ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের উপদেষ্টামন্ডলীর প্রস্তাব


প্রকাশ: 23/04/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে বিভিন্নমুখী তৎপরতা চলছে। এই তৎপরতার অংশ হিসেবে প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো কিভাবে হবে তা নিয়ে কূটনৈতিক মহল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। বিএনপি বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু বিএনপির দাবি সংবিধানবহির্ভূত হিসেবে নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে কূটনীতিকরা আওয়ামীলীগ-বিএনপির দাবি মাঝামাঝি একটি পর্যায়ে আসার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তারা এমন একটি অবস্থান চায় যেখানে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ করবে। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই সেটা করা সম্ভব বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আর এটি করতে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামোর একটি রূপরেখার কাজ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। 

নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই হবে। তবে এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিবেন ১০ সদস্যের একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টামন্ডলী। এই নিরপেক্ষ উপদেষ্টামন্ডলী থাকবেন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ১০ নিরপেক্ষ ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রী এই দশজন উপদেষ্টাদের পরামর্শ অনুযায়ী সকল দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের ক্ষমতা রুটিন কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা হবে। নির্বাচনকালীন সমস্ত কর্মকাণ্ড উপদেষ্টামণ্ডলীর পরামর্শে গৃহীত হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রেখে তারা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে যেকোনো সমঝোতার অন্যতম এবং প্রধান শর্ত হতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ। কিন্তু সেটির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এবং কূটনৈতিক মহল কেউই একমত নয়। 

বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত হবে। সংসদীয় দলের নেতা যিনি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সে বিবেচনায় থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে পরিবর্তনের কোনো সাংবিধানিক সুযোগ নেই। আর এই কারণেই কূটনীতিকরা মনে করছেন যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই একটি নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। যে সরকারের মন্ত্রীরা থাকবেন দপ্তরবিহীন এবং তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব থাকবেনা নির্বাচনকালীন সময়ে। এই মন্ত্রিসভা মোটামুটি অকার্যকর এবং রুটিন দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। 

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ১০ সদস্যের উপদেষ্টামন্ডলী থাকবেন যে উপদেষ্টামন্ডলী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হবেন এবং অনেকটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যেভাবে উপদেষ্টামন্ডলী গঠন করা হয় এখানেও সেই একই কায়দায় উপদেষ্টামন্ডলী গঠনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই উপদেষ্টামন্ডলী প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনের ব্যাপারে সরাসরি পরামর্শ প্রদান করবেন এবং সেই সমস্ত পরামর্শের আলোকেই সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হবে। যে ৯০ দিন এই নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে সেই ৯০ দিনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত করা হবে, প্রধানমন্ত্রী রুটিন দায়িত্ব ছাড়া কোনো রকম দায়িত্ব পালন করবেন না। এই রকম একটি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে খুব শীঘ্রই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির টেবিলে দেয়া হবে বলেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে। তবে এই নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টামন্ডলী কারা থাকবেন সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন চূড়ান্ত গ্রহণ করা হয়নি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলকে আগে নীতিগতভাবে এই প্রস্তাবের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিতে হবে। যদি তারা নীতিগতভাবে প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেন তাহলেই পরবর্তী পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আওয়ামী লীগ বর্তমান সংবিধান কাঠামোর মধ্যে যেকোনো গ্রহণযোগ্য আপোষ প্রস্তাবে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে প্রস্তুত। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে সংবিধানের আওতার মধ্যে থেকে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা কিছু করা দরকার সেটি করতে তারা প্রস্তুত। আর এখানে আওয়ামী লীগের প্রধান বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল রাখা। আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলছেন যে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হতে পারে মাত্র দুটি কারণে। একটি যদি তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারান আর দ্বিতীয়ত তিনি যদি পদত্যাগ করেন। কিন্তু পদত্যাগ করলেও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি বহাল থাকবে। এরকম বাস্তবতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর  নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন হতে হবে। এ ব্যাপারে কূটনীতিকদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো শেষ পর্যন্ত বিএনপি এই প্রস্তাবের ব্যাপারে কতটুকু সাড়া দেয় তার উপর নির্ভর করছে এই নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭