থনীতির গতিকে আমরা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আজ দেশে একটি স্থিতিশীলতা আছে। আমার মনে হয় যেন কিছু লোক আছে, তাদের দেশের স্থিতিশীলতা ভালো লাগে না। আমার কথা হচ্ছে, কারো যদি ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছে থাকে, তবে জনগনের কাতারে দাঁড়াবে, নির্বাচন করবে, ভোট করবে- জনগন যাকে চাইবে তারাই ক্ষমতায় আসবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করবার জন্য আজকে ছবিসহ ভোটার তালিকা আছে, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, আইডি কার্ড- এগুলো তো আমাদেরই প্রস্তাব এবং সেভাবেই করা হয়েছে। যেন মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোট দিতে পারে। শান্তিপূর্ণভাবে তার অধিকারটা সে প্রয়োগ করতে পারে। আমরা সেটাই চাই এবং সে ব্যবস্থাটা আমরা কিন্তু করেছি। এটাকে অনেকভাবে, যারা ৩০টা সিট পেয়েছিল, তারা সিট পাবে কোত্থেকে? আমরা কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের সমর্থন আদায় করেছি। এটাতো আমাদের অপরাধ না। আমাদের তো চেষ্টাই থাকবে যে, আমরা আমাদের নিজেদের কাজ করি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তত একটি মানুষও বাংলাদেশে ভূমিহীন থাকবে না, জাতির পিতা শুরু করেছেন, আমরা সেই কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই বহু ভূমিহীন মানুষকে আমরা বিনা-পয়সায় ঘর করে দিয়েছি। জানি না, পৃথিবীতে এভাবে আর কেউ দিয়েছে কি না? কিন্তু আমরা দিয়েছি, আমাদের এখন আরও ৪০ হাজার ঘর করে দিলে আমরা বলতে পারবো, বাংলাদেশে এখন আর কেউ ভূমিহীন নেই। তারপরও যদি কেউ থাকে আমরা খুঁজে বের করছি। এটাই আমাদের লক্ষ্য। সাধারণ ভূমিহীন নয়, হরিজন শ্রেণি, তাদেরকে ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। আমাদের হিজড়া, তাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে, ঘর-বাড়ি করে দিয়ে, তাদের জীবন-জীবিকার সুযোগ করে দিয়েছি। বেদে শ্রেণি- তাদের জন্য ডাঙ্গায় ঘর করে, বিনা-পয়সায় ঘর করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এমনকি কুষ্ঠরোগী, তাদের জন্যও আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর করে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।  

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের স্বাক্ষরতার হার ৭৫.৫ শতাংশ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি। আজকে একটি স্থিতিশীল পরিবেশকে নষ্ট করার অনেক রকম চক্রান্ত হচ্ছে। আমি জনগনের উপর বিশ্বাস করি, জনগনের জন্য কাজ করি। দেশের সেবা করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য।     

বাংলাদেশের জনগনকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, আমার মাটি এবং মানুষ দিয়ে দেশ গড়বো। আমি বিশ্বাস করি এই মাটি ও মানুষ দিয়েই আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবো। ডিজিটাল বাংলাদেশের যেমন সুফল আছে, তেমনি অন্তরায়ও আছে, আপনারা যেখানে যা শুনবেন, অন্তত বাস্তব চিত্রটা দেখবেন- সেটাই আমি চাই। 

ডিজিটাল যুগে ভাষা এবং সাহিত্য চর্চাও ডিজিটালাইজড করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণের বইমেলা আরও বিকশিত হচ্ছে। বইগুলো অডিও ভার্সনও করা যেতে পারে। সব সাহিত্যকর্ম অডিও ভার্সন করতে পারলে চলতে-ফিরতেও শোনা যাবে, পড়া যাবে। সেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের চলা উচিত। যদিও বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মজাই আলাদা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বইমেলায় আসতে পেরে সত্যিই খুব আনন্দিত। আমি যে কথাগুলো বললাম, আন্তর্জাতিক সাহিত্যমেলার ব্যবস্থা করা, আমাদের জেলায় জেলায় বইমেলা অব্যাহত থাকবে। সাহিত্যচর্চা, বই পড়া, সেই ছোট্ট শিশুকাল থেকেই, শিশু সাহিত্যটা আরও বেশি দরকার আমাদের।’

বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর, পুস্তক প্রকাশক সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান ছোটন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহাম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বইপ্রেমীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রূপা চক্রবর্তী ও শাহাদাত হোসেন নিপু।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭