আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বৈত নাগরিক শামীম হক। নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন দাবি করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নথি জমা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার জমা দেয়া নথিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নথিতে উল্লেখিত ঢাকার নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসের কনস্যুলার সেবার ঠিকানা, দূতাবাসের লোগো, ফোন নম্বর, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা জালিয়াতি করে ব্যবহার করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে শামীম হকের দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় তার প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে শুনানি হয়। পরে শুনানি স্থগিত রেখে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রায়ের দিন ধার্য করা হয়। আইন অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিক হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন দাবি করে যেসব নথিপত্র জমা দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করেছেন একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান।
এ আইনজীবী বলেন, শামীম হক যে নথিপত্র জমা দিয়েছেন সেসবের সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ জন্য তার নাগরিকত্বের অবস্থা জানার জন্য আপিল মুলতবি করে ইতোমধ্যে ইসি নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
শামীম হকের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা ই-মেইল হচ্ছে আলী আজগর মানিক নামের এক ব্যক্তির। মানিকের এই hch_bd@yahoo.com ঠিকানা থেকে করা ই-মেইলে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসে যোগাযোগ করে শামীম হকের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আর ওই ই-মেইলে ঢাকার নেদারলান্ডস দূতাবাসের কনস্যুলার সেবার ঠিকানা, দূতাবাসের লোগো, ফোন নম্বর, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়।
আজগর আলী মানিকের ওই ই-মেইলে ‘হল্যান্ড চিলড্রেন হাউস’ নামে একটি এতিমখানার ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়। আর সেখান থেকেই এই মানিকের তথ্য পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে বলেন, আমি কেন ডাচ দূতাবাসে কাজ করব। দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের কিছু প্রকল্প রয়েছে যেমন, হল্যান্ড চিলড্রেন হাউস। এ কারণে দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। দূতাবাসের কোনো পদে নেই আমি।
এরপরই মানিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইসিতে জমা দেয়া নথিতে ঢাকার নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসের কনস্যুলার সেবার ঠিকানা, দূতাবাসের লোগো, ফোন নম্বর, ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহারের কারণ কী? জবাবে তিনি বলেন, দূতাবাসের কূটনীতিকসহ রাষ্ট্রদূত একাধিকবার আমাদের হল্যান্ড চিলড্রেন হাউজে এসেছেন। ফলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো আমাদের। কিন্তু দূতাবাসের কিছু ব্যবহার করা হয়নি বলেও দাবি তার।
এদিকে শামীম হক ইসিতে দাবি করেছেন, গত ৯ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু আবেদন কার বরাবর করা হয়েছে, সেটি উল্লেখ নেই নথিতে। আর নথি অনুযায়ী তার নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার দূতাবাস থেকে ফিরতি ই-মেইলে ‘হল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে’ নির্দেশনার জন্য তাকে অপেক্ষার কথা জানানো হয়। প্রসঙ্গত, ‘হল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’ বলে কিছু নেই এবং ই-মেইলে ব্যবহার করা ইংরেজি ভাষা এতটাই দুর্বল, যা বিদেশি দূতাবাসের কাছ থেকে কখনো আশা করা যায় না। আর নথিতে এটা স্পষ্ট নয় যে, ই-মেইলটি দূতাবাস থেকে করা হয়েছে।
এছাড়া ইসিতে নাগরিকত্ব বাতিল চেয়ে ইসিতে যে নথি জমা দেয়া হয়েছে, তাতে বিভিন্ন স্থানে ই-মেইল যোগাযোগের বেশির ভাগ ৪ ডিসেম্বরের পরে। কিন্তু প্রতিটি ই-মেইলে ৯ নভেম্বর নেদারল্যান্সের নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি শামীম হকের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করার আবেদন করা নথি দূতাবাসসহ দায়িত্বশীল কারও গ্রহণ করার কোনো প্রমাণ নেই।