প্রেস ইনসাইড

এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে প্রথম আলোর মিথ্যাচার!


প্রকাশ: 06/04/2023


Thumbnail

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল ও চক্রান্তকারীদের শাস্তির দাবিতে মানব-বন্ধন করেছে দেশের স্বাধীনতা-সচেতন নাগিরক সমাজ। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ মানব-বন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এতে বিনোদন জগতের অনেকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সাতবারের মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার জয়ী চিত্রনায়ক রিয়াজ, তিন বার এই পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী তারিন জাহান ও অভিনেত্রী তানভিন সুইটিসহ আরও অনেকে। তারা বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোতে গত ২৬ মার্চ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে কটাক্ষ করে মিথ্যা, বানোয়াট ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ পরিবেশন করার তীব্র সমালোচনা করেছেন। সেই সঙ্গে এ ধরনের হীন ষড়যন্ত্রের বিচার দাবি করেছেন।

অন্যদিকে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির মদদপুষ্ট প্রথম আলো এবার মেতেছে অন্য আরেক মিথ্যাচারের ষড়যন্ত্রে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের মদদপুষ্ট প্রথম আলো এবার সরকার ঘোষিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের মিথ্যাচার প্রচার শুরু করেছে ফলাও করে। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে সন্ধ্যা ৬ টা ৫৩ মিনিটে ‘আপনারা কেউই বাঁচবেন না: মির্জা ফখরুল’- শিরোনামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একটি ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। এছাড়াও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান এবং প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার পর থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের মদদপুষ্ট হয়ে এই আইন নিয়েই লাগাতার সংবাদ প্রকাশ করছে দৈনিকটি। 

সূত্রটি বলছে, আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল এবং চক্রান্তকারীদের শাস্তির দাবিতে যে মানব-বন্ধন হলো সে সম্পর্কে কোনো সংবাদ করেনি প্রথম আলো। অথচ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে খবর ভাসছে। প্রথম আলোর শ্লোগান- সত্যের সন্ধানে প্রথম আলো, তবে আজকের দিনের এমন একটি সত্য ঘটনার সন্ধান কি জানে না প্রথম আলো? নাকি সত্যের সন্ধান থেকে বিরত থেকে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছে দৈনিকটি? প্রশ্ন হলো, দেশে প্রথম আলো ছাড়াও আরও অনেক সংবাদ মাধ্যম রয়েছে। কিন্তু একমাত্র প্রথম আলোই এই আইনী বিষয়টি নিয়ে বেশি মাতামাতি করছে, কিন্তু কেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে প্রথম আলো?                    

বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) প্রথম আলোতে প্রকাশিত মির্জা ফখরুলের বক্তব্য, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে এখনো অনেকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন না বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘যে জাতি নিজে উঠে দাঁড়াতে পারে না, সে জাতিকে কে দাঁড় করাবে। আপনাদের (সাংবাদিক) বলছি, আপনারা কেউই বাঁচবেন না।’ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। গত সোমবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।’ 

‘মির্জা ফখরুল জানান, স্থায়ী কমিটির সভায় নিবর্তনমূলক আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, সাংবাদিক এবং নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিক এবং নাগরিকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবিলম্বে এই নিবর্তনমূলক কালো আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার দাবি জানায় স্থায়ী কমিটি।’- প্রথম আলোর সংবাদে প্রকাশ করা হয়েছে।  

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পাঠিয়েছে, তাতে আইনটির দুটি ধারা (২১ ও ২৮) পুরোপুরি বাতিল এবং আটটি সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এসব ধারার বেশির ভাগ বাক্‌স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। 

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে দুটি ধারা বাতিলের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর, সেই ধারা দুটি বাতিল করা হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন, কোনো অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার এবং অপব্যবহার বন্ধে আইনের কিছু সংস্কারের বিষয়ে সরকার আলোচনা করছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার মর্যাদা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়গুলোতে মানুষের আবেগ-অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু দেশের ভিত্তির এই বিষয়গুলো নিয়ে কটাক্ষ করে স্বাধীনতা বিরোধীরা একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে থাকে। সে জন্য সরকার এই ধারা বাতিল করবে না।

অন্যদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার কথা বলা রয়েছে ২৮ ধারায়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দেশে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে বা উসকানির মাধ্যমে একটা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার এই ধারাও কোনোভাবে বাতিল করা যাবে না বলে সরকার মনে করছে।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করে কথা বা উদ্ধৃতি করা, এটা রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিদের এদেশে থাকারই কোনো অধিকার নেই। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে- তারা এই দেশে না থাকলেই পারেন। যে দেশ তাদের পছন্দ- তারা সে দেশে চলে যেতেই পারেন। এ দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বর্তমান সরকার যে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের অনেক দেশকেই টপকে যাবে বাংলাদেশ। সে কারণে আমাদের দেশীয় সরকার বিরোধী চক্রকে কাজে লাগিয়ে একটি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিরোধী একটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল। সরকার যে আইনগুলো প্রণয়ন করছে, তারই প্রেক্ষাপটে দেশকে রক্ষা করতেই সে আইনগুলো করা হচ্ছে। কাজেই এসব আইনের বিরোধীতা করে কোনো ফলাফল আশা করাটা ঠিক হবে না। যেহেতু প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিল দাবি করে আন্দোলন হচ্ছে, এখন দেখার বিষয় আর কতদিন এ ধরনের মিথ্যাচার করে হীন ষড়যন্ত্র চালায় প্রথম আলো? 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭