ইনসাইড পলিটিক্স

ঘরের শত্রুরাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের জন্য


প্রকাশ: 15/08/2023


Thumbnail

বাইরের কোনো শক্তিই আওয়ামী লীগকে কখনো পরাজিত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের জন্য মূলত দায়ী ঘরের শত্রুরাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। আর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেমন দেশীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল তেমনি আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রুদের বীভৎস রূপও জাতি দেখেছে। 

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে, পর্যুদস্ত হয়েছে, বিপর্যস্ত হয়েছে ঘরের শত্রুদের কাছে। আবার একটা সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। বাইরে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে। আন্তর্জাতিক মহল যেমন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখন প্রকাশ্য জানান দিয়ে অবস্থান গ্রহণ করেছে তেমনি দেশেও একটি রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই ধরনের বাইরে শক্তিগুলো আওয়ামী লীগকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের বিপদের প্রধান কারণ হয়ে উঠতে পারে ঘরের বিশ্বাসঘাতকতা, ঘরের শত্রুদের তৎপরতা। 


সাম্প্রতিক সময় আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রুদের তৎপরতা দলের নীতিনির্ধারকদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের ঘরের শত্রুদের পাঁচ রকমের তৎপরতা দলটির জন্য উদ্বেগের কারণ হিসেবে দাঁড়াতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এই পাঁচ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা আওয়ামী লীগের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাও।

১. অন্তঃকলহ-বিভক্তি: আওয়ামী লীগের সম্পর্কে এখন বলা হয় যে আওয়ামী লীগের কোন শত্রুর প্রয়োজন নেই। দলের ভেতরে একে অন্যকে যে ভাষায় আক্রমণ করছেন এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে যেভাবে কুৎসা রটনা করছেন তার কারণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনপ্রিয় নেতা, এমপি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। তাদের জনপ্রিয়তায় ধস নামছে। কোথাও কোথাও তারা বিতর্কিত হচ্ছেন। এটি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের একটি বড় দিক। 


সাম্প্রতিক সময় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করবে, একে অন্যের সম্বন্ধে নেতিবাচক কথাবার্তা বলবে তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না।

২. কিছু হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতার অপতৎপরতা: সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কিছু হাইব্রিড নেতার অপতৎপরতা দৃশ্যমান হয়েছে। অতীতে রাজনীতি করার কোনো রেকর্ড নাই, রাজপথে কখনো তারা আন্দোলন করেনি, তৃণমূল থেকে বেড়ে উঠিনি বরং হঠাৎ নেতা বনে গেছেন। এ সমস্ত কিছু কিছু নেতা তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেয়ে বিভিন্ন দূতাবাসগুলোতে যোগাযোগ করছে। অন্তত দুই জন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও আওয়ামী লীগ জিতবে—এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এই তথ্য জানেন। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এই সমস্ত ব্যক্তিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখায় ব্যাপক আগ্রহী। তারা সংকটে যে ষড়যন্ত্রের অংশীদার হবেননা তা কেউ হলফ করে বলতে পারেনা।

৩. মন্ত্রীদের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড: আওয়ামী লীগের কিছু কিছু মন্ত্রীর দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড এবং বক্তব্য আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সীমাহীন ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। একের পর এক জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেটের কথা বাণিজ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে স্বীকার করলেও সিন্ডিকেট প্রতিরোধে তিনি অপারগতা জানাচ্ছেন। এই সমস্ত ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। 

৪. সিনিয়র নেতাদের রহস্যজনক ভূমিকা: আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন সংকটে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেছিলেন। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। আর ২০০৭ সালের এক-এগারোর সময় চারজন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখনো কোনো কোনো নেতা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য বলছেন। আওয়ামী লীগের যেখানে অবস্থান যে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয় সেখানে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বর্তমান সংবিধানের কাঠামোয় আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছেন। অনেকে প্রধানমন্ত্রী হবার সুপ্ত ইচ্ছাকে আবার জাগ্রত করছেন। এ ধরনের ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগের জন্য ভয়ঙ্কর বিপদের কারণ হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

৫. দলের চেইন অফ কমান্ড নষ্ট হয়ে যাওয়া: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বড় অংশই তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। হাতে গোনা ৮/১০ জন নেতা ছাড়া কারো সঙ্গে তৃণমূলের কোন সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। আর এই সমস্যার কারণে তৃণমূল ভবিষ্যতে রাজপথে আবার আগের মত লড়াই-সংগ্রাম করবে কিনা সেটি নিয়েও কারো কারো মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর সেই কারণে অনেকেই মনে করছেন, ঘরের শত্রুরাই আওয়ামী লীগের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে। সংকটে আওয়ামী লীগে মোশতাকের জন্ম নতুন নয়। আবার কোন নতুন মোশতাক আওয়ামী লীগের সব অর্জনকে লন্ডভন্ড করে দেবে কিনা সেটি হলো দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭