ইনসাইড থট

‘৭ নভেম্বর ষড়যন্ত্রকারী এবং হত্যাকারীকে ঘৃণা দিবস’


প্রকাশ: 07/11/2023


Thumbnail

আজ ৭ নভেম্বর। এই দিনিটি এলেই ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের দিনটির কথা মনে পরে। ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয়েছিল ৭ নভেম্বর তারই ধারাবাহিকতা মাত্র।

আমার মতে জিয়াউর রহমান ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী একজন খুনি। তিনি ছিলেন একজন মেধাবী বিশ্বাসঘাতক। খুনি এবং বিশ্বাসঘাতকের আগে মেধাবী বলছি কারণ তিনি দেশকে ধ্বংস করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার দারুণ একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন এবং সেটি তিনি বাস্তবায়নও করতে পেরেছিলেন।

৭৫’এর ১৫ আগস্ট তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছেন এবং এর তিন মাসেরও কমসময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যারা তার কোন প্রতিপক্ষ হতে পারে তাদের সবাইকে তিনি খুব নিখুঁতভাবে নির্মূল করলেন। এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের রক্তাক্ত ইতিহাসে আরেকটি টার্নিং পয়েন্ট।

এরপর আসে ৭ নভেম্বর। বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল হায়দারসহ বহু সৈনিক ও অফিসারকে হত্যা করা হয়। বহু সৈনিক ও অফিসারদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে এইদিন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে এই হত্যার রাজনীতির মধ্য দিয়েই বিএনপি নামক দলটির জন্ম হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যে চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই ছিল না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উৎখাত করার লক্ষ্যে ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থান হয়; এবং অভ্যুত্থানে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে আটক করা হয়। কিন্তু তার আগেই মোশতাক-জিয়া চক্র বুঝতে পারে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন হবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জাতীয় চার নেতাই বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে। সে আশঙ্কা থেকে ৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের আগের রাতেই মীরজাফর মোশতাক গং জিয়া-ফারুক-রশিদরা রাতের অন্ধকারে মানব সভ্যতার ইতিহাসের আরেক জঘন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

৩ নভেম্বর অভ্যুত্থানের পর খালেদ মোশাররফ সেনাপ্রধান হয়ে খন্দকার মোশতাককে গ্রেপ্তার করেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক-রশিদ-ডালিমরা থাইল্যান্ডে পালিয়ে যায়। কিন্তু জাসদ ও তাদের নেতা কর্নেল তাহেরের হঠকারী সিন্ধান্তে ৭ নভেম্বর এক পাল্টা অভ্যুত্থানে জিয়াকে মুক্ত করে।

হত্যা করা হয় সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, সেক্টর কমান্ডার এটিএম হায়দার ও সাব-সেক্টর কমান্ডার খন্দকার নাজমুল হুদাকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সেক্টর কমান্ডারও নিহত হননি। অথচ ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানে শেরেবাংলা নগরে ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে দুজন সেক্টর কমান্ডার, একজন সাব কমান্ডার ও ১৩ সেনা কর্মতর্তা নিহত হন। কে বন্ধু আর কে শত্রু সেটি তিনি কখনও বিবেচনা করতেন না। যাকে তিনি তার পথের কাঁটা মনে করতেন তাকেই তিনি হত্যা করেছেন। আমি সিসিলি, কলোম্বিয়ার মাফিয়াদের ইতিহাস পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে মাফিয়ারা জিয়াউর রহমানের কাছে শিশু। জিয়াউর রহমান যেভাবে কখনও পর্দার আড়ালে আবার কখনও পর্দার সামনে থেকেই ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে সেটি মাফিয়াদের পক্ষেও সম্ভব না। হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের নতুন পন্থা তিনি আবিষ্কার করেছিলেন।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলিতে রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জিয়াউর রহমান। পরে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। আবার সেদিনের অভ্যুত্থানের অন্যতম অনুঘটক রাজনৈতিক দল জাসদের চোখে দিনটি ‘সিপাহি বিপ্লব দিবস’। কিন্তু যারা সত্যি ইতিহাস জানে এবং যারা ইতিহাসকে অস্বীকার করে না তাদের কাছে এই দিনটি ষড়যন্ত্রকারী এবং হত্যাকারীকে ঘৃণা দিবস হিসেবেই পালন করবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭