প্রকাশ: 04/03/2024
ইসলামী
বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) তে একাধিক পুরোনো
গাছ কেটে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরির পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
এ লক্ষ্যে রবিবার (০৩ মার্চ) থেকে
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বৃক্ষ কাটা শুরু হয়।
মঞ্চটি ঠিক দুই একাডেমিক
ভবনের মাঝে হওয়ায় বিভিন্ন
অনুষ্ঠান হলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা ব্যাহত হতে পারে।
এছাড়া
বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনের অন্যত্র ফাঁকা জায়গা থাকা সত্ত্বেও বৃক্ষ
কেটে এমন স্থানে মঞ্চ
নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা
গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবনের
মাঝে ‘বৈশাখী মঞ্চ’ তৈরির পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে
ওই মঞ্চ তৈরির কাজ
শুরু হয়েছে। ফলে তিনটি পুরোনো
গাছ কাটা হচ্ছে। দুই
যুগ আগে নিজস্ব অর্থায়নে
সেই গাছগুলোসহ প্রায় ১১০০ গাছ লাগিয়েছিলেন
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান।
তিনিও বিষয়টি তাঁর জন্য বিব্রতকর
বলে জানিয়েছেন।
এদিকে
গাছ কাটার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, দুই একাডেমিক ভবনের
মাঝে মঞ্চ হলে বিভিন্ন
অনুষ্ঠানের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা চরমভাবে ব্যাহত হবে। কর্তৃপক্ষ চাইলে
ভিন্ন কোনো জায়গায় এই
মঞ্চ করতে পারতো।
এছাড়া
মঞ্চ তৈরির জন্য পুরোনো গাছগুলো
কাটার কোনো মানে হয়
না। প্রশাসন এর আগেও উন্নয়নের
নামে অনেক গাছ কর্তন
করেছে। গাছ কাটলেও পরবর্তীতে
আর নতুন করে পর্যাপ্ত
গাছ লাগানো হয় না।
এদিকে
গাছ না কাটার অনুরোধ
জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, প্রকৌশল অফিস ও প্রক্টরের
কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন ক্যাম্পাসের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অভয়ারণ্য’র সদস্যরা। সংগঠনটির
সভাপতি ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, ‘প্রশাসনের
এমন সিদ্ধান্ত আমাদের মর্মাহত করেছে। আমরা এ বিষয়ের
তীব্র নিন্দা জানাই।’
পরিবেশবাদী
সংগঠন ‘গ্রীণ ভয়েস’-এর সাধারণ সম্পাদক
ইমতিয়াজ আহমেদ ইমন বলেন, ‘আমরা
প্রক্টর অফিসে কথা বলেছি। আমাদের
বলেছে মৃতপ্রায় গাছ কাটা হচ্ছে।
কিন্তু আমরা গিয়ে দেখলাম
সবগুলো গাছ জীবিত। গাছ
কেটে মঞ্চ তৈরি করা
কোনোভাবে সুখকর নয়। অনেকস্থানে ফাঁকা
জায়গা আছে সেখানেও মঞ্চ
তৈরি করা যায়।’
ইবি
শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মামুন
অর রশীদ বলেন, ‘একটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো লেখাপড়ার সঠিক
মান নির্ধারণের মাধ্যমে ও গবেষণার মাধ্যমে
শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত
করা। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার চেয়ে নাটক বেশি
হয়। এজন্য হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
এতো এতো মঞ্চ তৈরি
করছে। আমরা বৃক্ষ নিধন
করে নাটকের এমন মঞ্চ চাই
না। আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
শাখা ছাত্রলীগ বৃক্ষ নিধনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
অর্থনীতি
বিভাগের অধ্যাপক ড. মুঈদ রহমান
বলেন, ‘২৪ বছর আগে
নিজস্ব অর্থায়নে এই গাছগুলো লাগিয়েছিলাম।
বিষয়টি শুনে আমার খুব
কষ্ট লেগেছে। ব্যাপারটা আমার জন্য বিব্রতকরও।
গাছ না কেটে ভিন্ন
কোনো ফাঁকা স্থানে মঞ্চ করতে পারতো।’
ধর্মতত্ব
অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.
সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আমি নিরুৎসাহিত করছি
না। তবে ক্লাস-পরীক্ষার
সময়ে এসব জায়গায় অনুষ্ঠান
করা উচিত না। এছাড়া
একাডেমিক ভবনগুলোকে ঘিরে না করে
অন্য স্থানে করা উচিত।’
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌলশী (ভারপ্রাপ্ত) কে এম শরীফ
উদ্দীন বলেন, ‘ওই জায়গায় মঞ্চ
করলে গাঠ কাটা ছাড়া
উপায় ছিল না। গাছগুলো
মরা। যেকোনো সময় ডাল ভেঙ্গে
পড়তে পারতো। এছাড়া গাছ জীবিত থাকলেও
মঞ্চ করলে শিকড়ের কারণে
ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন
ভূঁইয়া বলেন, ‘ডিন, শিক্ষক সমিতির
সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেই
গাছ কাটা হয়েছে। কোনো
কাজের প্রয়োজন হলে গাছ কাটাই
লাগে।’
তিনি
আরও জানান, প্রয়োজনে পরবর্তীতে সারি সারি গাছ
লাগিয়ে দেওয়া হবে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭