নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলেও বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে অনেকবার বলা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচন ব্যাবস্থা নিয়ে আজ বিএনপি’র অভিযোগের শেষ নেই। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারের প্রতিভূ বিএনপি প্রহসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে যে কয়েকটি একতরফা এবং বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবচেয়ে কুখ্যাত।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার গঠন করে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। গণতন্ত্রের মোড়কে দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অচিরেই ওই সরকার এক স্বৈরাচারী সরকারে পরিণত হয়। একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন টিকিয়ে রাখার অশুভ লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে। সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করলেও বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ফ্রিডম পার্টিকে সাথে নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে বিএনপি। ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭৮টি আসন দখল করে বিএনপি।
দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একসময় যেমন ব্যাপক জনসমর্থন সৃষ্টি হয়েছিল, এর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচন এবং স্বল্পকালীন সংসদ ও সরকার ব্যবস্থা তৈরি হয়। যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি সরকারের পছন্দমতো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই ২০০৬ সালে চরম দুর্বলতা প্রকাশ পায়।
২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নির্বাচনকে কলুষিত করার জন্য একটি বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন গঠন করে। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের বয়স বাড়ানো হয়, যেন তিনি তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারেন। প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়ানোর জন্য সেসময় সংবিধানও সংশোধন করা হয়।
২০০৬ সালে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চিত রাজনৈতিক সংঘাতে জের হিসেবে ওয়ান ইলেভেন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। সেনা সমর্থিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ। এই সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, কয়েকটি বিদেশি দূতাবাস, ড: কামাল হোসেন, ড. মুহম্মদ ইউনূস এবং দেশের শীর্ষ স্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকার দুই সম্পাদক। ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকার দায়িত্ব নিয়েই রাজনীতিকে শুদ্ধ করার তত্ত্ব চালু করেন।
রাজনীতিবিদদের গায়ে দুর্নীতিবাজের তকমা লাগিয়ে তাঁদের সামাজিকভাবে হেয় করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় আসে ‘মাইনাস ফর্মুলা’। ‘দুই নেত্রীকে সরে যেতে হবে’ শিরোনামে এক সম্পাদকীয় লিখে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ প্রকাশ করেন। দুই নেত্রীকে নানা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ তখন সফল হয়নি। দু’বছরের মাথায় নির্বাচন দিয়ে সরে যেতে হয় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকারকে। নিরঙ্কুশ বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এমন বিরাজনীতিকরন যেন না হয়, কোন অগণতান্ত্রিক সরকার যেন দেশের ক্ষমতা দখল করতে না পারে সেই উদ্যোগ নেয় এবং সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের আইন পাস করে এবং পরবর্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ।
দেশের নির্বাচন ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করে, নির্বাচনকে কলঙ্কিত করে আজ বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাওয়াকে অসাংবিধানিক বলেই গণ্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
১৯৯৬ সাল ১৫ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচন বিএনপি রাজনীতি বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন শুরুর আগে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলন পরিচালনায় শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি চায় বিএনপির মিত্ররা। তারা মনে করে, লিয়াজোঁ কমিটি না থাকায় বিগত আন্দোলন পরিচালনায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা ছিল।
কারণ, যুগপতের সব দল ও জোটের সঙ্গে বিএনপির পৃথক বৈঠক শেষে তাদের স্থায়ী কমিটিতে কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়াকে যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আন্দোলনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম বলে মনে করে না শরিকরা, বিশেষ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাই এবার এ প্রশ্নে একটা সিরিয়াস মীমাংসা চান মঞ্চের নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে বুধবার (১৫ মে) রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, প্রতিটি জোট ও দল থেকে একজন করে নিয়ে ১০-১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করতে হবে। সেই লিয়াজোঁ কমিটিতে আলোচনার ভিত্তিতে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণীত হবে। তার আগে নিজ নিজ দল ও জোটের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠকে উপস্থিত হবেন।
নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ অতীতের আন্দোলনগুলোতে লিয়াজোঁ কমিটি এভাবে কাজ করেছে। কিন্তু বিগত আন্দোলনে এ প্রক্রিয়ায় কর্মসূচি প্রণীত হয়নি। পাঁচ-দশ মিনিট আগে মিত্রদের কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হতো এবং কর্মসূচির সঙ্গে সহমত না হলেও সেটাই তারা ঘোষণা করতেন। বৈঠক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
যুগপৎ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত করে সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ঈদুল আজহার পর মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সেই আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে পরামর্শ নিতে গত রোববার থেকে মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ ধরনের বৈঠক এবারই প্রথম। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এনডিএম, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এবং মিয়া মসিউজ্জামান ও ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এর আগে গত সোমবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে যুগপতের সব দল ও জোট থেকে দু-একজন করে নিয়ে শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের ওপর জোর দেন সমমনা জোটের নেতারা।
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় প্রেস ক্লাব
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী মার্কিন বিরোধী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
শেখ হাসিনা বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগ ঢাকা-৮
মন্তব্য করুন
১৯৮১ সালের ১৭ মে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন এক বৃষ্টিমুখর দিনে। সেই দিনে লাখো মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউতে জড়ো হয়েছিল জাতির পিতার কন্যাকে দেখার জন্য। তাদের শোক এবং আবেগ ছিল হৃদয়স্পর্শী। সারা বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। জাগরণের এক গান গেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। এই সরকার পুরোপুরিভাবে নতজানু সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু ফারাক্কা নয়, গঙ্গার পানি নয়, বাংলাদেশের ১৫৪টি নদীতে পানি দিতে তারা গড়িমসি করে যাচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, এ করছি, এ হচ্ছে এমন করে সময় শেষ করছে সরকার। এ যে ব্যর্থতা এর মূল কারণ হচ্ছে, সরকারে যারা আছে তারা পুরোপুরিভাবে একটা নতজানু সরকার।