আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুটি দলের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা আস্তে আস্তে বাড়ছে। বিএনপি এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। এক দফা দাবিতে তারা আগস্ট জুড়েই কিছু কিছু কর্মসূচি পালন করবে। সেপ্টেম্বরে তারা সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে চায়। বিএনপি’র একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে তারা কিছু নিত্য নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে টালমাটাল করে দিবে। আর সে লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেমন জেলা প্রশাসকদের কার্যালয় ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও’র মতো কর্মসূচিগুলোর কথা বিএনপি নেতারা ভাবছেন এবং অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে তারা আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করছেন।
বিএনপি নেতারা নিশ্চিত করেছেন, সেপ্টেম্বরের ১ মাস তারা সরকারকে দম ফেলার সুযোগ দেবে না এবং এই রকম একটি পরিস্থিতি তৈরি করেই তারা সরকারকে পতন করবে। এ সময় টার্গেট কিলিং এবং অগ্নিসংযোগ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে বলে বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিএনপির বিভিন্ন নেতারা বলছেন, সেপ্টেম্বরে যদি তারা একটি অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে বাধ্য করতে পারে, তাহলে তারা আন্দোলনে বিজয়ী হবে। অন্যথায় তাদেরকে নির্বাচনের পথেই যেতে হবে। অর্থাৎ এক মাসের একটি টর্নেডো দিয়ে বিএনপি সরকারকে হঠাতে চায়। আর যদি তাতে সফল না হয়, তাহলে অক্টোবরে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এটিই বিএনপির কৌশল। কাজেই সেপ্টেম্বর মাসে দেশের রাজনীতিতে আবার ২০১৩-১৪’র মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী রাজনীতিতেই অটল থাকতে চায়, যত বিদেশি চাপ বা হস্তক্ষেপ হোক না কেন- আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রেখে নির্বাচনের পথে এগুনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় নির্বাচনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এখান থেকে পিছু হটার কোনো উপায় নেই। তবে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সমঝোতা এবং নির্বাচনের জন্য অক্টোবরে বেশ কিছু চমক দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব দেবেন এবং বেশ কিছু নাটকীয় ঘোষণা দিবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অক্টোবরেই সরকার নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে প্রশাসনে একটা বড় ধরনের রদবদল করা হবে এবং আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকেও সবুজ সংকেত দেয়া শেষ হবে। ফলে অক্টোবর মাসকে আওয়ামী লীগ একটি চমকের মাস হিসেবে চিহ্নিত করছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত যাচ্ছেন। সেখানে তাঁর সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যোগ দিবেন এবং সেই অধিবেশনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর আলাপ আলোচনা হতে পারে। বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক অবস্থান ঠিক করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরে তাঁর নির্বাচনের কৌশল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চমক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু নাটকীয় পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন। আর এই সমস্ত ঘোষণার মধ্য দিয়েই দেশকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ রাজনীতি
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চীন সফর ভারত যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাবের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় না তখন বিএনপি নেতারা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন। তারা দলীয় কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
আবার ডোনাল্ড লু নির্বাচনের আগে যখন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং ভিসা নীতি প্রয়োগ করেছিলেন তখন বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে মার্কিন বন্দনা করতে দেখা গেছে। ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন দূতাবাসে বা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বাসভবনে বিএনপির নেতাদের আনাগোনা ছিল। তারা সেখানে চা চক্রে মিলিত হয়েছেন, নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন এবং বিভিন্ন রকমের শলাপরামর্শ করেছেন।
পিটার ডি হাস গত বছরের ১০ অক্টোবর বিএনপি যখন সমাবেশ করতে পারেনি তখনও একতরফা বিবৃতি দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বিতর্কিত সংগঠন মায়ের ডাকের এক নেতার বাসায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি বিএনপির প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। এভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উপর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছিল।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহানুভূতি এবং পরোক্ষ সমর্থনের কারণেই বিএনপির আন্দোলনের পালে হাওয়া লেগেছিল। নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা ভাব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। যদিও ২৮ অক্টোবরের পর এই ডোনাল্ড লু শর্তহীন সংলাপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং এই আহ্বানের চিঠি নিয়ে পিটার ডি হাস তিনটি দলের নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন এবং একটি সংলাপ আয়োজনের শেষ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সংলাপ আয়োজনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই সাড়া দেয়নি।
এখন নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। ডোনাল্ড লু’র আগে আফরিন আক্তার নির্বাচনের পরে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং সেই সময় তিনি হোটেল ওয়েস্টিনে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ আফরিন আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সেই সাক্ষাতের পর তারা কোনও কিছুই সাংবাদিকদেরকে জানাননি। কিন্তু এবার ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। আর এটি বিএনপির মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি মনে করছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদেরকে আর আগের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, পাত্তা দিচ্ছে না। বরং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ, শামা ওবায়েদ, তাবিথ আউয়ালসহ যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং মার্কিন দূতাবাসে যাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে তাদেরকে দুষছেন। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। বিএনপির নেতারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারেননি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিএনপির বক্তব্যগুলো তারা সঠিকভাবে ও যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। আর একারণেই ডোনাল্ড লু’র সফরের পর বিএনপির মধ্যে চলছে এক ধরনের হতাশা।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ রাজনীতি বিএনপি
মন্তব্য করুন
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, দলের ভেতর সুবিধাবাদী, লুটেরা এবং দলের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না। কিন্তু ২৩ জুনের পর আওয়ামী লীগের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্র্যাকডাউন হবে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী এবং দলের সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবে। আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ এবং তার আদর্শিক জোট ১৪ দলের নেতাদের চীন সফরে হিড়িক পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং তার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর এই চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলাপ আলোচনা। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের চীন সফরের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছেন। তবে তারা এই বিষয় নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবেই মনে করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বিএনপির আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণ সরকার শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতে পারবে না- এমন বক্তব্যগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে বহুল প্রচারিত ছিল। বিএনপির সব নেতারা প্রকাশ্যেই এ কথা বলত।