ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

বিশ্বখ্যাত ১০ জলপ্রপাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/03/2018


Thumbnail

ঝর্ণা! ঝর্ণা! সুন্দরী ঝর্ণা! তরলিত চন্দ্রিকা! চন্দন-বর্ণা! কবি একটুও বাহুল্য করেননি। জলপ্রপাত সত্যই মনোমুগ্ধকর। এর রূপ যে দেখেছে সে ই ভালবেসেছে, প্রেমে পড়েছে, প্রাণের টানে বারেবার ছুটে গিয়েছে ঝর্ণার কাছে। কবির ছন্দের যাদু যেন লুকিয়ে আছে জলপ্রপাতের ধ্বনির পরতে। সেই সঙ্গে লুকিয়ে আছে এডভেঞ্চার। আপনি এডভেঞ্চার প্রিয় হোন কিংবা অলস ভ্রমণ পিপাসু; জলপ্রপাত সবার জন্যই ভ্রমণের আদর্শ স্থান। অবশ্য অনেক জলপ্রপাতে পৌছতে দুর্গম গিরি , নদী কিংবা অরণ্য পারি দিতে হয়। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে জলপ্রপাতের কাছে গিয়ে কখনোই ঠকবেন না। এর বিশালতার মাঝে নিজেকেও হয়তো হারিয়ে আবার খুঁজে পাবেন। হয়তো পাবেন নতুন করে শুরু করার প্রেরণা। তবে চলুন জেনে নেই বিশ্বখ্যাত ১০ জলপ্রপাত সম্পর্কে।

 

১। নায়াগ্রা ফলস

নায়াগ্রা ফলস  যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তে অবস্থিত। এটি পানি পতনের দিক থেকে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত। মূলত তিনটি জলপ্রপাতের সমন্বয়ে এক বিশাল জলপ্রপাত নায়াগ্রা ফলসের এর যুক্তরাষ্ট্রের অংশের নাম আমেরিকান ফলস এবং কানাডার অংশের নাম কানাডিয়ান ফলস। এর উচ্চতা ১৬৭ ফুট। এই জলপ্রপাত থেকে প্রতি মিনিটে ৬ মিলিওন ঘনফুট পানি নিচে পড়ে। এই জলপ্রপাতটি কিন্তু পাহাড় থেকে সৃষ্ট নয়। সমতলের একটি নদীতে বিশাল ফাটলের কারণে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অবলোকন করতে এখানে ভিড় জমায়।

 

২। এঞ্জেল ফলস

এঞ্জেল ফলস ভেনিজুয়েলার ‘কানাইমা ন্যাশনাল পার্কে’ অবস্থিত। এর উচ্চতা ৩,২১২ ফুট। মানে প্রায় এক কিলোমিটার। জলপ্রপাতটির নামকরণ করা হয়েছে জিমি এঞ্জেল নামক একজন মার্কিন বৈমানিক এর নামানুসারে। তিনি এই জলপ্রপাতটি আবিষ্কার করেছিলেন।  এই নির্ঝরের বিশাল জলরাশির উৎস কিন্তু কোনো নদী, হ্রদ, হিমবাহ বা ভূগর্ভস্থ পানি নয়। নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে বছর জুড়ে যে বৃষ্টিপাত হয় সেই পানিই এই জলপ্রপাতের নিরবচ্ছিন্ন বিশাল জলরাশির উৎস। এই জলপ্রপাতের পানি এতো উপর থেকে পড়ার ফলে এর বেশির ভাগ পানিই নিচে পড়ার আগেই বাষ্পে পরিণত হয়। ফলে চারপাশে কুয়াশার আস্তরণ তৈরি হয়। এতে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মেলে।

 

৩। ভিক্টোরিয়া ফলস

ভিক্টোরিয়া ফলস স্থানীয় ভাবে পরিচিত ‘মসি-ওয়া-তুনয়া’নামে। এর মানে বজ্রপাত সৃষ্টিকারী ধোঁয়া। জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে এ দুটি দেশের সীমান্তের জাম্বেসি নদী থেকে এর উৎপত্তি। এই জলপ্রপাতের নামকরণ করা হয়েছে রাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে। ডেভিড লিভিংস্টোন নামে এক পর্যটক প্রথম এই জলপ্রপাতটি দেখতে পান এবং তিনিই এর নামকরণ করেন। জলপ্রপাতটির  এর উচ্চতা ১০৮ মিটার। এবং প্রস্থ ১,৭০৮ মিটার। এই জলপ্রপাতে প্রতি সেকেন্ডে এটা ১ মিলিয়ন লিটার পানি প্রবাহিত করে। এটা একক ভাবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত।

৪। ইগুয়াজু ফলস

 

নয়নাভিরাম ইগুয়াজু ফলস ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এর উৎস ব্রাজিলের ইগুয়াজু নদী । জলপ্রপাতটি ইগুয়াজু নদীটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। প্রতি সেকেন্ডে ১,০০০ ঘন মিটার পানি বয়ে নিয়ে চলা ইগুয়াজু ফলস  মূলত ২৭৫ টি আলাদা আলাদা জলপ্রপাতের সমষ্টি। এখানে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখান থেকে একজন দর্শনার্থীকে ঘিরে জলপ্রপাতটির ২৬০ ডিগ্রি কোণ উৎপন্ন হয়। পানি পড়ার ফলে সৃষ্ট কুয়াশায় আলোর প্রতিফলিত হলে এখানে রংধনুর দেখা যায়।

 

৫। প্লিটভাইস ফলস

ক্রোয়েশিয়ার নর্দার্ন ডালমেশিয়ার প্লিটভাইস ন্যাশনাল পার্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অগণিত ঝর্নার ধারা। এটিই প্লিটভাইস ফলস। এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অতুলনীয়। এখানকার জলের রঙেও রয়েছে বৈচিত্র্য, কোথাও আকাশী নীল তো কোথাও ফিরোজা,  আবার কোথাও পানি স্ফটিক স্বচ্ছ।

 

৬। কাইট্যর ফলস

গায়ানার কাইট্যর ন্যাশনাল পার্কে পোটারো নদীতে অবস্থিত কাইট্যর ফলস । একে পৃথিবীর দীর্ঘতম একক জলপ্রপাত বলা হয় । জলপ্রপাতটির উচ্চতা ৭৪১ ফুট এবং প্রতি সেকেন্ডে ৬৬৩ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। এই জলপ্রপাতের সৌন্দর্য অতুলনীয়।

 

৭। ইয়োসেমাইট ফলস

ইয়োসেমাইট ফলস যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত। এই জলপ্রপাতের উচ্চতা প্রায় ২,৪২৫ ফুট। এটি আবার  তিন স্তরে বিভক্ত। বরফ গলা পানিই এর জ্লের উৎস। তাই বসন্তের শেষেঞ্জলপ্রপাতটি পানিতে পূর্ণ থাকে।

 

৮। সাদারল্যান্ড ফলস

সাদারল্যান্ড ফলস অবস্থিত নিউজিল্যান্ডে। এর উচ্চতা ১,৯০২ ফুট। এই জলপ্রপাতের উৎপত্তি কুইল হ্রদ থেকে। ডোনাল্ড সাদারল্যান্ড নামে একজন স্কটিশ নাগরিক এটি আবিষ্কার করেন এবং তিনি দাবি করেন এর উচ্চতা ১,০০০ মিটারের বেশি। কিন্তু অনুসন্ধানের পর জানা যায় এর উচ্চতা ১,৯০২ ফুট।

 

৯। গালফস জলপ্রপাত

দক্ষিণ-পশ্চিম আইসল্যান্ডে অবস্থিত গালফস জলপ্রপাতটি হিমবাহ গলিত নদী থেকে সৃষ্ট। এর উচ্চতা ১০৫ ফুট। এটি আইসল্যান্ডের একটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র।

১০। পামুক্কালে ফলস

পামুক্কালে তুর্কি  শব্দ। এর মানে তুলার প্রাসাদ। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত এই স্থানটি দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কে অবস্থিত।  জলপ্রপাতটির উচ্চতা ৫২৫ ফুট, দৈর্ঘ্য ৮,৮৬০ ফুট এবং প্রস্থ ১,৯৭০ ফুট। প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরা এই উষ্ণ জলপ্রপাতটি আবিষ্কার করেন। এখানে চুনাপাথর  জমাট বেঁধে জলাধারের সৌন্দর্য শত গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

বাংলা ইনসাইডার/ডিজি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭