ইনসাইড পলিটিক্স

১৪ দলের শরিক দলগুলোতে অসন্তোষ


প্রকাশ: 01/03/2023


Thumbnail

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি ও সমমনা জোটবদ্ধ দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচি দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের তেমন কোনো কর্মসূচি চোখে পড়ছে না। ফলে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠেছে, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে এখন কি আর প্রয়োজন মনে করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ? নাকি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিক দলগুলোকে বাদ দিয়ে এককভাবেই নির্বাচনের চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ? আবার কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে বা পুরোনো মামলা নতুন করে সামনে এনে শরিক দলগুলোকে চাপে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে শরিক দলগুলোতে ছড়িয়েছে অসন্তোষের ডালপালা।

সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার জালে আটকে পড়ায় অস্বস্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের দুই শরিক দল- বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের শীর্ষ নেতারা। এছাড়াও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ১৪ দল নিয়ে তাদের হতাশার কথা। যদিও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এক সময়ে ১৪ দলীয় জোটের হয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব  পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রতি বর্তমান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর উদাসীনতা তাকে হতাশ করেছে বলেও জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র।      

এছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার জালে আটকে পড়ায় তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এখন মুখ খুলেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের দুই শীর্ষ নেতা- মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান এমপি এবং মাহী বি. চৌধুরী এমপি। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাকি শরিক দলগুলোর মধ্যেও দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া । 

তাদের মতে, নানান কারণে এমনিতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের শরিকদের টানাপোড়েন চলছে। দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে। এর মধ্যে এ ধরনের মামলা-মোকদ্দমা প্রমাণ করে ক্ষমতাসীনরা ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ এখন শরিকদের প্রয়োজন মনে করে কিনা- এমন প্রশ্নও তুলেছেন ১৪ দলীয় জোটের কেউ কেউ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের শরিক সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক এবং সাবে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি করার, আমরা রাজনীতি করি। বিএনপি যখন জঙ্গিবাদের সাথে, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির সাথে আঁতাত করেছে। তারা বাংলা ভাইকে প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিকরণ করেছে। বিএনপির ছত্রছায়ায় যখন সারাদেশে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের উত্থান হয়েছে, তখন বামপন্থীরা বাধ্য হয়েছিল আওয়ামী লীগের সাথে জোট করার জন্য। সেদিন বিএনপি যদি মৌলবাদীদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিতো, তাহলে তো আজকে এই পরিস্থিতি হতো না।’

১৪ দলীয় জোট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আর কথা বলে কি হবে? মন্তব্য করেই বা কি হবে? ১৪ দলীয় জোট আছে কি না- তাই তো জানি না। কিছু দিবস পালন করা ছাড়া এই জোটের কাজ কী তা-ও বুঝি না। আসলে আওয়ামী লীগ এখন আর শরিকদের প্রয়োজন মনে করে কি না- সেটাই বড় প্রশ্ন।’

সূত্র জানায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দুই ছেলেসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক। এর আগে দুদক গত ২৬ জানুয়ারি একই অভিযোগে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মান্নান এবং তাদের দুই মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। একই দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাহী বি চৌধুরী এবং তার স্ত্রী আশফা হক লোপার বিরুদ্ধে আমেরিকায় অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী দেশের বহুল প্রচারিত একটি গণমাধ্যমকে জানান, সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী এবং তরিকতবিরোধী ও সহি মতবাদবিরোধী অপশক্তি মিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি করতে চায়। এর অংশ হিসাবেই দুদককে দিয়ে তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করানো হয়েছে। এই মামলার মূল টার্গেট তার দুই ছেলে নয়, টার্গেট মূলত তিনি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। এটা অনেকদিন ধরেই চলছে। ৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ইতোমধ্যে ৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। আয়কর নথিতেও এ বিষয় উল্লেখ আছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে অর্থ আত্মসাৎ বা অর্থ পাচারটা হলো কীভাবে? 

মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ওই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করেছি। আমি এবং আমাদের দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরী দুটি আসন থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিল, আমাদের দুজনেরই একটি পরিচ্ছন্ন অতীত আছে। আমাদের রাজনীতি অত্যন্ত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। আমরা হাওয়া ভবনের দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এসে অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্পধারা বাংলাদেশ গঠন করেছি। দুর্নীতি করে অর্থ আয় করতে চাইলে তো ওই সময় বিএনপির সঙ্গে থাকলেই হতো। দল থেকে বেরিয়ে আসার দরকার হতো না। পেছনে একটি অপশক্তি কলকাঠি নাড়ছে। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। জোটের শরিকদের ভেতরে আস্থাহীনতা, অবিশ্বাস-এসব তৈরি করার জন্য নেপথ্যে কেউ হয়তো কাজ করছে।’

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এখনও বিলুপ্ত করা হয়নি। বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো যেমন ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে দিয়ে বিভিন্ন জোটে বিভাজিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং শরিক দলগুলোর মধ্যে তেমন কিছু এখনও দেখা যায়নি। তবে রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজমান করতেই অপশক্তি ১৪ দলীয় জোটবদ্ধ দলগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির লক্ষ্যে কূটচাল করতে পারে, অসন্তোষ ছড়িয়ে দিতে পারে। আর জোটবদ্ধ শরিক দলগুলোর যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে, সেগুলো আইনী ব্যাপার। আইনের মাধ্যমেই সে মামলাজট পরিষ্কার করতে হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, তবে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলগুলো বাম ও ইসলামপন্থী দলগুলোকে নির্বাচনের আগে কাছে টানছে- এটা স্পষ্ট। হয়তো এসব কারণেই বিরোধী ও সমমনা দলগুলোর কূটচালে প্রলোভিত হয়ে ১৪ দলের শরিক দলগুলোতে অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠতে পারে। এসব ব্যাপারে শরিক দলগুলোর নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখন কেবলই দেখার বিষয় শরিক দলগুলোর ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয় আওয়ামী লীগ? নাকি এককভাবেই নির্বাচনে আসতে চাইছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭