ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

জটিল সমীকরণে বিশ্ব রাজনীতি, নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় নজর


প্রকাশ: 30/11/2023


Thumbnail

বিশ্ব বর্তমানে একটি জটিল ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধকে ঘিরে সারাবিশ্বে সংকট দেখা দিয়েছে। তাইওয়ান-চীন জটিলতাও যে কোন সময় বড় সংকটে রুপ নিতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র একটি কঠিন সংকট ও দোটানার মধ্যে পড়েছে। 

এতদিন বিশ্বে যে একমেরুকরণ অবস্থা বিরাজ করছিল তা অনেকটাই ভারসাম্য অবস্থায় পৌছাচ্ছে। এর পিছে করোনা মহামারী ও দুইটি চলমান যুদ্ধের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। ইউক্রেন ও ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদেশ হওয়ায় তাদের বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র ও বিভিন্ন সামরিক সহযোগিতা প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বর্তমানে করোনা মহামারীর ধাক্কার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জিডিপি কমে গেছে । যার ব্যাতিক্রম নয় যুক্তরাষ্ট্রও। এ পরিস্থিতিকে একইসাথে দুইটি দেশের যুদ্ধের খরচ মিটাতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রতে যা দেশটির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। 

এদিকে আফ্রিকা, ইসরায়েল-গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এই সংকট বিস্ফোরকের মতো। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে এবং যদি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা পরাজিত হয় তবে ভূরাজনীতির অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হারাবে দেশটি। 

সামনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই ২০২৪ সাল হতে পারে ১৯৪৫ সালের বিশ্ব যুদ্ধের পর নতুন ব্যবস্থা। ভারত ও তুরস্কের মতো দেশগুলো বিশ্বাস করে ১৯৪৫ সালের পরে তৈরি করা বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলো তাদের উদ্বেগের প্রতিফলন করে না। চীন ও রাশিয়া এই ব্যবস্থাকে উল্টে ফেলতে চায়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের প্রভাব বজায় রাখতে চায় বিশ্বে। 

১৯ শতকের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব জিডিপিতে পশ্চিমের অংশ ৫০ শতাংশে নেমে যায়। ইউরোপ ও জাপানের মতো মিত্রদের অর্থনীতি কমছে। মার্কিন বৈশ্বিক ভূমিকায়ও মধ্যবিত্তদের সমর্থন কমেছে। অন্যদিকে চীন একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে চমক দেখিয়ে উন্নতি করেছে। এই দু্ইটি দেশ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে এদের সমর্থনেও রয়েছে আরও অনেকগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল দেশ। এই কয়টি দেশকে একসাথে প্রতিরোধ করা এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপে ইতোমধ্যেই পৃথিবীর একমেরুকরণও শেষ হয়ে গেছে। আমেরিকা এখনো অর্থনীতিতে প্রসিদ্ধ তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। 

 বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়নে ২০২৩ সালে ব্যস্ত ছিল আমেরিকা। নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ বাস্তবায়ন করা হয়। দেশটির প্রথম অগ্রাধিকার ছিল আফগানিস্তান ত্যাগ করা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়কে এশিয়ায় স্থানান্তর করা। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল চীনকে ঠেকানো। এশিয়া প্যাসিফিক ও ইউরোপে মিত্ররা পুনরুজ্জীবিত হয়। প্রসারিত হয় ন্যাটো। যদিও ইউক্রেন এখনো ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। জ্বালানি ও প্রযুক্তিখাতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা। তবে এ নিষেধাজ্ঞাকে আড়াল করে চীন প্রচুর তেল আমদানি করছে। 

ভূরাজনীতি সহনীয় তবে রয়েছে অস্থিরতা। ১৯৯০ এর দশকে অনেক দেশ স্বাধীনতা, বাজার অর্থনীতি ও নিয়মভিত্তিক বিশ্বায়নের একটি স্ব-শক্তিশালী চক্রের আকাঙ্ক্ষা করেছিল। এখন পপুলিজম, হস্তক্ষেপবাদী অর্থনীতি ও লেনদেনের বিশ্বায়নে একটি অপ্রত্যাশিত চক্র রয়েছে। ফলে ২০২৪ সালের জন্য তিনটি হুমকি আসন্ন। এ হুমকি কাটাতে না পারলে বিশ্ব একটি নতুন সংকটে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস।

প্রথমত, দায়মুক্তির প্রবণতা বেড়েছে। গত ৩৬ মাসে আফ্রিকার অন্তত ছয়টি দেশে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িত হয়েছে আজারবাইজান। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ইরানের আর্শীবাদপুষ্টদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এই ধারা ২০২৪ সালে আরও প্রসারিত হতে পারে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো চীন, ইরান ও রাশিয়ার সমন্বিত উত্থান। যদিও পশ্চিমাদের মতো তাদের সাধারণ লক্ষ্য নেই। তবে এ দেশগুলো মার্কিন প্রভাব থেকে বের হয়ে আসতে চায়।  বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্য দুই দেশের চেয়ে চীনের অংশগ্রহণ অনেক বেশি।  রাশিয়া ও ইরান থেকে তেল কিনছে চীন। তারা কেউই হামাস কিংবা রাশিয়ার সমালোচনা করছে না। প্রযুক্তিখাতে তাদের সমন্বয় বাড়ছে। পশ্চিমা অর্থনীতিকে পাশ কাটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে চীন। এখন এটির অর্ধেকের মতো বাণিজ্য নিজস্ব মুদ্রায় হয়। রাশিয়ায় ড্রোন রপ্তানি করছে ইরান। পারমাণবিক ক্ষেত্রে সমন্বয় করছে ওয়াশিংটন ও বেইজিং। প্যাসিফিকে বাড়িয়েছে টহল। চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যেসেমঝোতা হয়েছে। ফলে একটি নতুন শক্তিবলয় গড়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্যে। এই জোট কত দূর যেতে পারে তা দেখা যাবে ২০২৪ সালে।

চূড়ান্ত হুমকি হলো পশ্চিমা জোটের ভঙুরতা। ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ, জনসমর্থনও রয়েছে, ১৯৪৫ সাল পরবর্তী বিশ্ব নীতিও অক্ষত। কিন্তু পশ্চিমাদের বাইরের অনেকেই এক্ষেত্রে অনৈক্য দেখিয়েছে। বর্তমানে একটি অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনে অর্থয়ানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বিরোধিতা রয়েছে। বিশেষ করে রিপাবলিকানদের মধ্যে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের জন্য একটি বিল স্থগিত করা হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বিশ্বকে ইউক্রেনের উপর থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন যে অস্ত্র ইউক্রেনকে দেয়ার কথা তা যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিচ্ছে। 

তাছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামালার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও রয়েছে অনৈক্য। এই বিষয়কে সামনে রেখে পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা সামনে চলে এসেছে। অন্যান্য সংকটও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ করে তবে  তাইওয়ানকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কী ইউরোপ যোগ দেবে?

২০২৪ সালের শেষের দিকে মার্কিন নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে যদি সত্যিকার অর্থে একজন বৈশ্বিক নেতা নির্বাচিত হয় তাহলে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে পারে। অথবা বিশ্ব আরও একটি যুদ্ধ দেখবে। স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে দীর্ঘ লড়াইয়ের মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র। করণীয় তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় পরিবর্ধন, ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা গভীরতর করা, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান। বিশ্ব রাজনীতির রূপান্তরে এর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭