ইনসাইড পলিটিক্স

জাপা না তৃণমূল কে হবে প্রধান বিরোধী দল


প্রকাশ: 20/11/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তাহলে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে কে আসবে। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করার পরও বিরোধী দল হয়েছিল জাতীয় পার্টি। বিএনপি মাত্র ছয়টি আসন পেয়েছিল। যদিও বিএনপি সেই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করে। কিন্তু কারচুপির অভিযোগ করলেও বিএনপির ছয়জন সদস্য প্রায় পুরো পাঁচ বছরই সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মহিলা কোটাতেও একজন সংসদ সদস্য সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবার বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে আবার কি জাতীয় পার্টি নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হবে নাকি এবার নির্বাচনের আগে নতুন চমক তৃণমূল বিএনপির বিরোধী দল হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে জাতীয় পার্টিকে পিছিয়েছে ফেলে তৃণমূল বিএনপির এবার বিরোধী দল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটি আঁচ করতে পেরেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত গড়িমসি করছেন। যদিও আজ থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হচ্ছে এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, এই মনোনয়ন ফরম বিক্রি মানেই নির্বাচনে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত৷ নয়। 

জাতীয় পার্টির বিভিন্ন মহল সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনে কত আসন পাবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট আশ্বাস চাইছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। নির্বাচনের ওপর কোন রকম প্রভাব বিস্তার সরকার করবে না। নির্বাচনে কে কত আসন পাবে এই সমস্ত বিষয়গুলো ভোটারদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। সরকার কোন হস্তক্ষেপ করবে না। যার ফলে জাতীয় পার্টি নিরপেক্ষ নির্বাচনে কতগুলো আসন পাবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন। এ ব্যাপারে সরকারও কোন আশ্বাস দিতে পারে না। 

অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি গঠিত হয়েছে বিএনপির কিছু জনপ্রিয় নেতাদেরকে নিয়ে। তৈমুর আলম খন্দকার, শমসের মবিন চৌধুরী সহ বিভিন্ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ এলাকায় তাদের বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়া বিএনপিতে যারা নির্বাচন করতে চান কিন্তু বিএনপি নির্বাচন না করায় তারা তাদের এলাকায় অবস্থান ক্ষুন্ন করেছিলেন এবং এলাকা নিয়ে শঙ্কিত হয়েছিলেন তাদের নতুন ঠিকানা হয়েছে তৃণমূল বিএনপি। তৃণমূল বিএনপি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা তিনশ আসনে প্রার্থী দিবে এবং এ ধরনের নির্বাচনে যদি প্রাক্তন বিএনপির নেতারা প্রার্থী হন তাহলে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটের একটি বড় অংশ তৃণমূল বিএনপি পাবে। আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তৃণমূল বিএনপি জয়ী হবেন।

তৈমুর আলম খন্দকারের আসনের কথাই যদি ধরা যায় সেখানে শামীম ওসমান হবেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আর তৈমুর আলম খন্দকারকে নিশ্চিত ভাবে প্রকাশ্যে বা গোপনে সহায়তা দেবেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। আর আইভির যদি সমর্থন পান তাহলে নারায়ণগঞ্জের এই আসনে একটা নাটকীয় ঘটনা ঘটতে পারে। একই অবস্থা হবে তার শমসের মবিন চৌধুরী আসনে। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এখন যদি শমসের মবিন চৌধুরী নির্বাচনে দাঁড়ান এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে যদি কোন্দোল থাকে তাহলে সেই আসনটিতে কি ফলাফল হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। এরকম বহু আসন আছে যেখানে তৃণমূল বিএনপি ভাল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং জাতীয় পার্টির চেয়ে তাদের জনপ্রিয়তা বেশি। কারণ তারা বিএনপি থেকে এসেছেন এবং আওয়ামী বিরোধী ভোট গুলো তাদের পকেটে যাবে। 

দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে অংশগ্রহণ করছে। সে হিসেবে জাতীয় পার্টিকে অনেকেই আওয়ামী লীগের বি টিম মনে করে। কেউ কেউ তাদেরকে অনুগত বিরোধী দল মনে করে। এরকম অবস্থায় জাতীয় পার্টি নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে কতটা ভালো হবে তা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির আগের সেই ক্রেজ নষ্ট হয়ে গেছে। এরশাদ ছাড়া জাতীয় পার্টির কোন জাতীয় নেতাও নাই। জি এম কাদের একজন গ্রহণযোগ্য স্বজন ব্যক্তি বটে। কিন্তু তিনি জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেননি। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা নয়, তৃণমূলের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। 

তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে কোন রকম কারচুপি হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং এই সুষ্ঠু নির্বাচনে যে জেতে সেই হবেন সংসদ সদস্য। সেই বিবেচনায় জাতীয় পার্টি না তৃণমূল বিএনপি প্রধান বিরোধী দল হবে তা জানার জন্য আমাদের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭