ইনসাইড পলিটিক্স

১৪ দলের পরিণতি কি হবে?


প্রকাশ: 15/02/2024


Thumbnail

গতকাল সংরক্ষিত ৪৮ টি আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এদের অধিকাংশই স্থানীয় রাজনীতির সাথে সরাসরি ভাবে জড়িত। তবে সবচেয়ে বড় চমকের ব্যাপার হলো এই তালিকায় আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। যদিও ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হবে এমন একটি গুঞ্জন ছিলো। উল্লেখ্য যে, ফেনীর একটি আসন থেকে সরাসরি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন শিরীন আখতার। তবে শেষ পর্যন্ত সেখানে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তবে সংরক্ষিত আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমন একটি আশ্বাস দেওয়া হয়েছিলো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো শেষ পর্যন্ত শিরীন আখতারকে সংরক্ষিত আসনেও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

শিরীন আখতারের মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে এখন পর্যন্ত দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের একটি মহল বলছে যে, সংরক্ষিত আসনে এমপি না হতে শিরীন আখতার নিজেই অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৪ দলের শরিক দলগুলো পরাজয় বিশেষ করে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পরাজয় এবং সার্বিক প্রেক্ষাপটে শিরীন আখতার নিজেই সংরক্ষিত আসনে এমপি না হওয়ার জন্য বলেছেন। অন্য আরেকটি মহল বলছে যে, আওয়ামী লীগই এখন ১৪ দলকে আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না। এ কারণেই শিরীন আখতারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তবে শিরীন আখতারকে বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক ভাঙন শুরু হলো কিনা এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলাপ আলোচনা চলছে। কারণ নির্বাচনের পর থেকেই ১৪ দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত ১৪ দলের কোন আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি। ১৪ দল থাকবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের শোচনীয় পরাজয়ের পর অনেকেই এখন নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। রাজনীতির মাঠেও তাদের কোন তৎপরতা নেই। অনেকেই আওয়ামী লীগের ওপর একরাশ অভিমান নিয়ে বসে আছেন। এরকম পরিস্থিতিতে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে। আর সেটি হলো ১৪ দলের পরিণতি কি হবে? ১৪ দলের সদস্যরা কি মন্ত্রিসভায় আসবেন? সংসদে ১৪ দলের ভূমিকা কি হবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন সামনে এসেছে। 

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, ১৪ দলের ঐতিহাসিক প্রয়োজন আওয়ামী লীগের কাছে ফুরিয়ে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৪ দল গঠন করেছিল। ১৪ দল গঠনের পেছনে প্রধান কারণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা। আর এটি করার জন্য ১৪ দলের যারা বাম প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, তাদেরকে নিয়েই এই আদর্শিক জোট গঠিত হয়েছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিএনপি এবং উগ্র মৌলবাদী কিছু গোষ্ঠী ছাড়া কেউই এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে নয়, বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে না। এমনকি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতা গর্ভে গড়ে ওঠা জাতীয় পার্টিও জাতির পিতাকে স্বীকার করে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা প্রকাশ্যে বলে। আওয়ামী লীগ এ রকম একটি রাজনৈতিক আবহ ছিল, যেখানে সবাই বঙ্গবন্ধুর কথাটা স্বীকার করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলবে। যে যে মতের রাজনৈতিক দলই করুক না কেন সকলের মূল আদর্শের জায়গাটা অভিন্ন থাকবে। আর সে রকম একটি পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে এবারের জাতীয় সংসদে যে রাজনৈতিক দলগুলো অবস্থান করছেন সবগুলো রাজনৈতিক দলই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এবং একাত্তর এবং পঁচাত্তরের পরাজিত শক্তিকে প্রত্যাখান করে। এই বাস্তবতায় বাস্তবতায় ১৪ দলের ঐতিহাসিক প্রয়োজন আছে কি না সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ ব্যাপার।

আওয়ামী লীগও মনে করে, যে প্রয়োজনে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ১৪ দলের ঐতিহাসিক প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হল ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতা। ১৪ দল দীর্ঘ ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও তাদের সংগঠনগুলোকে গোছাতে পারেনি। রাজনৈতিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং প্রায় দেউলিয়া হয়ে থাকা এই জোটের দলগুলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এখন আর পালন করতে পারে না। কাজেই গুরুত্বহীন এই সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আওয়ামী লীগ কতটুকু লাভবান হবে, সেটি একটি বিবেচনার বিষয়। এই কারণেই আওয়ামী লীগ ১৪ দলের ব্যাপারে আগের মতো এখন আর আগ্রহী নয়। 

১৪ দলের ঐতিহাসিক প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হল যে, শরিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ বিরোধী মনোভাব। সরকারের নীতি নির্ধারণে বা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে তারা কথা বললেও মাঠে ১৪ দলের অধিকাংশ শরিক দলগুলো রাজনীতি করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের নানারকম মতবিরোধের কথা প্রায় প্রকাশ্য হয়। এরকম একটি বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ তার নিজের সংগঠনের স্বার্থে ১৪ দলের সঙ্গে একটি দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ এখন মনে করে না যে, ১৪ দল আগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বা এরকম একটি জোটের অর্থবহ তাৎপর্য রয়েছে। আর এ কারণেই আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও ১৪ দল যে আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে যাবে সেটি বিশ্বাস করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭