ইনসাইড পলিটিক্স

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিপরীতে আওয়ামী লীগের পাল্টা কূটনীতি


প্রকাশ: 29/04/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আওয়তায় করতে চায়। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচনের যাবতীয় ক্ষমতা ন্যস্ত করা হবে নির্বাচন কমিশনের ওপর। এই বক্তব্যটিকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার দিকেই প্রধান মনোযোগ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। পুনরায় ক্ষমতায় আসা নয় বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অসাড়, অযৌক্তিক প্রমাণই আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক-কূটনীতির প্রধান লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি দেশের সফরে রয়েছেন। জাপান সফর শেষ করে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। এই সফরে মূলত বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে তাঁর আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার কথা রয়েছে। তবে এই বৈঠকের ফাঁকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক, নীতিনির্ধারক এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই সমস্ত বৈঠকে তিনি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং সংবিধানকে সমুন্নত রাখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন।

মূলত চলতি বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক কূটনীতি করছে এবং এই কূটনীতির প্রধান লক্ষ্য হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অগণতান্ত্রিক এবং অযৌক্তিক হিসেবে প্রমাণ করা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে বৈঠকেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সংবিধান সম্মতভাবে অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয়, একইভাবে বাংলাদেশে নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপরীতে যে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা বলা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে: (ক) অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এটি নিশ্চিত করা, (খ) নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া, (গ) নির্বাচনকালীন সরকারের ক্ষমতা সীমিত করা, (ঘ) প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচনের নিরপেক্ষ রাখা এবং (ঙ) আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অবাধে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া।

এই বক্তব্যগুলোই এখন প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে বলা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাথে বৈঠকের আগে মার্কিন দূতাবাসে মধ্যাহ্নভোজে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ নেতৃবৃন্দ। তারাও সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির অসাড়তা প্রমাণ করেছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির ব্যাপারে সহমত নয়। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য কোন ধরনের চাপও সৃষ্টি করছে না। বরং তারা নিশ্চিত করতে চায় একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। সেই ব্যাপারে সরকার তাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি যে অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য এটিও আওয়ামী লীগ ব্যাখ্যা করছে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, পাল্টা কূটনীতিতে আওয়ামী লীগ বেশ সফলও হয়েছে এবং ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন না করে তাহলে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের একটি কূটনৈতিক বিজয় অর্জিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এর ফলে বিএনপির নির্বাচন বয়কট আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বরং বিএনপির ওপর একটি চাপ আসবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার এবং সেখানে বিএনপি চাপে পরবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্রমতে, এই কৌশল নিয়েই এখন সরকার এগুচ্ছে। এখন দেখার বিষয় যে আন্তর্জাতিক মহলকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কতটা সচেতন করতে পারে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭