প্রকাশ: 22/09/2023
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং মূল্যস্ফীতিতে নাকাল দেশবাসী। এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপ দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার কার্যকর হাতিয়ার খুঁজে বের করতে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পরামর্শের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার
(২১ সেপ্টেম্বর) সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ
ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৈঠকে
নতুনভাবে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে
ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ
দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো.
মেজবাউল হক বিষয়টি নিশ্চিত
করেছেন।
বৈঠক
শেষে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, দেশের
অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে মূল্যস্ফীতি
নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। তাই
আমরা অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেসব পরামর্শ আসবে
সে অনুযায়ী আগামী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হবে।
তিনি
বলেন, বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও অন্যান্য দেশের তুলনায় মূল্যস্ফীতি আমরা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে
রেখেছি। আমরা যে এখনও
সংকটের মধ্যে আছি তা সত্য।
তবে সেই সংকট নিরসনের
চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেমন,
আমদানি নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি বাড়ানো ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে
বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উন্নত
দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার
বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশও তার মাশুল
গুনছে।
গভর্নরের
সঙ্গে বৈঠকে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বর্তমান মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং নতুন করে
টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার
পরামর্শ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন
মুখপাত্র।
ভবিষ্যতে
আরও অর্থনীতিবিদ, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম, চেম্বার অব কমার্স এবং
অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা পর্যায়ক্রমে
চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৈশ্বিক
এ সংকটের মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) ঝুঁকি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন দেশের
অর্থনীতির প্রধান পাঁচটি ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে তারা। বাংলাদেশের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি
উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের অর্থনীতির প্রধান ঝুঁকি।
ঝুঁকির
পাঁচটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে ডব্লিউইএফ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে
আরও যে চারটি ঝুঁকির
খাত তারা চিহ্নিত করেছে,
সেগুলো হলো ঋণ সংকট,
উচ্চ পণ্য মূল্যের ধাক্কা,
মানবসৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষতি ও সম্পদের জন্য
ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা।
গত জুন ও জুলাই
মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য
কমার পর আগস্ট মাসে
তা আবার বেড়েছে। গত
মাসে (আগস্ট) মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯
দশমিক ৯২ শতাংশে। এই
সময় দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি
হঠাৎ অনেকটা বেড়ে গেছে। খাদ্য
মূল্যস্ফীতির হার উঠেছিল ১২
দশমিক ৫৪ শতাংশে।
সরকারের
প্রত্যাশা ছিল, আগস্ট মাসে
মূল্যস্ফীতির হার কমবে। ২৯
আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভার (একনেক) পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম
এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মূল্যস্ফীতি জোর করে কমানো
যায় না। কার্যকর নীতি
নিতে হবে। আমি ঝুঁকি
নিয়ে বলতে পারি, চলতি
আগস্টে মূল্যস্ফীতি ২ থেকে ৪
পয়েন্ট কমবে।’ কিন্তু গত মাসে তা
উল্টো বেড়েছে।
এদিকে
গত মঙ্গলবার পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছেন, মূল্যস্ফীতির
হার আগের পর্যায়ে নামতে
এক বছর সময় লাগবে।
আন্তর্জাতিক
মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক ওয়ার্কিং পেপার
বা কার্যপত্রে বলা হয়েছে, আগামী
তিন থেকে পাঁচ বছরের
মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার যৌক্তিক পর্যায়ে
নামিয়ে আনতে হলে ধারাবাহিকভাবে
সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়নের পাশাপাশি দেশীয় মুদ্রার দরপতনের হার কমাতে হবে।
আইএমএফের
কার্যপত্রে বাংলাদেশ সম্পর্কে অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই।
তবু এটা পরিষ্কার যে
বাংলাদেশ উল্লিখিত দুটি ক্ষেত্রে অনেকটাই
পিছিয়ে আছে। বাস্তবতা হলো,
২০২২ সালের ২ জানুয়ারি ডলারের
আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার ছিল ৮৫
টাকা ৮০ পয়সা, যা
এখন ১১০ টাকা; অর্থাৎ
এই সময়ে স্থানীয় টাকার
দরপতন হয়েছে ২৮ দশমিক ২১
শতাংশ। এর মধ্যে নীতি
সুদ হার বাড়ানো হলেও
ব্যাংক ঋণের সুদহার অধিকাংশ
ক্ষেত্রে ৯ শতাংশেই রয়ে
গেছে। ফলে নীতি সুদহার
বৃদ্ধির প্রভাব তেমন একটা অনুভূত
হয়নি, অন্তত এখন পর্যন্ত।
বিশ্লেষকদের
মতে, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রার বিনিময়
হার কৃত্রিমভাবে ধরে রেখেছিল। যে
কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর
যখন ডলারের বিনিময় হার অনেকটা বৃদ্ধি
পায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই আমদানি
ব্যয় বেড়ে যায়। এটি
মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ।
যদিও
এখন বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কেবল বৈশ্বিক কারণে
হচ্ছে না, নিজস্ব বাজার
ব্যবস্থাপনাও এর জন্য দায়ী।
কেন্দ্রীয়
ব্যাংক মূলত জ্বালানি তেল,
এলএনজি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির দায়
মেটানোর জন্য ডলার বিক্রি
করছে। পাশাপাশি সরকারের বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের
জন্যও ডলার বিক্রি করা
হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র
নিশ্চিত করেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনো বিক্রি করে চলেছে, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭