ইনসাইড বাংলাদেশ

গোপালগঞ্জে ঈদ কেন্দ্রীক গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা


প্রকাশ: 06/07/2023


Thumbnail

গোপালগঞ্জে এবার কোরবানির ঈদ কেন্দ্রীক গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা রয়েছে। গবাদি পশু প্রায় ৩০০ কোটি টাকা কেনা বেচা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা।

গোপালগঞ্জে ছোট গৃহস্থ বাড়িতে ২টি গরু মোটাতাজা করে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা আয় করেছেন। বড় গৃহস্থ ৫টি পর্যন্ত গরু মোটা তাজা করে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ পেয়েছেন। লাভের টাকায় তাদের সারা বছরের পারিবারিক খরচ উঠে এসেছে। এছাড়া গবাদিপশু ক্রয় ও বিক্রয়ের সাথে জড়িতরাও আয় করেছেন লাখ লাখ টাকা। গবাদি পশু কেনা বেচাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ গ্রামীণ অর্থনীতি এখন চাঙ্গা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার জানান, এ বছর  গোপালগঞ্জ জেলায় ৪ হাজার ২শ ৪টি খামারে ৩৫ হাজার ২শ ১৪ টি গবাদি পশু মোটাতাজা করা হয়। এরমধ্যে ষাড় ১৯ হাজার ৫শ ৪০ টি, বলদ ৪৪০টি, গাভী ৪ হাজার ১শ ১৬টি, মহিষ ৮টি, ছাগল ১০ হাজার ৯০৭টি, ভেড়া ১শ ৭৫ টি, গাড়ল ২৫টি মোটাতাজা করা হয়। গোপালগঞ্জে এসব গবাদি পশু প্রায় ৩০০ কোটি টাকা কেনা বেচা হয়েছে। ২ টি গরু পালনকারী ১ লাখ টাকা ও ৫টি গরু পালনকারী আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ করেছে। এছাড়া বাণিজ্যিক খামার গুলোতে ভালো লাভ হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, এ জেলায় অন্তত ৩ হাজার পরিবার ১০ বছর ধরে গৃহপালিত পশুর সাথে ২ টি থেকে ৫টি পর্যন্ত কোরবানির গরু মোটাতাজা করে আসছেন। মাঠে চড়িয়ে এসব গরু তারা লালন পালন করেন। এছাড়া জমিতে উৎপাদিত ধানের খড়, ধান ভাঙ্গানো কুড়া, গমের ভূষি, চিটা ও খৈল দিয়ে গরু মোটাতাজা করেন। তারা খুব কম খরচে গরু মোটাতাজা করেন। হাট-বজারে গোপালগঞ্জের গৃহপালিত মাঝারি সাইজের এসব দেশী গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফড়িয়া, দালাল ও ক্রেতারা গৃহস্থের কাছ থেকে সরাসরি গরু কিনে নিয়েছেন। তারা এ গুলো জেলার ২৫ পশুর হাটে বিক্রি করেছেন। এ বছর মাঝারি ও ছোট সাইজের দেশীয় গরুর চাহিদা সবেচেয়ে বেশি ছিল। এ গরু প্রতিটি ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ছোট-বড় খামারীও ভালো লাভ করেছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠি গ্রামের ফড়িয়া মিতুল শেখ (৫০) বলেন, জেলার বিভিন্ন গ্রামে গৃহপালিত পশুর সাথে গরু মোটাতাজা করা হয়। এটি এখন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শত শত পরিবারের পেশায় পরিণত হয়েছে। অর্গানিক পদ্ধতিতে তারা নিরাপদ মাংস উৎপাদন করে। গরুর সাইজ ছোট ও মাঝারি আকৃতির। সব হাটেই এসব গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই আমরা গৃহস্থর কাছ থেকে গরু কিনে নিয়ে হাটে বিক্রি করি। এতে আমাদেরও ভালো টাকা লাভ হয়।

কোরবানীর হাটের ইজারাদার সালাম মোল্যা বলেন, জেলার গৃহপালিত ও খামরের পশুর চেহারা, বর্ণ, আকার ও আকৃতি খুবই আকর্ষণীয় । তাই হাটে এ গরু আসা মাত্র একটু বেশি দামে বিক্রি হয়।

মুকসুদপুর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের গরুর খামারি জহির হাসান টিটো মিয়া জানান সে ও তার ছেলে তাজুল হাসান এবারে ঈদের মৌসুমে তার খামার থেকে ছোট বড় ৩৪ টি গরু বিক্রি হয়েছে। তার খামারে সর্ব নিম্ম দর ছিল ৯০ হাজার টাকা, সর্বচ্চ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এবারে তার আয় ৫০ লাখ টাকার বেশী।

এবার তিনি আগামী বছরের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তারাইল গ্রামের কৃষক হারান মল্লিক (৫০) বলেন, এ বছর ২ টি গরু মোটাতাজা করেছি। ১ লাখ ২৫ হাজার করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ২টি গরু বিক্রি করেছি। এতে আমার অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এ টাকায় আমার সারা বছরের সংসার খরচ চলে যাবে। ছাড়া সংসারের প্রায়োজনীয় সব খরচ এখন এখান থেকে মেটাতে পারছি। আমাদের গাভীর সাথেই এ গরু মোটাতাজা করি। কোরবানীর সময় এগুলো বিক্রি করে দেই। আবার পৌষ মাসের দিকে দেশীয় শংকর জাতের গরু কিনে কোরবানীর জন্য মোটাতাজা করি। এভাবে ৭ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করছি। এতে আমরা ভালো আছি।

কোটালীপাড়া সোনাখালী গ্রামের গরু পালনকারী আরজ আলী বলেন, আমাদের এলাকা বিল বেষ্টিত। শুস্ক মৌসুমে বিলে গরু চড়াই। বর্ষা মৌসুমে বিলের পানিতে এক ধরণের ঘাস জন্মে। এ ঘাসের সাথে , খড়, গমের ভূষি, চিটা, খৈইল দিয়ে গরু মোটাতাজা করি। গরু মোটাতাজা করতে আমাদের তুলনামুলকভাবে খরচ কম লাগে। তাই গরু বিক্রি করে ভালই লাভ থাকে। বাড়িতে বসেই আমরা গরু বিক্রি করতে পারি। হাটে যেতে হয় না। কোরবানীর সময় গরু বিক্রি করে ঘরে টাকা তুলতে পেরেছি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭