ইনসাইড এডুকেশন

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যতান: ‘বুলিং বা র‍্যাগিং’ রোধে নীতিমালা জরুরী


প্রকাশ: 19/02/2023


Thumbnail

সম্প্রতি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনা রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়, এর আগেও এমন ঘটনা অহরহ শোনা গেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এই ধরনের নির্যাতনের ঘটনা রোধে কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা এবং এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে থাকলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। আবার কেউ কেউ লজ্জা এবং অপমানের ভয়ে কোথাও কোনো অভিযোগ না করেই নীরবে সব কিছু সহ্য করছেন।     

এদিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করে সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শিক্ষাবিদ এবং আইন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এভাবেই সাহসী হতে হয়। সাহস করে প্রতিবাদ করতে পারলেই সমাজটাকে বদলে ফেলা সম্ভব। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতিমালা এবং আইন থাকাটাও অত্যন্ত জরুরী।        

অন্যদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং বা র‍্যাগিং’ রোধে নীতিমালা থাকলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলের ঘটনা না-ও ঘটতে পারতো বলে মনে করছেন হাইকোর্ট। বুলিং রোধে পঞ্চম দফায় নীতিমালার খসড়া দাখিলের পর এ-সংক্রান্ত শুনানিতে হাইকোর্ট এমন মন্তব্য করেন। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এই নীতিমালার ওপর ওই শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে আদালত পরবর্তী অগ্রগতি জানাতে আগামী ৮ মে দিন ধার্য করেন।

‘মোটা বলে সহপাঠী ও শিক্ষকের লাঞ্ছনার শিকার মৃত কিশোরের পরিবার যা বলছে’ শিরোনামে ২০২১ সালের ৮ জুলাই বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ ওই বছরের ১৬ আগস্টে একটি রিট আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং’ রোধে নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বিদ্যালয়ে বুলিং রোধে নীতিমালা বা গাইডলাইন তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে পরদিন ‘অপমানের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা’ শিরোনামে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেদিনই প্রতিবেদনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের চার জন আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সেদিন হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং বা র‍্যাগিং’ রোধে নীতিমালা বিষয়ে রুলসহ আদেশ দেন। পৃথক রুল একইসঙ্গে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আদালতে ওঠে।

আদালতে অরিত্রীর পক্ষে আইনজীবী হচ্ছেন অনীক আর হক ও রিটের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং বা র‍্যাগিং’ রোধে খসড়া নীতিমালাটি দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুষার কান্তি রায়। তিনি বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে নীতিমালার পরবর্তী অগ্রগতি জানাতে ৮ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। পরে আইনজীবী অনীক আর হক  জানান, পঞ্চম দফায় নীতিমালা দাখিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। নীতিমালার ওপর আবেদনকারী পক্ষ থেকে মতামত তুলে ধরা হয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালগুলোতে এ ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এমন ঘটনায় অনেকে আপমানে-লজ্জায়-ঘৃণায় আত্মহত্যা করেছেন- এমন খবরও আমরা প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে দেখছি। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার নেই। সম্ভাবনাময় একটি জীবন শুরুতেই বিপন্ন হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং বা র‍্যাগিং’ রোধে খসড়া নীতিমালাটি দাখিল করা হয়েছে- তার সঙ্গে আবেদনকারীর মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে- হাইকোর্ট শুধু এই নীতিমালা প্রয়োগের আদেশ প্রদান করলেই হচ্ছে না; সেইসঙ্গে জাতীয় সংসদে এটি উত্থাপন করে আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা অত্যন্ত জরুরী। তবে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের  ওই ছাত্রী সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছেন, যে কারণেই বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এভাবে প্রতিবাদ করা, একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করা এবং এই নীতিমালাকে আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এ ধরনের ঘটনাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।                

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মেয়েটি নিঃসন্দেহে অনেক সাহসী এবং প্রতিবাদী। তাঁকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। ওই ঘটনার পর মাঝরাতে যখন ভিডিওটি দেখলাম, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমারও প্রতিবাদ করা উচিত এবং আমি অনশন করেছি। তাঁর এই প্রতিবাদ শিক্ষাঙ্গনের অনাচার, নিপীড়নের মূর্ত প্রতীক। আমরা শিক্ষাঙ্গনে যখন একটি ভয়ের সংস্কৃতির মাঝে আছি, সে সময় এই প্রতিবাদ অনেকের সাহস জোগাবে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। অভিযোগে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপর অভিযুক্ত তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭