ইনসাইড পলিটিক্স

কোন পথে হাটছে বিএনপি, নির্বাচন না আন্দোলন?


প্রকাশ: 18/03/2023


Thumbnail

সম্প্রতি তৃণমূল পর্যায়ের আড়াই হাজার নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বিএনপি এই মতবিনিময় করেছে বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সূত্র। সূত্রগুলো বলছে, গত ১০ দিনে মাঠপর্যায়ের প্রায় আড়াই হাজার সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিকে ঢাকায় এনে এ মতবিনিময় করেছে বিএনপি। আড়াই হাজার জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি এ মতবিনিময় কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সরকার বিরোধী একটি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এ মতবিনিময় করেন। তিনি বিএনপির তৃণমূলের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ১০দিনের এ কর্মসূচি শেষ হয়। 

তবে দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কার্যত এ মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয় তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ ও জনসম্পৃক্ত নেতাদের আরও সক্রিয় করতে। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলের বিএনপির ওপর একটি চাপ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ)  সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বারিধারার ভারতীয় হাইকমিশনারের বাস ভবনে যান বিএনপির পাঁচ নেতা। ওই দিন ভারতীয় হাইকমিশনারের নৈশভোজের আমন্ত্রণে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম এই নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন। সেখানে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় হাই কমিশনের সঙ্গেও বিএনপির নীতিনির্ধারক এসব নেতাদের কথা হয়েছে। 

দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, সরকার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হলেও তা কতটা সফল হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, প্রতিটি মতবিনিময়ের আগে দলের শীর্ষ নেতারা সামনের আন্দোলনের কর্মসূচি ও কৌশল নিয়ে চেয়ারম্যানদের মতামত জানতে চেয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ চেয়ারম্যানই সুনির্দিষ্ট করে মতামত বা পরামর্শ দিতে পারেননি। বেশির ভাগের বক্তব্যে দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক বিষয়ে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও তৃণমূলের নেতারা মূলত নির্বাচনমুখী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যে বৃহত্তর আন্দোলন গড়তে চাইছে, তাতে সাধারণ মানুষসহ সব পক্ষের ব্যাপক অংশগ্রহণ আশা করছে দলটি। সম্প্রতি ইউনিয়ন থেকে থানা, জেলা ও মহানগরে পর্যায়ক্রমে যে পদযাত্রার কর্মসূচিগুলো করা হয়, এর উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে কাছে টানা। তবে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের যথেষ্ট মতের অমিল রয়েছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং ব্যালটের মাধ্যমে সরকারের হেন বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে।  

দলটির নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে যাদেরকে বহিষ্কার করেছিল, তাদের ক্ষমা করে দিয়ে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে। যাতে দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব-কোন্দল দেখা না দেয়। ক্ষমতায় থাকার পর তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অথচ কাজটা প্রথমে করার দরকার ছিল বিএনপির। এখন বিএনপির হাইকমান্ডের উচিত হবে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে নানা সময় যাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের ফিরিয়ে নেওয়া। এতে দলের শক্তিও বাড়বে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।   

তবে ভারতীয় হাই কমিশনের সাথে নির্বাচন বিষয়ে কি কথা হলো?- তা খোলাসা করে বলতে পারেনি দায়িত্বশীল সূত্রটি। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রটি বলছে, নৈশভোজে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের সাথে ভারতীয় হাই কমিশনের কি কথা হলো, তারাই বলতে পারবেন। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে একটি চাপ রয়েছে। তবে কি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে?- এমন প্রশ্নে সূত্রটি বলছে, এটা দলের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিবেন। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত একমাত্র তারাই দিতে পারেন।    

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়- এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের একটি চাপ রয়েছে। আর এই চাপটি যেমন সরকার দলের ওপর রয়েছে, তেমনই সরকার বিরোধী ও অন্যান্য দলগুলোর ওপরও রয়েছে। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তবে দীর্ঘদিন ধরে সরকারে বিরুদ্ধে বিএনপি যে ধরনের অভিযোগ করে আসছে, তা মিথ্যা প্রমাণিত হবে। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি যে দাবিগুলো জানিয়েছে- সেগুলোর একটি সমঝোতা নির্বাচনের আগে অবশ্যই হবে। একদিকে বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছে, অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনের মাঠও গুছাচ্ছে। তৃণমূলের নেতাদের মতামত অবশ্যই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অজানা নয়। এখন দেখার বিষয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে কি করে বিএনপি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭