ইনসাইড পলিটিক্স

ভারত কেন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়?


প্রকাশ: 09/08/2023


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে এলেন। তিন দিনের এই ভারত সফরে তারা ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি’র সভাপতি এবং নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বৈঠক। আর এই বৈঠকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান তারা। আওয়ামী লীগ যেন ক্ষমতায় আবার আসতে পারে, এই বার্তাটি কোনো রাখঢাক ছাড়াই বিজেপি’র সভাপতি জেপি নাড্ডা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। এর ফলে আগামী নির্বাচনেও যে ভারত-বাংলাদেশে অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারকে ক্ষমতায় চায়- এটি সুস্পষ্ট করল। এ নিয়ে ভারত এখন আর কোনো লুকোচুরি করেনি। 

আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার সফর ভারতে ছিল এক তাৎপর্যপূর্ণ সময়ে। যে সময়ে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো মিলে ইন্ডিয়া জোট গঠন করেছে। যখন ড. রাজ্জাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল ভারতে ছিলেন, সেই সময়ে ভারতের পার্লামেন্টে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এ রকম একটি উত্তেজনাময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও বিজেপি’র সভাপতি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে। এটি বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের আগ্রহের বার্তা দেয়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যে কোনো বিকল্প এখন ভারতের কাছে এখন নেই- সেই মনোভাবটি সুস্পষ্ট করে। প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কেন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায়?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাঁচটি কারণে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করে ভারত সরকার। শুধু বিজেপি নয়, এমনকি ভারতে যদি ক্ষমতার পট পরিবর্তন হয়, যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকেই প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেবে। এর কারণগুলো হচ্ছে:- 

১. শেখ হাসিনার নেতৃত্ব: আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় চাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বা নেতা নন, তিনি এখন একজন বিশ্বনেতা এবং উপমহাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার নেতৃত্বেই বিশ্বে মৌলবাদ এবং সন্ত্রাসমুক্ত রাজনীতির একটি আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে। এ কারণেই ভারত মনে করে, শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেতৃত্ব এখন বাংলাদেশে নেই। 

২. বিচ্ছিন্নতাবাদী দমন: আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, তারা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। বাংলাদেশের মাটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকার সেই কথা রেখেছে। এটি ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তির কারণ। এর ফলে ভারত একটা স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছে। আর একারণেই ভারত সব সময় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়। ভারত এখনো মনে করে, আওয়ামী লীগ সরকার যদি ক্ষমতায় না থাকে, তাহলে যারা ক্ষমতায় আসবে- তারা এ ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে লালন-পালন এবং প্রশ্রয় দিতে পারে। ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে। 

৩. সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং মৌলবাদীদের উত্থান: ভারত মনে করে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদ এবং জঙ্গিদের বিস্তার ঘটবে। তারা বাংলাদেশকে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে নিয়ে যাবে। এই বাস্তবতাতেই তারা আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প ভাবতে পারছে না। 

৪. বিএনপির রাজনীতি: ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় ছিল এবং সেই সময়ে বিএনপি ভারতের সঙ্গে যা করেছে, সেটি ভারতের নেতারা ভুলতে পারেন নাই। ভারতের অধিকাংশ থিঙ্কট্যাঙ্ক মনে করেন, বিএনপি আইএসআই দ্বারা পরিচালিত একটি রাজনৈতিক দল এবং তারা ক্ষমতায় এলে, আবার এই অঞ্চলে পাকিস্তান নানা রকম কর্মকাণ্ড শুরু করবে, যেটি হবে ভারতের স্বার্থবিরোধী। এ কারণেই তারা আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প ভাবতে পারেন না। 

৫.সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা: বিজেপি এবং ভারত মনে করে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের এখনো অনেক অধিকার বাকি আছে। এখনো সংখ্যালঘুরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারই সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় সবচেয়ে ভালো পছন্দ এবং তাদের কোনো বিকল্প নেই। অন্যরা এলে সংখ্যালঘু নিধন এবং সংখ্যালঘুদের মৌলিক মানবাধিকার হরণ প্রক্রিয়া আরো বাড়বে। এ কারণেই ভারত মনে করে, আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নাই এবং আগামী নির্বাচনে তারা ক্ষমতার ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭