ইনসাইড পলিটিক্স

শেষ হয়ে যাচ্ছে আজমত উল্লার রাজনৈতিক অধ্যায়?


প্রকাশ: 26/05/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাদের অন্যতম। একজন শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি, আদর্শের প্রশ্নে কখনো আপোষ করেননি দলের এই দুঃসময়ের সাথী। বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল গাজীপুরে। কিন্তু সেই আজমত উল্লা হোঁচট খেলেন। জীবনের এই শেষ সময়ে এসে এই হোঁচট তাকে কি রাজনীতি থেকে ছিটকে দিল?—গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর এই প্রশ্নই সামনে চলে এসেছে। 

আজমত উল্লা হলেন আওয়ামী লীগের সেই সমস্ত পরীক্ষিত নেতাদের একজন যারা তিল তিল করে বেড়ে উঠেছেন, সংগঠনের জন্য জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করেছেন। উচ্চশিক্ষিত আওয়ামী লীগের এই নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক গ্রহণ করেছেন। আইনজীবী হিসেবে তিনি যতটা না জনপ্রিয় তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। একসময় গাজীপুরের অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে ছিলেন। গাজীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি গাজীপুর আওয়ামী লীগের অপরিহার্য এবং অবিসংবাদিত নেতায়  হিসেবে বিবেচিত হতেন। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকেই তার রাজনীতিতে বিপর্যয়ের অধ্যায় শুরু হয়। 

একটা সময় মনে করা হতো গাজীপুর হলো দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সংগঠন ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রচন্ড দুঃসময়ও গাজীপুরের সংগঠন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে গাজীপুরের ভূমিকা বিরোচিত। আর সেই ভূমিকার পিছনে যাদের নাম বিশেষভাবে আলোচিত হয় তাদের মধ্যে অবশ্যই আজমত উল্লা অন্যতম। প্রয়াত নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার এবং আজমত উল্লা জুটি গাজীপুর আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছে, বিস্তৃত করেছে এমন কথা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাই বলেন। কিন্তু সেই আজমত উল্লার রাজনীতির করুণ অধ্যায় এখন সমাপ্তির পথে। 

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন আজমত উল্লা। কিন্তু নির্বাচনে তিনি বিএনপি নেতা এম এ মান্নান এর কাছে পরাজিত হন। এটি তাকে রাজনীতিতে কোণঠাসা করেনি, বিপর্যস্ত করেনি। এই সময় আস্তে আস্তে গাজীপুরের রাজনীতিতে উত্থান ঘটে জাহাঙ্গীর আলমের। জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতার সাহচর্যে এবং আশীর্বাদে গাজীপুরের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে শুরু করেন। গাজীপুরের অন্যান্য নেতাদেরকে ডিঙিয়ে তিনি নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হতে থাকেন। আর এর ফলে তৈরি হয় গাজীপুর আওয়ামী লীগের বিভক্তি। এই বিভক্তির আওয়ামী লীগের জন্য কাল হয়েছে। 

২০১৮ সালের নির্বাচনে আজমত উল্লাকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। জনপ্রিয়তা এবং বাস্তবতা বিবেচনা করে সেই সময় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর আলম ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন। আর আজমত উল্লাকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে আসা হয় তাকে। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে আজমত উল্লার সম্পর্ক কখনোই মধুর ছিল না। বরং দুইজনের বৈধতা নির্বাচনের পর প্রকাশ্য হতে শুরু করে। 

জাহাঙ্গীর আলম মেয়র হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এমনকি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তিনি সমালোচিত হন। এর ফলে তিনি দল থেকে বহিস্কৃত হন। জাহাঙ্গীরপণ্থিরা মনে করেন যে জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁদে ফেলানোর পিছনে আজমত উল্লার একটা ভূমিকা ছিল। যদিও আজমত নিজে এ ধরনের কুৎসিত রাজনীতি করেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও জাহাঙ্গীর এই বক্তব্য বিভিন্ন ভাবে প্রচার করেন। পরবর্তীতে গাজীপুরে আজমত উল্লা এবং জাহাঙ্গীর আলম বিভক্ত হয়ে পড়েন।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেয়নি, আজমত উল্লাকে মনোনয়ন দিয়েছে। কিন্তু  আজমত উল্লার মনোনয়ন পাওয়াকে ব্যক্তিগত যুদ্ধ হিসেবে দেখেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দলের বাধা-বিপত্তি অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রার্থী হন এবং তার মাকে প্রার্থী করেন। শেষ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলম তার মা'র প্রার্থীতা বহাল রাখেন এবং নির্বাচনে লড়াই করেন। এই নির্বাচন ছিল আসলে আজমত উল্লা বনাম জাহাঙ্গীর আলমের লড়াই। জাহাঙ্গীর আলম পুরো ব্যাপারটিকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করেছেন এবং আজমত উল্লার বিরুদ্ধেই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় একটি বড় সময় ব্যয় করেছেন। এখন নির্বাচনে মূলত জাহাঙ্গীর আলমের বিজয় হলো। আর এর ফলে আজমত উল্লা গাজীপুরের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়বেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন। একদিকে যেমন জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশেই সিটি করপোরেশন পরিচালিত হবে অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একটা বিরাট কর্মীবাহিনী জাহাঙ্গীরের দিকে ঝুঁকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জীবন সায়াহ্নে এসে আজমত এখন নতুন করে রাজনীতিতে তার কর্মীদের সংগঠিত করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তাছাড়া আদর্শবান এই নেতা জাহাঙ্গীর আলমের বিপুল বিত্তের কাছে লড়াই করে কতটুকু টিকবেন সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আর সে কারণেই অনেকে মনে করছেন একজন ত্যাগী রাজনীতিবিদের করুণ অধ্যায়ের সমাপ্তি শুরু হলো গাজীপুর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭