ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল যারা!


প্রকাশ: 15/02/2023


Thumbnail

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলেও বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে অনেকবার বলা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচন ব্যাবস্থা নিয়ে আজ বিএনপি’র অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারের প্রতিভূ বিএনপি প্রহসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে যে কয়েকটি একতরফা এবং বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে কুখ্যাত।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার গঠন করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। গণতন্ত্রের মোড়কে দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অচিরেই ওই সরকার এক স্বৈরাচারী সরকারে পরিণত হয়। একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন টিকিয়ে রাখার অশুভ লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে। সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলেও বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ফ্রিডম পার্টিকে সাথে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে বিএনপি। ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭৮টি আসন দখল করে বিএনপি।

দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একসময় যেমন ব্যাপক জনসমর্থন সৃষ্টি হয়েছিল, এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচন এবং স্বল্পকালীন সংসদ ও সরকার ব্যবস্থা তৈরি হয়। যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি সরকারের পছন্দমতো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই ২০০৬ সালে চরম দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নির্বাচনকে কলুষিত করার জন্য একটি বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন গঠন করে। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের বয়স বাড়ানো হয়, যেন তিনি তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন। প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানোর জন্য সেসময় সংবিধানও সংশোধন করা হয়।

২০০৬ সালে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চিত রাজনৈতিক সংঘাতে জের হিসেবে ওয়ান ইলেভেন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সেনা সমর্থিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ। এই সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, কয়েকটি বিদেশি দূতাবাস, ড: কামাল হোসেন, ড. মুহম্মদ ইউনূস এবং দেশের শীর্ষ স্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার দুই সম্পাদক। ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকার দায়িত্ব নিয়েই রাজনীতিকে শুদ্ধ করার তত্ত্ব চালু করেন।

রাজনীতিবিদদের গায়ে দুর্নীতিবাজের তকমা লাগিয়ে তাঁদের সামাজিকভাবে হেয় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় আসে ‘মাইনাস ফর্মুলা’। ‘দুই নেত্রীকে সরে যেতে হবে’ শিরোনামে এক সম্পাদকীয় লিখে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ প্রকাশ করেন। দুই নেত্রীকে নানা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ তখন সফল হয়নি। দু’বছরের মাথায় নির্বাচন দিয়ে সরে যেতে হয় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকারকে। নিরঙ্কুশ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এমন বিরাজনীতিকরন যেন না হয়, কোন অগণতান্ত্রিক সরকার যেন দেশের ক্ষমতা দখল করতে না পারে সেই উদ্যোগ নেয় এবং সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের আইন পাস করে এবং পরবর্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ।

দেশের নির্বাচন ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করে, নির্বাচনকে কলঙ্কিত করে আজ বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাওয়াকে অসাংবিধানিক বলেই গণ্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭