ইনসাইড গ্রাউন্ড

ওডিআইতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়


প্রকাশ: 18/03/2023


Thumbnail

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টা অনুমিত থাকলেও, পা হড়কানোর ভয় ছিলো। সবশেষ ওয়ানডে থেকে ৪টি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিলো বাংলাদেশ। যদিও এই সিরিজে পরীক্ষা-নীরিক্ষার বিষয়টি আগে থেকেই সকলের জানা। তাই তাতে খুব একটা অবাকও হওয়ার কিছু ছিলো না। টি-টোয়েন্টির পর এই ম্যাচ দিয়ে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে তরুণ সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয়ের। অভিষেক ম্যাচেই ব্যাট হাতে দারুণ সফলতা এনে দিয়েছেন দলকে। সাকিব আর হৃদয়ের নৈপূণ্যের পর বোলারদের দাপটে আইরিশদের ১৮৩ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ।

পাঁচ ম্যাচ পর টস ভাগ্য সহায় হয়নি তামিম ইকবালদের। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ের শুরুটা অবশ্য মনপূত হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের শুরুতেই অধিনায়ক তামিম ইকবালের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম। করেন মাত্র ৩ রান। অধিনায়কের বিদায়ের পর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে লিটন দাস ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে বেশিদূর টানতে পারেন নি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে স্টারলিংয়ের কাছে ক্যাচ দেন লিটন। ৩১ বলে ২৬ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

এ ম্যাচে আবার ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের। আইরিশদের বিপক্ষে চার নম্বরে ব্যাটিং করতে আসেন সাকিব আল হাসান। শান্তকে সাথে নিয়ে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এদিন ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। এই মাইলফলকের থেকে হাত ছোঁয়া দুরত্বে ছিলেন সাকিব। প্রয়োজন ছিলো মাত্র ২৪ রানের। ম্যাচের ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে সেই মাইলফলক স্পর্শ করেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। কার্টিস ক্যাম্ফারের বল মিড অফে ঢেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান পূর্ণ করেন সাকিব। তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ৭ হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করলেন তিনি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই ৩০০ ওয়ানডে উইকেটের কীর্তি গড়েছিলেন সাকিব। ৭ হাজার রান ও ৩০০ উইকেট পাওয়া তৃতীয় ক্রিকেটার এখন তিনি। সাকিবের আগে একদিনের ক্রিকেটে এই কীতিত্ব দেখিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়াসুরিয়া ও পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি। তবে এ কীর্তির ক্ষেত্রে সাকিবই দ্রুততম।

দলীয় ৮১ রানে শান্ত বিদায় নেয়। রাউন্ড দা উইকেট থেকে করা অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের বলটি লাইন ধরে রেখে ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ২৫ রান করে আউট হন তিনি। শান্তর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন এই ম্যাচে অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। সাকিবকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন। দুজনের ব্যাটে ভর করে জুটি গড়ার চেষ্টা চালায় স্বাগতিকরা।

আগের তিনটি জুটি পঞ্চাশের আগে থামেলেও দলকে এগিয়ে নিয়েছে সাকিব-হৃদয় জুটি। ওয়ানডেতে অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলের রানের চাকা সছল রাখেন সাকিব। ৬০ বল থেকে ৫০ রান পূর্ণ করেন দুজনে। ক্যারিয়ারের ৫৩তম অর্ধশতক তুলে নেন সাকিব আল হাসান। এরপর থেকে হাত খুলে খেলতে থাকেন তিনি। ইনিংসের ৩৫তম ওভারে হ্যারি টেক্টরের উপর রীতিমতো তান্ডব চালিয়েছেন সাকিব। ৫ চারে সে ওভার থেকে ২২ রান তুলে নিয়ে সেঞ্চুরির আশা জাগান এই অলরাউন্ডার।

সাকিবের পর ক্যারিয়ারের প্রথম একদিনের ম্যাচেই অর্ধশতকের দেখা পান তৌহিদ হৃদয়। ২০০৬ সালে ফরহাদ রেজা ও ২০১১ সালে নাসির হোসেনের পর ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হলেন তিনি। সিনিয়র সাকিবের সাথে বেশ সাবলীলভাবেই ব্যাট করতে থাকেন এই তরুণ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মাঠের চারদিকে শট খেলে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি। সেই সাথে রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটেও বেশ তৎপরতা দেখিয়েছেন হৃদয়।

তবে সেঞ্চুরি থেকে যখন মাত্র ৭ রান দূরে, তখনই নিজের উইকেট বিলিয়ে দিলেন সাকিব। গ্রাহাম হিউমের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের একটি বল জায়গা ছেড়ে খেলতে গিয়ে আলগাভাবে ব্যাট চালিয়েছিলেন সাকিব। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে তা সহজ ক্যাচে পরিণত হয় উইকেটের পেছনে। ভাঙে চতুর্থ উইকেটে ১৩০ বলে ১৩৫ রানের জুটি। ২১৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

ক্রিজে এসেই এদিন মারমুখী ছিলেন মুশফিকুর রহিম। আগ্রাসী মেজাজে মোকাবেলা করেন আইরিশ বোলারদের। স্লগ সুইপে ছয় মেরে শুরুর পর সেটি ধরে রাখেন আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত। ইংলিশদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি পেলেও আইরিশদের বিপক্ষে তা হাতছাড়া হয়েছে ৬ রানের জন্য। ৪৬তম ওভারে গ্রাহাম হিউমের জোড়া আঘাতে রানের গতি কিছুটা কমে আসে বাংলাদেশের। এক বলের ব্যবধানে মুশফিক ও হৃদয়ের উইকেট তুলে নিয়ে দলকে খানিকটা স্বস্তি এনে দেন এই পেসার।

অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছিলেন তৌহিদ হৃদয়। তবে সাকিবের মতো হতাশ হতে হয়েছে তাকেও। ৯২ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে হতাশা সঙ্গী করেই মাঠ ছাড়েন এই তরুণ ব্যাটসম্যান। মুশফিক ৪৪ ও হৃদয় আউট হন ৯২ রানে। টেল এন্ডারদের নিয়ে বাকি সময়টা পার করে দেন ইয়াসির রাব্বি। নির্ধারতি ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাড়ায় ৭ উইকেটে ৩৩৮ রান। ৪টি উইকেট নেন হিউমে।

বাংলাদেশের দেয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভালই জবাব দিচ্ছিলো আয়ারল্যান্ড। দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার স্টিফেন দোহেনি ও পল স্টারলিং। শুরুটা ধীর গতির হলেও দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন দুই আইরিশ ব্যাটসম্যান। সাকিবের করা প্রথম পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে চড়াও হন দোহেনি। এক ছয় ও দুই চারে সে ওভার থেকে ১৫ রান তুলে নেন তিনি। তাতে সুবিধাজনক স্থানে থেকে পাওয়ার প্লে শেষ করে আয়ারল্যান্ড। ১০ ওভারে দলটির সংগ্রহ দাড়ায় বিনা উইকেটে ৫১ রান। তবে ১২তম ওভারে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান। তার বল টার্ন করে দোহেনির ব্যাট ছুয়ে জমা হয় মুশফিকের গ্লাভসে। দলীয় ৬০ রানে প্রথম উইকেট হারায় সফরকারিরা। ৩৪ রান করেন দোহেনি।

সতীর্থের বিদায়ের পর তাকে অনুসরণ করে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার পল স্টারলিং। দোহেনির পরের ওভারেই ইবাদতের একটি শর্ট লেন্থের ডেলিভারিতে পরাস্ত হন স্টারলিং। উইকেটের পেছনে শূন্যে লাফিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। আইরিশররা সে ধাক্কা সামলে উঠার আগেই আবার আঘাত হানেন ইবাদত। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার আগেই হ্যারি টেক্টরকে ফিরতি পথ ধরায় এই পেসার। ৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে আয়ারল্যান্ড।

ক্রিজে দাড়িয়ে দলের এই ব্যাটিং ধসের সাক্ষী হচ্ছিলেন আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডু বালবিরনি। তবে দুঃসময়ে দলকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হন তিনি। ১৬তম ওভারে তাসকিনের দারুণ এক ডেলিভারি ভেঙে দেয় তার স্টাম্প। ৭৩ রানে চতুর্থ উইকেটে পতন হয় দলটির। মাত্র ৫ রানে ফেরেন বালবিরনি। এক ওভার পর আবারো দলকে সাফল্য এনে দেন তাসকিন আহমেদ। লোরকান টাকারকে ফিরিয়ে চাপে ফেলে দেন প্রতিপক্ষকে। স্লিপে দর্শনীয় এক ক্যাচ নেন ইয়াসির রাব্বি। স্কোরবোর্ডে ৭৬ রান তুলতেই পাঁচ ব্যাটসম্যান হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে আয়ারল্যান্ড।

জর্জ ডকরেলকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়েছেন কার্টিস ক্যাম্ফার। তবে ১০৯ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ক্যাম্ফার। জয়ের সুবাস পেতে থাকে স্বাগতিকরা। নাসুম আহমেদ ২৬তম ওভারের শেষ দুই বলে গ্যারেথ ডিলানি ও অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রাইনের উইকেট তুলে নিলে তা সময়ের ব্যবধানে পরিণত হয়। একপ্রান্ত আগলে রেখে হারের ব্যবধান কমাতে থাকেন ডকরেল। 

মার্ক অ্যাডায়ারকে নিয়ে লড়াই করতে থাকেন ডকরেল। নবম উইকেটে স্কোরবোর্ডে ২৮ রান যোগ করেন দুজনে। ইবাদত হোসেনের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন অ্যাডায়ার। ৩১তম ওভারে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ডকরেলের স্টাম্প উপড়ে দিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনিই। 

১৯ ওভার ১ বল বাকি থাকতেই ১৫৫ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। তাতে ১৮৩ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জয়। এর আগে ওয়ানডেতে রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জয় ছিলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৩ রানের। ৪টি উইকেট নিয়ে বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ইবাদত হোসেন। ৩টি উইকেট নেন নাসুম আহমেদ। আগামী ১৯ জানুয়ারি একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭