ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্র, বিএনপি ভারতমুখী


প্রকাশ: 26/03/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কূটনীতিকপাড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির যোগাযোগ বেড়েছে। শুধু কূটনীতিকপাড়ায় নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু'টি রাজনৈতিক দল স্ব স্ব অবস্থান থেকে জোর লবিং, তদবির করছে। এই সমস্ত লবিং এবং তদবিরের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ মনে করছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার পথে প্রধান বাধা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দাবি তুলেছে। এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান খোলামেলা এবং সুস্পষ্ট। 

গত ২০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে ২০১৮ নির্বাচন প্রসঙ্গ আনা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর ওপর দমনপীড়ন-নির্যাতন চলছে। এর দুদিন পরেই আওয়ামী লীগের সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ছুটে যান মার্কিন দূতাবাসে। সেখানে তারা মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। প্রচ্ছন্নভাবে বিএনপি যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থেকে নির্বাচনে না আসে তাহলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন এগিয়ে নেওয়ার একটি বার্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগ দিয়েছে। কিন্তু মার্কিন দূতাবাস কতটা নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করবে এক্ষেত্রে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো তৈরি হয় ওয়াশিংটনে। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অস্বস্তি কাটিয়ে তোলার জন্য একটি তৎপরতা আওয়ামী লীগের মধ্যে দৃশ্যমান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন মুখে মার্কিন বিরোধী কথা বললেও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘন ঘন যাচ্ছেন এবং সেখানকার বিভিন্ন থিঙ্ক-ট্যাঙ্কদের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি লবিস্ট ফার্ম নিযুক্ত করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। যাদেরকে ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বটে কিন্তু তারা আসলে দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি আগামী এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন যাওয়ার কথা। সেখানে তিনি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কিন্তু তার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিনেটর এবং প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। 

আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতার ধারণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি শেষ পর্যন্ত নমনীয় হয় তাহলে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না। অন্যদিকে বিএনপি এখন অনেকটাই ভারতমুখী এবং ভারতকে বশে আনার জন্য চেষ্টা করছে। গত ১৬ মার্চ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হন। এটি নিয়ে বিএনপির মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া থাকলেও বিএনপির হাইকমান্ড ইতিবাচকভাবে দেখছেন। বিএনপির প্রায় সব নেতাই বিশ্বাস করেন, ভারত যদি নমনীয় না থাকতো তাহলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারতো না। 

বিএনপির অধিকাংশ নেতা মনে করেন, আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় থাকার প্রধান রহস্য হলো ভারতের সহযোগিতা এবং এমনকি আগামী নির্বাচনের ব্যাপারেও ভারত সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেয়ার পর বিএনপির নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। তারা এখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করছেন। ২০১৮ নির্বাচনের আগেও বিএনপি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছিল এবং ভারত সে সময় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করে না, সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে তাদের কোনো আতাঁত নাই- এই ধরনের কথাবার্তা বলেছিল। কিন্তু ভারত বিএনপির নেতাদের এই সমস্ত কথাবার্তা খুব একটা আমলে নেয়নি। যার ফলে এখন পর্যন্ত ভারত বিএনপি বিমুখ হয়ে চলে আসে। তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপির ব্যাপারে  ভারতের যে ভুল গুলো সেগুলো ভাঙ্গানোর কাজ চলছে এবং ভারত যদি শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ অবস্থানে চলে যায় তাহলে আওয়ামী লীগ সরকারের টিকে থাকা কঠিন। আর তাই প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল দুই প্রভাবশালী দেশের কাছে এখন ধরনা দিচ্ছে তাদের কৌশল যেন জয়যুক্ত হয় সে লক্ষ্যে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭