ইনসাইড বাংলাদেশ

৬ উপনির্বাচনে কে জিতলো, কে হারলো?


প্রকাশ: 02/02/2023


Thumbnail

গতকাল বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬ আসনের উপনির্বাচন। এই উপনির্বাচনে ভোটর উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের উপনির্বাচন সংক্রান্ত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, “উপনির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল। প্রায় ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এটা আমাদের অনুমান, তবে চূড়ান্ত উপস্থিতি নয়। সেটি জানতে হলে আমাদের আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।”

ছয়টি আসনের ভোটে অনিয়ম বা কারচুপির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেন সিইসি। তিনি বলেন, “ছয়টি আসনে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ছয়টি আসনে ৪০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৮৬৭টি ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে এবং ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৫৪ হাজার ।”

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপির ছেড়ে দেওয়া এসব আসনের উপনির্বাচন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। যেহেতু বিএনপির সংসদ সদস্যরা এই আসনগুলো থেকে পদত্যাগ করেছে। তাই এই উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। কিন্তু বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াও একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের অংশ হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, কিন্তু পরে নির্বাচনী সময়ে আশানুরূপ সুবিধা না করতে পেরে নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। বিএনপি ২০০৮ সালে নির্বাচনে ২৯টি আসন পেয়েছিল, পরে উপনির্বাচনে ৩০টি অতিক্রম করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করেছিল। ২০১৮ সালে ৬টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু এই উপনির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না, তবুও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। তাহলে এই নির্বাচনে কে হারলো, আর কে জিতলো?    

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, এই উপনির্বাচন মহাজোটের আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য তেমন কি কোনো বার্তা বহন করে? একদিকে যেমন ভোটার উপস্থিতি কম, অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া দুই আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টির যে দুজন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে, তাদের ফলাফল আওয়ামী লীগের জন্য শোভনীয় নয়। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উত্তীর্ণ উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থনের কারণেই জয় লাভ করেছেন। অন্যথায় তার উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভবপর ছিল না। ফলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া জোটের কোনো প্রার্থীদের ওপর ভরসা করে সংসদীয় আসনের নির্বাচনে জয় পাওয়া আওয়ামী লীগের জন্য সম্ভবপর হবে না।

জানা গেছে, কলার ছড়ি প্রতীক নিয়ে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া ভোট পেয়েছেন ৪৬,৩২৩ ভোট পেয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাসানী (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৯, ৫০০ ভোট। ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। এই আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়। তিনি একতারা প্রতীকে ৫০ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়েছেন। 

এছাড়া, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা রেজাউল করিম তানসেন বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মশাল প্রতীকে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ১৯ হাজর ৫৭১ ভোট।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বগুড়া-৪ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন অল্প কিছু ভোটের ব্যবধানে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের কাছে বিজয়ী হয়ে মহাজোটের সম্মান রক্ষা করেছেন,যা আওয়ামী লীগের জন্য শুভকর নয়। এছাড়া, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মহাজোটের মনোনীত জাতীয় পার্টির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। এই আসনটিতে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেনের সমর্থন খুব একটা ভালো বলা যাবে না, যা আওয়ামী লীগের জন্য অশুভকর। 

তবে, ভোটার উপস্থিতি কম হলেও উপনির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে। বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াও এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু এই উপনির্বাচন আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কি পূর্বাভাস বহন করে সেটিই এখন দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭