ইনসাইড বাংলাদেশ

সাইবার সন্ত্রাসীদেরকে রুখতেই হবে!


প্রকাশ: 07/05/2023


Thumbnail

সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর আওতায় পড়ে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্ম। এ সকল প্লাটফর্মে তাদের নিজস্ব প্রণিত নিয়ম সোশ্যাল কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস বা সোশ্যাল কমিউনিটি গাইডলাইনস ব্যথিত আর কোনো ধরনের সেন্সর না থাকার কারণে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে- যে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি- এমনকি রাষ্ট্র প্রধান সম্পর্কেও মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া গল্প-গুজব বানিয়ে প্রচার এবং প্রকাশ করা হরহামেশাই চোখে পড়ছে। বাংলাদেশের সরকার, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এমনকি সরকার প্রধানও এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া গল্প-গুজব এবং অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন বারবার।  

বাংলাদেশের সাইবার আইন অনুযায়ী এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রকাশ ও প্রচার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু দেশের সীমানার বাইরে থেকে এই সাইবার সন্ত্রাসীরা মিথ্যা, বানোয়াট, বিকৃত এবং মনগড়া তথ্য প্রকাশ করে দেশে এবং দেশের বাইরে গণমানুষের মনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিদিনই। কিন্তু এসবের প্রতিকার কি? প্রতিরোধ করার উপায় কি? এখনই সময় এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের রুখে দেবার। এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের রুখতেই হবে। 

সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরকে কেন্দ্র করেও এ ধরনের মিথ্যাচার এবং গুজব ছড়ানো হয়েছে। অতি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ৪০তম রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অুনষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (৫ মে) লন্ডন পলমলে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মার্লবোরো হাউসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক কক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও  যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যে বৈঠকের ছবি বাংলাদেশের মূল ধারার গণম্যাধ্যম এবং বিশ্ব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত এবং প্রকাশিত হয়েছে। 

দেশের মূলধারার গণমাধ্যম এবং বিশ্ব গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরে যুক্তরাজ্যের (ইউকে) প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা।’

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তার দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভক্ত। সুনাক চান- তার মেয়েরা যেন শেখ হাসিনার মতো নেতা হন। সুনাক বলেন, ‘আপনি আমার দুই মেয়ের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা।’    

অথচ এই সাইবার সন্ত্রাসীরা বলছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কোনো বৈঠকই হয়নি। এ ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট, গুজব, অপপ্রচার সাইবার আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব সাইবার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা এখন সময়ে দাবি।

সূত্রমতে, মুশফিকুল ফজলে আনসারি নামের একজন বাংলাদেশি ব্যক্তি আমেরিকায় অবস্থান করার সুবাধে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার ফেইসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সে সব সময়ই বাংলাদেশের বর্তমান সরকার, সরকার প্রধান এবং সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া গল্প তার ফেসবুক প্রোফাইলে এবং ইউটিউবে প্রচার করে থাকে। এ ধরনের সাইবার সন্ত্রাস বাংলাদেশের সাইবার আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেই জানিয়েছে সূত্র।    

মুশফিকুল ফজলে আনসারির ফেইসবুক প্রোফাইল পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সরকার বিরোধী মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বিভিন্ন কন্টেন্ট, সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সরাসরি কটাক্ষ করে মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া কন্টেন্ট এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন সংবাদ তার ফেসবুক প্রোফাইলে শোভা পাচ্ছে। এছাড়াও, সে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরকে ঘিরে সরকার বিরোধী বিভিন্ন ব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে মিথ্যা, বানোয়াট এবং নেতিবাচক বক্তব্য বা কন্টেন্ট তার টাইমলাইনে দিয়ে রেখেছে।

এছাড়াও, বেশ কিছুদিন থেকেই পিনাকি ভট্টাচার্য নামের একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। সে সম্প্রতি সরকারি বিভিন্ন আমলা এবং সরকার দলীয় নেতারা বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে বিদেশে পাচার করার মিথ্যা তথ্য দিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করে ফেসবুক এবং ইউটিউবে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রন্তি ছড়িয়েছে। ওই কন্টেন্টে সে বাংলাদেশ সরকারকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেও অভিহিত করেছে। তাছাড়া, বাংলাদেশের সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য দিয়ে কন্টেন্ট তৈরি, এমনকি কুৎসিত, অসংলগ্ন ভাষা ব্যবহার করেও কন্টেন্ট তৈরি করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। সেসব কন্টেন্টগুলো সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে।         

সূত্র আরও জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান এবং নাজমুস সাকিবের নামে গত রোববার (৭ মে) রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটির বাদী হয়েছেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- ইব্রাহীম আলী ও আনিস মিয়া। একইসঙ্গে মামলায় ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলাটি আমলে নিয়ে রংপুরের সিআইডি পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ড. আব্দুল মজিদ। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন শাম্মি আক্তার, আজগার আলী, আমিনুল ইসলাম, আহসান হাবীব জুয়েলসহ কয়েকজন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রুহুল আমিন তালুকদার।   

অভিযুক্ত টিটো রহমান রাজধানীর জিগাতলা এলাকার মৃত ডা. মতিনুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। ‘নাগরিক টিভি’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। নাজমুস সাকিব সবুজবাগ এলাকার জলিলুর আজমের ছেলে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাজমুস সাকিব নিজের পরিচয় দেন নাগরিক টিভির বার্তা সম্পাদক হিসেবে।

সূত্রটি দাবি করছে, এ ধরনের অপরাধে শুধুমাত্র বাংলাদেশের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করলেই হবে না। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে এই সকল সাইবার সন্ত্রাসীদের যে কোনোভাবে রুখতেই হবে। এখন বাংলাদেশে একটিই সমস্যা, সেটা হচ্ছে এই সাইবার সন্ত্রাস। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে বিভিন্ন জায়গায় এমনভাবে আক্রমণ করছে, যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। 

সূত্রটি বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যেসব ব্যক্তিরা এসব সাইবার সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের নেপথ্যে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক লন্ডনে বসে থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে দলীয় পদ বাণিজ্য, চাঁদা বাণিজ্য প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের পৃষ্টপোষকতা দিয়ে লালন-পালন করছে। সোশ্যাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশের সরকার এবং সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিতর্কিত করতেই এই সাইবার সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারেক রহমান।      

এসব সাইবার সন্ত্রাসীদের রুখতে হলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেরও এখনই পদক্ষেপ দিতে হবে। যেমন, কানাডা এবং ভারত ইতিমধ্যেই গুগলের কাছে আবেদন জানিয়েছে, এসব সাইবার সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের দেশে ফেসবুক এবং ইউটিউবের অফিস করার জন্য। বাংলাদেশেরও এখনই সময় সাইবার সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭